না ফেরার দেশে ইংল্যান্ডে জন্মানো প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ক্রিকেটার

২ সপ্তাহ আগে
না ফেরার দেশে চলে গেলেন ইংল্যান্ডের সাবেক ফাস্ট বোলার ডেভিড 'সিড' লরেন্স। দীর্ঘ এক বছর মোটর নিউরন ডিজিজের (এমএনডি) সগে লড়াই করে ৬১ বছর বয়সে হেরে গেলেন কাউন্টি ক্রিকেটে গ্লসস্টারশায়ারের হয়ে খেলা এই ফাস্ট বোলার।

ইংল্যান্ডের হয়ে পাঁচটি টেস্ট খেলা লরেন্স কাউন্টি ক্রিকেটে গ্লসস্টারশায়ারের হয়ে ২৮০টি ম্যাচ খেলে ৬২৫ উইকেট শিকার করেছেন। ব্রিটেনে জন্ম নেয়া প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ক্রিকেটার হিসেবে ১৯৮৮ সালে ইংল্যান্ডের জার্সিতে অভিষেক হয় তার। ২০২২ সালে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে কাউন্টি ক্লাব গ্লসস্টারশায়ারের প্রেসিডেন্ট হন তিনি। চলতি মাসে রাজা চার্লসের জন্মদিনে সম্মানসূচক এমবিই (মেম্বার অব দ্য মোস্ট এক্সিলেন্ট অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার) উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। এর আগে বছরের শুরুতে তাকে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলশ ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) প্রথম সম্মানসূচক আজীবন ভাইস-প্রেসিডেন্টদের একজন হিসেবে মনোনীত করা হয়।


২০২৪ সালে লরেন্সের মোটর নিউরন ডিজিজ (এমএনডি) শনাক্ত হয়। এটি একটি ক্ষয়িষ্ণু রোগ, যা মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে এবং পেশির ক্ষয় ঘটায়। এই রোগের কোনও নিরাময় নেই, তবে লরেন্স এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা ও তহবিল বৃদ্ধির জন্য কাজ করছিলেন।


এই সময়ের মধ্যেও তিনি ক্লাবের একজন প্রেরণাদায়ক ব্যক্তিত্ব হিসেবে থেকে গিয়েছিলেন এবং গত গ্রীষ্মে তাদের ভাইটালিটি ব্লাস্ট জয়ে অংশ নিয়েছিলেন। লরেন্সের সম্মানে ‘পিঙ্ক ফর সিড' নামে একটি সন্ধ্যার আয়োজন করে গ্লসস্টারশায়ার ক্লাব, যেখানে তারা গোলাপি জার্সি পরে মোটর নিউরন ডিজিজ অ্যাসোসিয়েশনের (এমএনডিএ) জন্য তহবিল সংগ্রহ করে। এটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভাইটালিটি ব্লাস্টের ম্যাচের মাঝে, যেখানে গ্লসস্টারশায়ারের প্রতিপক্ষ ছিল হ্যাম্পশায়ার হকস। গত সপ্তাহে তার আত্মজীবনী ‘ইন সিড’স ভয়েস’ প্রকাশিত হয়েছে, যা তিনি লিখেছেন তার বন্ধু এবং মিররের সাবেক ক্রিকেট সংবাদদাতা ডিন উইলসনের সহায়তায়।


আরও পড়ুন: দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরির জুটি মুশফিক-শান্ত’র, বাংলাদেশের ইতিহাসে যা প্রথম


লরেন্সের পরিবারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মোটর নিউরন ডিজিজের (এমএনডি) বিরুদ্ধে সাহসী লড়াইয়ের পর ডেভ লরেন্স এমবিই'র মৃত্যুর সংবাদ অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি। ‘সিড’ ছিলেন মাঠে এবং মাঠের বাইরে এক অনুপ্রেরণাদায়ক ব্যক্তিত্ব, বিশেষ করে তার পরিবারের জন্য, যারা তার পাশে ছিলেন মৃত্যুর সময়।’


এই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘একজন গর্বিত গ্লসস্টারশায়ারবাসী হিসেবে, সিড জীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করেছেন সাহসিকতা ও পূর্ণ শক্তি দিয়ে, আর এমএনডি'র সঙ্গে তার শেষ লড়াইটিও তার ব্যতিক্রম ছিল না। তার মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অন্যদের উৎসাহিত করার এবং তাদের কথা ভাবার মানসিকতাই তার প্রকৃত রূপ তুলে ধরে। গ্লসস্টারশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন অসাধারণ গর্ব ও আবেগ নিয়ে, এবং প্রতিটি মুহূর্ত তিনি উপভোগ করেছেন।’


আরও পড়ুন: পরের ম্যাচেই শান্তকে নিয়ে আর সমালোচনা হবে না


১৯৮৮ থেকে ১৯৯২ সালের মধ্যে ইংল্যান্ডের জার্সিতে পাঁচটি টেস্ট খেলেন লরেন্স। একজন সত্যিকারের দ্রুতগতির বোলার ছিলেন তিনি। লর্ডসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক হয় তার। সব মিলিয়ে ১৮ উইকেট শিকার করেছেন লরেন্স। ১৯৯১ সালে ওভালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০৬ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন, যা তার সেরা বোলিং ফিগার।


১৯৯২ সালে ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বোলিংয়ের সময় তার হাঁটুর ক্যাপ চোটগ্রস্ত হয়। এরপর আর পুরোদমে ক্রিকেটে ফিরতে পারেননি। পরের পাঁচ বছরে কাউন্টির হয়ে মাত্র চারটি ম্যাচ খেলতে পেরেছেন। এরপর ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নাইটক্লাবের ব্যবসায় নামেন। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক বডিবিল্ডার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন