রোববার (২৫ মে) লাহোর কালান্দার্সের ফাইনাল ম্যাচ ছিল, পিএসএলের এই ফাইনাল নটিংহ্যামে বসেই দেখার কথা ছিল লাহোরের খেলোয়াড় সিকান্দার রাজার। তবে ফাইনাল ম্যাচ খেলার সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে চাননি জিম্বাবুয়ের এই তারকা অলরাউন্ডার।
তার হাতে খুব বেশি সময় ছিল না, কেননা ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ফাইনাল খেলতে মাঠে নামবে লাহোর। তার প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কোনো সুযোগ নেই। সপ্তাহ খানেক আগেও লাহোর কালান্দার্সের নকআউটে জায়গা নিশ্চিত করার ম্যাচে ইংল্যান্ড থেকে উড়ে এসেছিলেন রাজা।
হাতে সময় কম, তাই সাত-পাঁচ না ভেবে তৎক্ষণাৎ নটিংহ্যাম থেকে লাহোরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন রাজা। বন্ধুর গাড়িতে করে বার্মিংহ্যাম বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। তবে বিমানের বিজনেস ক্লাস সিট পাননি তিনি, বাধ্য হয়ে ইকোনোমি ক্লাস সিটে বসে তিনি দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।
৬ ঘণ্টা ভ্রমণ করে তিনি পৌঁছান দুবাইয়ের আবুধাবিতে। সেখান থেকে তিনি সরাসরি লাহোরের বিমান ধরেন। তিনি তখন বিমানবন্দর থেকে বের হচ্ছিলেন, তখন শাহিন আফ্রিদি টসের সময় ঘোষণা করেন যে, সিকান্দার রাজা একাদশে আছেন। শেষমেশ ম্যাচ শুরুর আগে মাঠে পৌঁছন সিকন্দর।
আরও পড়ুন: পিএসএল জিতে কত টাকা পেল রিশাদ-সাকিব ও মিরাজের দল?
এভাবে এত পথ পাড়ি দিয়ে শুধু মাঠে নামাই নয়, বরং লাহোরকে চ্যাম্পিয়ন হতে সাহায্য করেন সিকন্দর। প্রথমে ৪ ওভার বল করে ৪৩ রান খরচায় ১টি উইকেট নেন তিনি। পরে ২টি চার ও ২টি ছক্কার সাহায্যে ৭ বলে অপরাজিত ২২ রানের ইনিংস খেলে দলের জয় নিশ্চিত করেন রাজা। জিততে শেষ ৩ বলে ৮ রান দরকার ছিল লাহোরের। সিকন্দর রাজা একটি ছক্কা ও ১টি চার মেরে লাহোরের হাতে ট্রফি এনে দেন।
পরে অবশ্য রাজা বলেছেন, ‘আমি মানসিক এবং শারীরিকভাবে ক্লান্ত ছিলাম। আমি নিজেকে শুধু বলছিলাম, শুধু বলটা দেখ। আমি কিছুই ভাবছিলাম না, বলটা কোথায় যাচ্ছে এবং আমি কি করতে যাচ্ছি। আমি শুধু বলছিলাম, যেখানে বল করবে সেখানে সবচেয়ে ভালো শটটা নেবো।’
তিনি যোগ করেন, ‘আমি এখানে একটা কাজ করতে এসেছি, যদি আমরা ম্যাচটা হেরে যেতাম তারপর অন্তত আমি জানতাম যে আমি আমার ভাইদের সাথেই ছিলাম। আমি জানি, আমার দল সত্যিই আমাকে এখানে চেয়েছিল। গত ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা ধরে দলের মালিক এবং অধিনায়ক আমাকে এখানে আনার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। এটা বিবেচনা করলে সত্যিই অবিশ্বাস্য।’
আরও পড়ুন: কোয়েটাকে হারিয়ে তৃতীয় শিরোপা ঘরে তুললো রিশাদের লাহোর
সিকান্দার রাজা আরও বলেন, ‘গতকাল (শনিবার ২৪ মে) ২৫ ওভার বোলিং করেছি, ২০ ওভার ব্যাটিংও করেছি। রাতের খাবার খেয়েছি বার্মিংহামে, আর নাস্তা করেছি দুবাইয়ে। দুপুরের খাবারের জন্য আবুধাবিতে গাড়ি চালিয়েছি, বিমানে উঠে পাকিস্তানে রাতের খাবার খেয়েছি। আমার মনে হয় এটাই একজন পেশাদার ক্রিকেটারের জীবন। এবং আমি এই জীবন পেয়ে সত্যিই ধন্য।’
পিএসএল ফাইনালে বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ উইকেটটা তুলে নিয়েছেন সিকান্দার রাজা। রাইলি রুশোকে ফিরিয়ে লাহোরকে এনে দিয়েছিলেন স্বস্তি। তবে ঘণ্টা তিনেক পরেই এটা স্পষ্ট যে, লাহোর তাকে কেন এখানে ফিরিয়ে আনার জন্য এত চেষ্টা করেছে।
পিএসএল ফাইনালে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২০১ রান তোলে কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্স। হাসান নওয়াজ ৪৩ বলে করেন ৭৬ রান। লাহোরের অধিনায়ক শাহিন আফ্রিদি ৪ ওভারে ২৪ রান খরচায় নেন ৩ উইকেট। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১ বল বাকি থাকতেই ৬ উইকেটে জয় তুলে নেয় লাহোর কালান্দার্স।
]]>