এর প্রতিবাদ করার পর তার বাড়িতে ভাঙচুর ও মালামাল চুরির ঘটনা ঘটে। বর্তমানে পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ওই ব্যবসায়ী।
তার অভিযোগ, দোকানপাট দখলে নিতে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা, বিস্ফোরক আইন ও কোপাকুপির অসংখ্য মামলায় আসামি করে তাকে নিঃশেষ করে গ্রামছাড়া করার পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে।
জানা গেছে, বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের বাজিতপুর গ্রামের আমীন বিশ্বাস (৪৭) দীর্ঘ ২৩ বছর সৌদি আরবে কর্মরত ছিলেন। ৬ বছর আগে তিনি দেশে ফিরে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। তার আগে চিতারবাজারে দেড় শতক জমি কিনে দুইটি দোকানঘর তোলেন। তবে ওই জমি নিয়ে তার সঙ্গে জমির অপর এক শরিক পক্ষের ঝামেলা চলছিল।
আমিন বিশ্বাস জানান, চার মাস আগে উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক ও দাদপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি সলিমুল হক তার দোকানের ভাড়াটিয়াদের হুমকি ধামকি দিয়ে তার পরিবর্তে দোকান ভাড়ার টাকা তাদের কাছে দিতে বলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রেজাউল ও সলিমুল সম্পর্কে আপন দুই ভাই। আমিন বিশ্বাসের ক্রয়কৃত ওই দোকানের জমির সম্পত্তিতে তাদের ওয়ারিশ সূত্রে মালিকানা রয়েছে বলে তাদের দাবি। এ অবস্থায় বিষয়টির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ওই দোকানের ভাড়ার টাকা কোনো পক্ষকে না দিয়ে চিতারবাজার বণিক সমিতির নেতাদের কাছে জমা দিতেন ভাড়াটিয়ারা।
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে ভ্যানচালক হত্যা: কৃষকদল নেতাসহ আসামি ৪০
এদিকে, এ ব্যাপারে আমিন বিশ্বাস বোয়ালমারী থানায় একটি অভিযোগ দেন। গত ১৭ মে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহামুদুল হাসানের হস্তক্ষেপে দোকান ভাড়ার টাকা ও চাবি আমিন বিশ্বাসকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তবে এর কয়েক ঘণ্টা পরে ফের ওই দোকানে আবারও তালা লাগিয়ে দেন প্রতিপক্ষ। ওই রাতে আমিন বিশ্বাসের বাড়ির পানির মোটর ও সিসি ক্যামেরা চুরি হয়ে যায়।
আমিন বিশ্বাস জানান, ওই দোকানের জমি কেনার অপরাধেই এসব করা হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় দায়েরকৃত চারটি হত্যা মামলা ও ৬টি বিস্ফোরক মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এর আগে বিদেশ থেকে দেশে ফেরার পর ২০১৯ সালে তাকে কুপিয়ে পায়ের রগ কেটে দেয়। ওই জখমের যন্ত্রণা তিনি এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন। এরই মধ্যে গত ১০ মাসে অসংখ্য মামলার আসামি হয়ে তিনি এখন দিশেহারা। বর্তমানে ভয়ংকর সব অপরাধে ১৬টি মামলার আসামি তিনি।
আমিন বিশ্বাস বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে বাড়িতে পুলিশ আসে তদন্তে। তাদের মাধ্যমে জেনেছি শাহবাগ, যাত্রাবাড়ি ও বাড্ডা থানাসহ বিভিন্ন থানায় আমার নামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ৪টি হত্যা মামলা ও ৬টি বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে। এসব মামলার বাদিদের আমি চিনিও না। আমি কোনোদিন সংগঠন করি নাই। অথচ আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর বলে ওরা ভয়ভীতি দেখাইতেছে। গত ১০ মাস আমি বাড়িতে ঘুমাইতে পারি না। আমার কতো টাকা যে চলে গেছে তা আমিই জানি। এরা আমাকে শ্যাষ কইর্যা ফ্যালাইছে। আমার একটাই অপরাধ-আমি কেনো এই জমি কিনলাম? দুই পায়ের কোপের চিহ্ন দেখিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে আমিন বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন একথা।
আরও পড়ুন: রাজশাহীর বিএনপির ২ নেতাকে আজীবন বহিষ্কার
আমিন বিশ্বাসের স্ত্রী রিক্তা বেগম বলেন, ‘আমার একটি ছোট মেয়ে রয়েছে। তার সামনেই আমাদের গালিগালাজ করে ভয়ভীতি দেখায়। নিজেদের দোকান থাকতেও আমার স্বামী অন্যের দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন।’
