আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী সতর্ক করেছে, দক্ষিণ সুদানে প্রায় ২০ লক্ষ শিশু ও ১০ লক্ষ গর্ভবতী নারী বা স্তন্যদানকারী মা মারাত্মক অপুষ্টির শিকার। নিরাপদ পানীয় জল ও স্বাস্থ্যবিধির অভাব এবং রোগের বিস্তার এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশনের (আইএফএসপিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের এপ্রিল মাস শুরুর আগেই দক্ষিণ সুদানের ১ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ৮০ লক্ষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়বে।
ইউনিসেফ বলছে, দেশটি কয়েক দশক ধরে চলা যুদ্ধ ও আন্তঃসাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ঘুরপাক খাচ্ছে এবং ২০ লক্ষের বেশি শিশু ও ১০ লক্ষের বেশি গর্ভবতী নারী বা স্তন্যদানকারী মা’কে অপুষ্টির হাত থেকে বাঁচাতে বিশ্বকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসা উচিত।
দক্ষিণ সুদানে ইউনিসেফের প্রতিনিধি হামিদা লাসেকো বলেছেন, “জরুরি সহায়তা প্রয়োজন এমন শিশু, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীর সংখ্যা প্রত্যাশা-মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতির কারণেই শুধু এমনটা ঘটেনি, বরং অপুষ্টির স্থায়ী সমস্যা বহু গ্রামকে ধরাশায়ী করছে।”
প্রতিবেশী সুদানে দ্বন্দ্ব-সংঘাত থেকে পালিয়ে আসা ৮ লক্ষ শরণার্থী ও ফিরে আসা লোকেরা দক্ষিণ সুদানের খাদ্য নিরাপত্তাকে আরও চাপের মধ্যে ফেলছে এবং ইতোমধ্যে সীমিত হয়ে আসা সম্পদে টান পড়ছে।
জুবার ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বর এলাকায় নিয়ানতুর আদুর রিয়াক নিজের জীবনকে পুনরায় গড়ে তোলার জন্য বাড়ি ফিরে এসেছেন। তিনি পাঁচ সন্তানের মা এবং বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা।
তিনি বলেছেন, ২০১৩ সালে সংঘাতের সময় তারা যখন এই এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তখন তার শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছিল।
রিয়াকের আশা, তার অনাগত সন্তান একটা সুস্থ ভবিষ্যৎ পাবে। তার পোক্ত বাঁশ দিয়ে ঘেরা বাড়িতে রয়েছে ছোট্ট একটা বাগান। এটাই আশার আলো দেখাচ্ছে তাকে।
রিয়াক বলছেন, ‘রাইট টু গ্রো’ প্রকল্পের হাত ধরে তার সন্তানরা এখন আর অপুষ্টিতে ভুগছে না।
আনিয়েত আনায়াং ডেং আরেকজন মা। তার মতে, নিরাপত্তাহীনতা ও বন্যা বেঁচে থাকাকেই দৈনিক লড়াইয়ে পরিণত করেছে।
বরের কাউন্টি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জেকব আজাক অপুষ্টির প্রভাব প্রত্যক্ষভাবে দেখছেন।
আজাক বলছেন, জনগোষ্ঠীর মধ্যে খাদ্যের অভাব একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা যদি আজ একটি শিশুকে ভর্তি নিই ও তার চিকিৎসা করি তাহলে সে সুস্থ হয়ে উঠবে, কিন্তু যখন তারা বাড়িতে ফিরে যাবে, সেখানে কোনও খাবার নেই। তিনি আরও বলছেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে, কিন্তু ওষুধের অভাব; যেটুকু তারা পায় সেটুকু আসে ইউনিসেফের মতো অংশীদারদের কাছ থেকে। আজাক বলছেন, একটি শিশু যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন তার পরিবারের পক্ষে বেসরকারি ক্লিনিকের ব্যয় বহন করার মতো সামর্থ্য থাকে না।
‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ নামের সংস্থাটি অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্য প্রদান করতে বহু কেন্দ্র তৈরি করছে, তবে ইউনিসেফ বলছে, অপুষ্টি রুখতে ও এর মোকাবেলা করতে আরও উদ্যোগ প্রয়োজন।