বিদ্যমান পদ্ধতিতে বাংলাদেশে এককক্ষবিশিষ্ট সংসদে ৩০০ জনপ্রতিনিধি সরাসরি নির্বাচিত হয়ে থাকেন, আসনভিত্তিক ফলাফলে। অর্থাৎ যে প্রার্থী তুলনামূলক বেশি ভোট পান, তিনিই প্রতিনিধিত্ব করেন নির্বাচনী এলাকার। এর বিপরীতে বর্তমানে রাজনৈতিক মহলে জোরালো আলোচনায় সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন ইস্যু। এ পদ্ধতিতে সারা দেশে পাওয়া ভোটের অনুপাতে নির্ধারণ হয়ে থাকে দলগুলোর আসন।
ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, বিদ্যমান এককক্ষের পরিবর্তে সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। নিম্নকক্ষে প্রচলিত পদ্ধতি আর উচ্চকক্ষের প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হবেন সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে। এ প্রস্তাবে একমত হয়েছে সংলাপে অংশ নেয়া অনেক দল। আবার জামায়াতসহ কোনো কোনো দল উভয়কক্ষেই চায় আনুপাতিক নির্বাচন।
জামায়াত-এনসিপি মনে করে, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন প্রতিটি ভোটের মূল্য নিশ্চিত করবে। ভোটে কালো টাকার ছড়াছড়ি, পেশিশক্তি, কেন্দ্র দখলসহ নির্বাচনী অনিয়ম ঠেকাতে ভূমিকা রাখবে।
তবে কোনো কক্ষেই বিদ্যমান পদ্ধতির বাইরে যেতে নারাজ বিএনপিসহ কয়েকটি দল। এ নিয়ে দলগুলো যদি এক জায়গায় না আসে, তাহলে ফয়সালা কীভাবে হবে তা নিয়েও আছে বিতর্ক। বিএনপি বিষয়টি পরবর্তী সংসদের জন্য রাখতে চাইলেও ভিন্নমত অন্যদের।
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষমতার যথেষ্ট অপব্যবহার হয়েছে: সালাহউদ্দিন
জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘দেশে অনেকগুলো দল রয়েছে, যাদের নির্দিষ্ট কোনো ধারাবাহিকতা নেই। কিন্তু সারা দেশে তাদের কাছে ভোট আছে। সুতারাং সবগুলো সমর্থনকে একসঙ্গে করলে যদি এক শতাংশ পায়, তারা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন নিয়ে যদি দেখা যায় মৌলিক বিষয়ে দলগুলো একমত হতে পারছি না, তখন আমাদের পরামর্শ গণভোটে যাওয়া।’
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, ‘যদি প্রথমবার আমরা অন্তত একটা কক্ষে সংখ্যানুপাতিক করি। তাহলে নিম্নকক্ষে কেউ যদি দখলদারিত্বের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়, তখন ব্যালেন্স হবে উচ্চকক্ষ। আমরাতো অবশ্যই বলেছি গণপরিষদ নির্বাচন। অধিকাংশ দল যদি গণভোট চায় আমরাও তাতে রাজি। কিন্তু কোনোভাবে এটা পরবর্তী সংসদের জন্য ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না।’
আরও পড়ুন: বিচার ব্যবস্থাকে দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে: ডা. তাহের
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘কেউ যদি জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি নিয়ে যায়, জনগণ যদি তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে তাহলে সংসদে প্রতিনিধিত্ব সে করবে। প্রচলিত নির্বাচনে ভয় কেন। জনগণ মাস্টার, তারাই ঠিক করবে।’
তবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিসহ মৌলিক কিছু বিষয়ে সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোকে বারবারই ছাড় দেয়ার কথা বলছে ঐকমত্য কমিশন।
]]>