দেশের একমাত্র সমতল ভূমির চা উৎপাদনকারী জেলা পঞ্চগড়। এখানকার চা চাষিরা কয়েক যুগ ধরে সিন্ডিকেট, অব্যবস্থাপনা ও বাজার সংকটের কারণে নানা সমস্যার মুখে পড়লেও এবার কাঁচা পাতার দাম কিছুটা বাড়ায় আশার আলো দেখছেন তারা। গত মৌসুমে যেখানে প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতা বিক্রি হয়েছিল ১০ থেকে ১৫ টাকায়, সেখানে চলতি মৌসুমে বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ২৬ টাকায়। এতে স্বস্তি ফিরেছে চাষিদের মুখে।
তবে আশার মাঝেই ভর করেছে দুশ্চিন্তা। বাগানগুলোতে পচা রোগ ও পোকার আক্রমণে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। তারা জানান, দাম কিছুটা ভালো পাওয়া যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না সার ও কীটনাশক না পাওয়ায় উৎপাদন আগের মতো হচ্ছে না। এতে লাভ যেমন কমছে, তেমনি বাড়ছে খরচ। তাই এ বিষয়ে তদারকি ও নজরদারি বাড়ানো দরকার।
আরও পড়ুন: দিনাজপুরে চা চাষে সাফল্য, আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের
চা চাষি আমিনার রহমান সময় সংবাদকে বলেন, এবার চা পাতার দাম ভালো পাচ্ছি। আমরা চেষ্টা করছি ভালোমানের চাপাতা কারখানাগুলোকে দেয়ার। তবে নতুন সমস্যা হিসেবে বাগানগুলোতে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে।
আরিফ হোসেন ও সুমন নামে দুই চাষি বলেন, দাম ভালো পেলেও এখন আতঙ্ক পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি পোকা নিধন করার। তবে সার ও কীটনাশক সংকট রয়েছে। বাজারে সার ও কীটনাশক পাওয়া গেলেও বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
চাষিরা আরও বলেন, এতে করে খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি অগ্রিম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সবাই। একই সঙ্গে চায়ের বাজার ঠিক রাখতে কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
অন্যদিকে, করতোয়া চা কারখানার ব্যবস্থাপক মো. মঞ্জুর আলম সময় সংবাদকে বলেন, চাষিরা যদি ভালো মানের পাতা সরবরাহ করতে পারে, তাহলে দাম পাওয়া যাবে আরও ভালো। তবে রোগবালাই দমন না হলে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আরও পড়ুন: বৃষ্টিতে চা বাগানে প্রাণ ফিরলেও ঘাটতি উৎপাদনে
পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফ খান সময় সংবাদকে জানান, সার ও কীটনাশক বরাদ্দ রয়েছে পর্যাপ্ত। পাতা পচা রোগ দমনে চাষিদের সচেতন হতে হবে। ছত্রাকনাশকের সঠিক ব্যবহার করলে ক্ষতি অনেকটা কমানো সম্ভব।
চা বোর্ডের তথ্যমতে, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে চা বাগান রয়েছে ৭ হাজার ৬১৭টি। এর মধ্যে অনিবন্ধিত ৫ হাজার ৮৭৪টি। বর্তমানে জেলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে ২৯টি প্রক্রিয়াজাত কারখানা। চলতি বছর প্রায় ২ কোটি কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞ ও কৃষি অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, পঞ্চগড়ের সমতল ভূমিতে চা শিল্প ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। এতে স্থানীয় অর্থনীতি যেমন শক্তিশালী হচ্ছে, তেমনি কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে হাজারো মানুষের। তবে সঠিক তদারকি না থাকলে চাষিরা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
]]>