ধুলোবালিযুক্ত আটা কুড়িয়ে নিচ্ছে ফিলিস্তিনিরা, ভিডিও ভাইরাল

৩ সপ্তাহ আগে
ধুলোবালির মধ্যে পড়ে আছে আটা। আর সেই আটাই কুড়িয়ে নিচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। এমনই একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তুর্কি সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডও প্রকাশ করেছে।

ইসরাইলের অবরোধ ও মারাত্মক ক্ষুধা নীতির কারণে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। রীতিমতো দুর্ভিক্ষ চলছে। লাখ লাখ মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে এক টুকরো রুটির জন্যও মরিয়া হয়ে উঠছে তারা।

 

গাজার কিছু এলাকায় ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত সংস্থা জিএইচএফ থেকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা অতি নগণ্য। তাছাড়া ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে খাদ্যের সন্ধানে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের উপর নির্বিচার গুলি চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। তাতে প্রতিদিনই মানুষ মরছে।

 

জাতিসংঘের তথ্য মতে, ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ইসরাইলি গুলিতে এখন পর্যন্ত ৮ শতাধিক ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। এমন নিশ্চিত মৃত্যুর আশঙ্কা সত্ত্বেও ত্রাণ সহায়তা কেন্দ্রের সামনে জড়ো হচ্ছে গাজাবাসী। এমনকি ধুলোবালির মধ্যে পড়ে থাকা আটাও কুড়াচ্ছে তারা।

 

টিআরটি ওয়ার্ল্ডের তথ্য মতে, ইসরাইলি অবরোধের কারণে গাজার ফিলিস্তিনিরা এক ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি। বেঁচে থাকার জন্য তারা বালিতে পড়ে থাকা দূষিত আটা সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছে এমন একটি ভিডিও গত শুক্রবার (১৮ জুলাই) তাদের হাতে আসে। 

 

আরও পড়ুন: অপুষ্টির রোগীতে ভরে গেছে গাজার হাসপাতালগুলো

 

এদিকে খাদ্য সংকটের কারণে অপুষ্টির শিকার রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গাজার হাসপাতালগুলো এমন রোগীতে ভরে গেছে। নতুন কোনো রোগী আসলেও তাদের চিকিৎসা দেয়া যাচ্ছে না। রোগীর চাপে চিকিৎসা ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে।

 

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অপুষ্টির শিকার এত মানুষ হাসপাতালে আসছে যা নজিরবিহীন। দিনের পর দিন পেটে দানাপানি না পড়ায় তারা চরম ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। নড়ার শক্তিও আর অবশিষ্ট নেই। কারও কারও স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেয়েছে।

 

গাজার আল শিফা হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনের শত শত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের অনেকেই এতটাই দুর্বল যে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারছেন না। তাদের নিবিড় চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু এসব রোগীর চিকিৎসা করার মতো ওষুধ ও পথ্য হাসপাতালে নেই।

 

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) সতর্ক বলেছে, গাজা উপত্যকায় খাবারের অভাবে ক্ষুধা ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ডব্লিউএফপির উপনির্বাহী পরিচালক কার্ল স্কাউ বলেন, ‘পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যা আমি আগে কখনও দেখিনি।’

 

স্কাউ জানান, গাজায় মানবিক সংকট এর আগে কখনও এত বেশি ছিল না। এমনকি জাতিসংঘের সহায়তা করার ক্ষমতাও কখনও এত সীমিত ছিল না বলেও জানান তিনি।

 

আরও পড়ুন: সিরিয়া ও ইসরাইল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত: মার্কিন রাষ্ট্রদূত

 

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গাজাবাসীর মধ্যে পুষ্টিহীনতা বেড়ে চলেছে। সেখানকার ৯০ হাজার শিশুর জরুরিভাবে পুষ্টিহীনতার চিকিৎসা প্রয়োজন। এছাড়া গাজার প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন দিনের পর দিন না খেয়ে থাকছে বলেও জানান তিনি।

 

এর মধ্যেই হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি বাহিনী। শনিবার (১৯ জুলাই) ৬৫২তম দিনের মতো গাজাজুড়ে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। এসব হামলায় অন্ত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গাজার দক্ষিণে রাফাহর কাছে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত জিএইচএফ ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ইসরাইলি বাহিনীর এলোপাতাড়ি গুলিতে অন্তত ৩২ জন নিহত হয়েছেন।

 

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার ৬৬৭ জনে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ৯৭৪ জন ফিলিস্তিনি।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন