নিষেধাজ্ঞা শেষে খুলল সুন্দরবনের দুয়ার, পর্যটকদের বড় শঙ্কা বনদস্যু

৪ সপ্তাহ আগে
দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকার পর উন্মুক্ত হলো বিশ্বের ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অন্যতম দর্শনীয় স্থান এই সুন্দরবন। প্রতিবছর লাখো পর্যটক এর অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে ভিড় করেন।

মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) খুলে দেয়া হয়েছে সুন্দরবন।


তবে এ বছর পর্যটকদের জন্য বড় শঙ্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে বনজুড়ে বনদস্যুদের অবাধ বিচরণ, রাজনৈতিক অস্থিরতা আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যদিও প্রশাসনের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বলয় থাকায় এবং সব কিছু অনুকূলে থাকলে এবার রাজস্ব দ্বিগুণ হবে বলে আশা করছে বন বিভাগ। পাশাপাশি সুন্দরবন রক্ষায় পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে তারা।


পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, বানর ও সজারুসহ অসংখ্য বন্যপ্রাণী। রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও নানা স্থল-জলজ প্রাণির আবাসস্থল। প্রকৃতির হাতে গড়া এই বনের অপরূপ সৌন্দর্য মুগ্ধ করে যে কাউকে। বন্যপ্রাণীর প্রজনন ও মাছের ডিম থেকে বংশবিস্তার নির্বিঘ্ন রাখতে তিন মাস বন্ধ থাকার পর সুন্দরবন এখন যেন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।


পূর্ব সুন্দরবনের করমজল, হারবাড়িয়া, আন্দার মালিক, দুবলা, কটকা, কচিখালী, আলোর কোল ও নীলকমলসহ ১০-১১টি পর্যটনকেন্দ্র নতুন সাজে সাজিয়ে রেখেছে বন বিভাগ। গত ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মাছের বংশবিস্তার ও বন্যপ্রাণীর প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনে সব ধরনের নৌযান, জেলে ও পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।


এ সময় প্রায় ১২ হাজার জেলে এবং সাত হাজারেরও বেশি পর্যটন ব্যবসায়ী বেকার থেকে মানবেতর জীবন যাপন করেন।


আরও পড়ুন: তিন মাস পর উন্মুক্ত সুন্দরবন, উচ্ছ্বাসে পর্যটক আর জেলেরা


সরকারিভাবে ১ সেপ্টেম্বর সুন্দরবন উন্মুক্ত হওয়ায় জেলে, ব্যবসায়ী ও পর্যটক সবার মুখে এখন হাসি। তবে বনদস্যুদের উৎপাত, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে এখনও শঙ্কা রয়েই গেছে।


জয়মনি এলাকার জেলে আজগর, রহিম ও আবুল হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘ তিন মাস বেকার ছিলাম। সরকারি কার্ড থাকলেও কোনো সহায়তা পাইনি। মহাজন ও এলাকার মানুষের কাছ থেকে ধারদেনা করে চলতে হয়েছে। এখন আবার বনে যেতে পারব। যদি ভালো মাছ পাই তবে পরিবার নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারব।’


ট্যুর ব্যবসায়ী এমাদুল হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘ তিন মাস কর্মচারীদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে আলো দেখতে পাচ্ছি। সবকিছু অনুকূলে থাকলে আগের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারব।’


ট্যুরিস্ট পুলিশ ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আনন্দ, বিনোদন ও নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে সুন্দরবনে পলিথিন ও প্লাস্টিক ব্যবহার একেবারেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ নিয়ম অমান্য করলে সংশ্লিষ্টদের সুন্দরবনে প্রবেশই বন্ধ করে দেয়া হবে।’


বন বিভাগের তথ্যমতে, প্রতি বছর গড়ে দেড় থেকে দুই লাখ পর্যটক সুন্দরবনে ভ্রমণ করেন। বর্তমানে ছয়টি বনদস্যু বাহিনী সক্রিয়ভাবে সুন্দরবনে বিচরণ করছে। ফলে সুন্দরবন উন্মুক্ত হলেও বনদস্যুদের তৎপরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে জেলে ও পর্যটকসহ সংশ্লিষ্টরা এখনও শঙ্কায় রয়েছেন।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন