এর ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন হাজারো শ্রমিক ও কর্মচারী। যন্ত্রপাতিতে মরিচা ধরেছে,নেই আগের ব্যস্ততা। যেটুকু আছে, তা হলো অবহেলা, চুরি আর শ্রমিকদের হতাশা।
১৯৮০ সালে প্রায় ১১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৫ হাজার ৫৬টি জার্মান টাকু স্থাপন করে দারোয়ানী টেক্সটাইল মিলসের যাত্রা শুরু হয়। উত্তরাঞ্চলের গর্ব ছিল এই প্রতিষ্ঠান। মানসম্মত সুতা উৎপাদন করে দেশ-বিদেশে বাজার তৈরি করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে ১৯৯৫ সালে ‘লোকসানের অজুহাতে’ বন্ধ হয়ে যায় মিলটি। বেকার হয়ে পড়েন এক হাজারের বেশি শ্রমিক ও কর্মকর্তা।
এক সময়ে শ্রমিক হিসেবে কাজ করা আব্দুল মতিন জানান, ৩০ বছর বয়সে চাকরি হারাইছি, এখন বয়স ৬০ ছুঁই ছুঁই। কোনোদিন কারও কাছে হাত পাতি নাই, কিন্তু এখন সন্তানদের উপর নির্ভর করতে হয়। মিলটা চালু থাকলে এই পরিণতি হতো না।
আরও পড়ুন: রংপুরে ৪ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে জরিমানা, কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ
শ্রমিক রেহানা বেগম বলেন, মিলের ভিতরে কত রকম মেশিন ছিল, এখন সেগুলা সব নষ্ট বা গায়েব। আমরা শুধু চাই—মিলটা আবার খুলুক। সরকার পাশে থাকলে সম্ভব।
একই সময়ে ২৫ হাজার ভারতীয় টাকু দিয়ে শুরু হয় দিনাজপুর টেক্সটাইল মিলস। এখানে তৈরি হতো ২০, ৩২, ৪০, ৬০ ও ৮০ কাউন্টের উন্নতমানের সুতা। একাধিকবার ‘সেরা বস্ত্রকল’ হিসেবে জাতীয় স্বীকৃতি পায় এই প্রতিষ্ঠানটি। তবে ২০০৮ সালে মিলের উৎপাদন একেবারে থেমে যায়। এরপর থেকে নিয়মিত চুরি হচ্ছে যন্ত্রাংশ, নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার সম্পদ।
শ্রমিক নেতারা বলছেন, যন্ত্রগুলো সচল থাকলে আজো চলত। কিন্তু দেখভালের অভাবে সবই এখন লোহা–প্লাস্টিকের স্তূপ। কেউ খোঁজ নেয় না। বলেন, ‘প্রতিদিন মানুষ আসত কাজ চাইতে, এখন মানুষ আসে জায়গাটা দখল করে ধান, চাল, ভূট্টা শুকাতে।’
প্রথমদিকে লাভজনক হলেও অনিয়ম, পুঁজি সংকট ও প্রশাসনিক জটিলতায় ২০১১ সালে বন্ধ হয়ে যায় কুড়িগ্রাম টেক্সটাইল মিল। পরবর্তীতে এটি বেসরকারি খাতে লিজ দেওয়া হয়, কিন্তু তাতেও মেলে না সুফল।
কুড়িগ্রাম টেক্সটাইল মিলস এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, মিলটি লিজ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এখানে একাধিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে কর্মসংস্থান তৈরি হবে একই সাথে স্থানীয় অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে।
আরও পড়ুন: নীলফামারীতে ১৮ কিলোমিটার সড়কের কাজ ফেলে রেখে লাপাত্তা ঠিকাদার
রংপুর সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সহকারী অধ্যাপক আরিফা তাজরিমিনের মতে, কেবল লোকসানের দোহাই দিয়ে এসব বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী। বরং দুর্নীতি, বাজার ব্যবস্থাপনা ব্যর্থতা, এবং আধুনিকায়নের অভাব এসবকেই দায়ী করেন তিনি। বলেন, একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান হঠাৎ লোকসানে গেলেই তা বন্ধ করে দিলে দেশের কর্মসংস্থান, দক্ষতা উন্নয়ন ও শিল্পায়ন প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব মিল আধুনিক করে চালু করাই সঠিক পথ।
বিশেষজ্ঞ, শ্রমিক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, রাষ্ট্রীয় সদিচ্ছা ও সুপরিকল্পিত উদ্যোগ নিলে মিলগুলো আবার চালু করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। এতে একদিকে যেমন আঞ্চলিক অর্থনীতিতে গতি ফিরবে, অন্যদিকে কমবে রাজধানীমুখী শ্রমিকের চাপও।