এসব বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক বলেন, ‘আমিন বিশ্বাস ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক। বিয়ে করেছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। আওয়ামী লীগের আমলে প্রভাব খাটিয়ে আমাদের শরিকানা জমি দখল করে দোকানঘর পাকা করেছে। অনেক পাওয়ার খাটাইছে। আমরা জমি নিয়ে বাটোয়ারা মামলা করেছি। ওই দোকান আমাদের। এজন্য ভাড়াটিয়াকে বলেছি, ভাড়ার টাকা আমাদের কাছে দিতে।’
সাম্প্রতিক সময়ে আমিন বিশ্বাসের নামে বিভিন্ন মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এসব বিষয়ে জানেন না এবং এসব মিথ্যা কথা বলে দাবি করেন।
দাদপুর ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি সলিমুল হক বলেন, ‘আমিন বিশ্বাসের ওপর হামলার বিষয়ে আমরা কিছু জানতাম না। আমাদেরকে ওই মামলায় মিথ্যাভাবে আসামি করা হয়েছে।’
এদিকে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী নিরীহ প্রকৃতির লোক এবং কখনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও ওই বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শাকিল মোল্যা বলেন, ‘আমিন বিশ্বাস আওয়ামী লীগের কোনো পদ-পদবিতে ছিলেন না এবং কখনও শালিস দরবার বা কোনো দলের সভা-সমাবেশেও দেখিনি। উনি মূলত নিরীহ ও সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ।’
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তারা আমিন বিশ্বাসের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়েছেন।
চিতারবাজারের এক জুতা ব্যবসায়ী জানান, ওই জমিটা অনেক শরিকদারের। এর মধ্যে রেজাউলদের টাকাপয়সা বেশি। এখন ওই জমি আমিন বিশ্বাস কিনল কেনো এটাই মূল কারণ।
আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘ওই জমির সামনের অংশের দাম বেশি। যেখানে আমিন বিশ্বাস জমি কিনে দোকান ঘর তুলছে। এখন ওই জমির জন্য এতসব হচ্ছে।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিরোধীয় ওই দোকানের পাশের মালিকানা জমির সাথে হালটের জমির অংশ জুড়ে আরো চার পাঁচটি দোকান ঘর তোলা হয়েছে মেইন রাস্তার পাশে দিয়ে। ওই দোকানগুলোর ভাড়াও রেজাউল হক তুলেছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
চিতারবাজার বণিক বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি জামালউদ্দিন বলেন, ‘ওই জমি নিয়ে অনেক আগে থেকেই কিছু ঝামেলা চলছিল। তবে এবার এই সমস্যা দু’একদিনে সমাধান হবে না বিধায় সমাধান না হওয়া পর্যন্ত দোকানের ভাড়া বাজারের কমিটির কাছে জমা রাখতে বলি। পরে জমি যে পাবে তাকে ফিরিয়ে দেব। তবে এরমাঝে বোয়ালমারী থানার ওসি আমাকে ফোন করে জানান যে, বিষয়টি এখন থানার এখতিয়ারে। এরপর সেদিন দোকান ভাড়ার জমা দুই মাসের টাকা আমিন বিশ্বাসকে ফিরিয়ে দেই। এরপর আবার ঝামেলা হয়েছে। এখন বিএনপি নেতা সাবেক এমপি খন্দকার নাসিরুল ইসলাম ২৮ জুন বসে সমাধান করবেন বলে জানিয়েছেন।’
তাদের দলীয় পরিচয় নিশ্চিত করে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মিনহাজুল রহমান লিপন ও কৃষক দলের সভাপতি লুৎফর রহমান জানান, বিষয়টি নিয়ে অবগত নন এবং অভিযোগ পেলে সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় তদন্তানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন: গাইবান্ধায় সরকারি চাল জব্দের ঘটনায় বিএনপি নেতা বহিষ্কার
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহামুদুল হাসান বলেন, দোকান ঘরের বিষয়ে আমিন বিশ্বাসের অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে উভয়পক্ষ সম্মত না হওয়ায় বিষয়টি স্থানীয়ভাবে আলোচনা করে সুরাহা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
আর আমিন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বিভিন্ন মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্য কোনো থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে। ওই থানা থেকে আসা নির্দেশনা অনুযায়ী আমিন বিশ্বাসের নাম-ঠিকানার তথ্য জানার জন্য পুলিশ তার বাড়িতে গিয়েছিল।