জানা যায়, চলতি বছরের ৫ মার্চ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক পত্রে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট নাচোল উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটিতে এম মজিদুল হককে সভাপতি ও তারিকুল ইসলাম তারেককে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
এমন অবস্থায় চলতি মাসের ২৪ জুন আবারও জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম চাইনিজ ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত আরেক পত্রে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট নাচোল উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে সভাপতি হয়েছেন এম মজিদুল হক ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন আবু তাহের খোকন। একই ভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর ও নাচোল পৌর কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়।
নতুন কমিটির পত্রে উল্লেখ করা হয়, এসব কমিটি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামের মৌখিক নির্দেশনায় গঠন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: আওয়ামী দোসর আখ্যা দিয়ে সাবেক বিএনপি নেতাকে হেনস্তা, ভিডিও ভাইরাল
তিন মাসের ব্যবধানে দুটি কমিটি অনুমোদনের ঘোষণা নিয়ে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, গঠনতন্ত্র মেনে আগের কমিটি বিলুপ্ত না করেই ত্যাগী ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে এসব কমিটিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী-সমর্থকদের স্থান দিয়ে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনকি বর্তমান জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম চাইনিজ ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর মাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নতুন কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ কমিটিতে ৩-৪ জন ছাড়া বাকিদের আমি চিনি না। এতে তৃণমূলের নির্যাতিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের কোনঠাসার অপচেষ্টা করা হয়েছে। মূলত বির্তকিত এসব কমিটিতে আওয়ামী লীগের কর্মীদের কৌশলে পুনর্বাসন করা হচ্ছে বলে আমি মনে করি।’
মার্চে অনুমোদিত নাচোল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম তারেক বলেন, বির্তকিত কমিটিতে আওয়ামী লীগের সুবিধাবাদী নেতাকর্মী ও সমর্থক রয়েছে। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের পদধারীরা রয়েছে ২০-২৫ জন। এ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের খোকন বিভিন্ন সময়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমানের সাথে প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন। এমনকি সরাসরি তাকে আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিংয়ে দেখা গেছে।
এনিয়ে রোববার (২৯ জুন) নাচোলে এক সংবাদ সম্মেলনে নাচোল উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম মজিদুল হক বলেন, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ অবৈধ কমিটির বিষয়টি জেনেছি। প্রচারিত কমিটিতে প্রায় ৮০ ভাগ সদস্য ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থক হিসেবে নৌকার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনায় অংশগ্রহণ করে। এমনকি ২০২১ সালে নাচোল পৌরসভা নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের বিপক্ষে ও ২০২৩ সালে জাতীয় সংসদ উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনায় অংশগ্রহণ নিয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, তিন মাসের মধ্যে দুইটি কমিটি কিভাবে অনুমোদন ঘোষণা করা হয় তা আমার বোধগম্য নয়।
জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম টিপুর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কাজে ব্যস্ত আছি। পরে কথা হবে। এই বলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।
আরও পড়ুন: চাঁদাবাজি করে বিএনপির নাম দেয়া হচ্ছে, প্রতিহত করুন: মির্জা আব্বাস
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম চাইনিজ বলেন, মার্চে অনুমোদিত কমিটি দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক না হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামের কাছে বিষয়টি অবহিত করি। পরবর্তীতে তার মৌখিক নির্দেশে আগের কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়।
এছাড়া আর্থিক সুবিধা নিয়ে কমিটি দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন বিএনপির এই নেতা।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রচারণা চালানোর বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি স্বীকার করে বলেন, আমি পরিস্থিতির শিকার ছিলাম।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম জাকারিয়া বলেন, ‘এটি কে বা কারা করেছেন তা আমার জানা নেই। তবে এই নতুন কমিটির কোনো বৈধতা নেই।’
]]>