ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ইস্যুতে শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে দেশটির ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের প্রস্তাব পাস হয়। যদি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি না হয়, তাহলে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ইরানের ওপর ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহাল হবে যা ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তির আওতায় প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
এর প্রতিক্রিয়ায় গত রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল ঘোষণা দেয়, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের পদক্ষেপের পর আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করা হয়েছে। তবে এই পদক্ষেপ যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন ইরানের রাজনীতিকদের একাংশ। দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা হাতিয়ার হিসেবে পরমাণু অস্ত্র চাইছেন।
আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, এরই মধ্যে কট্টরপন্থি সংসদ সদস্যরা পারমাণবিক বোমা তৈরির দাবি জানিয়েছেন। মাশহাদ শহরের এক এমপির নেতৃত্বে পার্লামেন্টের ৭০ জন সদস্য একটি চিঠিতে সই করেছেন। চিঠিতে যত দ্রুত সম্ভব পরমাণু অস্ত্র তৈরির দাবি জানানো হয়েছে।
ইরান দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তি দিয়ে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি বেসামরিক উদ্দেশ্যে এবং পারমাণবিক বোমা তৈরির কোনো ইচ্ছা তাদের নেই, যদিও তাদের চরম শত্রু ইসরাইলের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।
আরও পড়ুন: চাপ দিয়ে ইরানের অগ্রগতি থামানো যাবে না: পেজেশকিয়ান
সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের কাছে লেখা এই চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের প্রতিরক্ষা নীতি পরিবর্তন করা দরকার। এমপিরা চিঠিতে বলেছেন, সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির প্রায় দুই দশক আগে পারমাণবিক বোমা ব্যবহার নিষিদ্ধ করে জারি করা ফতোয়া প্রযুক্তিগতভাবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এগুলো তৈরি বা রাখা নিষিদ্ধ করেনি।
তারা সতর্ক করে বলেছেন, ইসরাইল ‘উন্মাদনার শেষপ্রান্তে পৌঁছেছে’, ‘কোনো আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতাকে সম্মান না করে আক্রমণ করছে এবং নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে’।
গত জুন মাসে ইরানের ওপর ইসরাইলের আকস্মিক আক্রমণ এবং এরপর ওয়াশিংটনের হস্তক্ষেপের পর ইরানের কট্টরপন্থি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে পরমাণু অস্ত্র তৈরির দাবি এবং এই ধরনের বক্তব্য উল্লেখযোগ্যভাবে তীব্র হয়ে উঠেছে।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ইউরোপীয় ও অন্যান্য শক্তিধর দেশের সঙ্গে আলোচনা করতে এই মুহূর্তে নিউইয়র্কে রয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ইরান তাদের মজুত উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়াম পুনরুদ্ধার ও হ্রাস করবে, এর বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দেয়া হবে।
আরও পড়ুন: ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত দিলো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ
তবে তিনি অভিযোগ করেন, পশ্চিমারা নানা অজুহাত দিচ্ছে, এমনকি বলছে- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নাকি ইরানের পুরো রাজনৈতিক কাঠামোকে প্রতিনিধিত্ব করে না। কিন্তু আরাঘচি জোর দিয়ে বলেছেন- তার পেছনে সরকারের পূর্ণ সমর্থন আছে, যার মধ্যে সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলও রয়েছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, যেকোনো ‘পুনর্বহাল’ করা নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলার প্রস্তুতি আছে তেহরানের। গত শনিবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে তিনি আরও বলেন, ‘স্ন্যাপব্যাক দিয়ে তারা পথ বন্ধ করতে চায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, মস্তিষ্ক ও চিন্তাধারা অন্য পথ খুলে দেয় বা নতুন পথ তৈরি করে। তারা আমাদের থামাতে পারবে না।’
]]>