তিন দিনে অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানে গাজীপুর জেলা ও মহানগরে মোট ২৬১ জনকে গ্রেপ্তার

১ মাস আগে
বাংলাদেশ জুড়ে চলমান অপারেশন ডেভিল হান্টের তৃতীয় দিনে গাজীপুর মহানগরী পুলিশের আট থানায় ৬৯ জন এবং গাজীপুর জেলার পাঁচ থানায় ১২ জনসহ মোট ৮১ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে জেলা পুলিশ ও গাজীপুর মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গ্রেপ্তার আসামিরা বেশিরভাগ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। এ নিয়ে তিন দিনে অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানে গাজীপুর জেলা ও মহানগরে মোট ২৬১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গাজীপুর মহানগর পুলিশের সিটি এসবির উপ কমিশনার আলমগীর হোসেন জানান, "নগরের ৮টি থানায় অপারেশন ডেভিল হান্টের তৃতীয় দিনে ৬৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে সদর থানায় ১৯ জন, টঙ্গী পূর্ব থানায় ৭ জন, টঙ্গী পশ্চিম থানায় ৮ জন, গাছা থানায় ৬, বাসন থানায় ৯, পুবাইল থানায় ২ জনসহ অন্যান্য থানায় মোট ৬৯ জনকে আটক করা হয়েছে।" জেলা পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক জানান, "অপারেশন ডেভিল হান্টের তৃতীয় দিনে সোমবার দিবাগত রাতে গাজীপুর জেলার পাঁচটি থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ১২জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইন আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।" দুষ্টের দমন না করে দুষ্টকে লালন-পালন করছে এই অবৈধ ইউনুস সরকারঃ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম (আওয়ামী লীগ)  'অপারেশন ডেভিল হান্টে' এ পর্যন্ত যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, দেখা যাচ্ছে তাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ বিষয়টা আওয়ামী লীগে কিভাবে দেখছে, জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, "গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাসায় আক্রমণ কারা করেছে দেশবাসী সবাই দেখেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বাসভবন স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে স্বাধীনতার স্বাধীনতার ঐতিহ্য হিসেবে চিহ্নিত ছিল। সে বাড়িতেও ঘোষণা দিয়ে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বুলডোজার নিয়ে মিছিল করে যারা আক্রমণ করেছে, তারা কারা? তিন দিন ধরে উৎসব করে বাড়িটি ভেঙেছে, গরু জবাই করে ভুরিভোজ করেছে। তিনদিন পরে "অনির্বাচিত অসংবিধানিক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা" বিবৃতি দিয়ে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে। এই একই সময়ে সারা দেশে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা, এমপি-মন্ত্রীসহ তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এগুলো একদিকে চলে অন্যদিকে 'অপারেশন ডেভিল হান্ট' এর নামে গত তিনদিন ধরে গণগ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় দুই হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। এটা আমাদের হিসাব৷ আজকে (বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার দিবাগত রাত) রাতে কত জনকে গ্রেফতার করা হবে সেটা জানি না।" তিনি আরও বলেন, "এ দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় তারা 'অপারেশন ডেভিল হান্ট' এর নামে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন এবং সংগঠন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নেতৃবৃন্দ এবং সমর্থকদের নির্মূল ও নিঃশেষ করতে চায়। আর একটা ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করতে চায়। এর মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য, জনগণের কথা ভেবে মশাল মিছিল ও হরতালসহ যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, সেটাকে বাধাগ্রস্ত করা সরকারের একমাত্র লক্ষ্য। তাদের লক্ষ্য- জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংস করা, আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা। ফলে যেসব সন্ত্রাসীরা বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে হামলা করেছে, বুলডোজার দিয়ে মিছিল করে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে , তাদের একজনকেও এখনো পর্যন্ত গ্রেপ্তার করেনি। গ্রেফতার করা হচ্ছে কাদের? যাদের নির্যাতন করা হচ্ছে, যাদের বাড়ি ঘর লুণ্ঠন করা হচ্ছে, আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে, এগুলো যারা রক্ষা করতে গেছে তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। তার মানে বিষয়টা হচ্ছে- দুষ্টের দমন না করে দুষ্টকে লালন-পালন করছে এই অবৈধ ইউনুস সরকার। এরা দেশে আইনের শাসনের চূড়ান্ত ধ্বংস করে ফেলেছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার পদদলিত করে ধ্বংস করে ফেলছে। এটা হলো 'অপারেশন ডেভিল হান্ট' এর নামে আওয়ামী লীগ নিধন।"  তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময়ে হামলাকারী আওয়ামী লীগের বড় নেতারা গ্রেপ্তার হচ্ছে না, গ্রেপ্তার হচ্ছে তৃণমূলের লোকজন। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঘোরতর অবনতি হয়েছেঃ মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বিএনপি)  বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঘোরতর অবনতি হয়েছে। তা কাটিয়ে উঠতে এবং বিশৃঙ্খলা রোধ করতে এই 'অপারেশন ডেভিল হান্ট' চালানো হচ্ছে বলে আমাদেরকে জানানো হয়েছে। এই অপারেশনে এখন পর্যন্ত যাদেরকে ধরা (গ্রেফতার) তারা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী।" তবে এই অপারেশনে যেন কোনও নিরাপদ মানুষ হয়রানির শিকার না হয় বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারকে সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান হাফিজ উদ্দিন। বাংলাদেশে এখন একটা অস্থির সময় পার করছে বলে মনে করেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা। তিনি বলেন, “আমাদের বর্তমান যে অন্তর্বর্তী সরকার আছেন, তারা জনগণের প্রতিনিধি নন। তারা এমনি ক্ষমতায় বসেছেন। তাদের কোনও ম্যান্ডেট নেই। তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার কোনও অভিজ্ঞতাও নেই। ড. ইউনূসের বিশ্বব্যাপী সুনাম আছে। সেই জন্য তাকে সব রাজনৈতিক দল মেনে নিয়েছে।” মব ভায়োলেন্স বিএনপি সমর্থন করে না বলে জানিয়ে হাফিজ উদ্দিন বলেন,“ কোনও নাগরিকের আইন হাতে তুলে নেওয়া উচিত না। সুতরাং কাউকে শাস্তি দিতে হলে বিচারের মাধ্যমে হোক।”   অপারেশন ডেভিল হান্ট কী? শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে গাজীপুরসহ সারাদেশে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে 'অপারেশন ডেভিল হান্ট'। 'সন্ত্রাসীদের' আইনের আওতায় আনতে এই অভিযান হবে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। শুক্রবার রাতে গাজীপুরে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলার ঘটনায় শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ও 'সন্ত্রাসীদের' আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে 'অপারেশন ডেভিল হান্ট' পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভাসূত্র জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ও 'সন্ত্রাসীদের' আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনা করা হবে। কী ঘটেছিল মোজাম্মেল হকের বাড়িতে? গাজীপুরে আওয়ামী লীগের সকল প্রকার চিহ্ন মুছে দিতে বিভিন্ন স্থাপনা ও নেতা কর্মীদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানোর সময়ে হামলার শিকার হয়েছে বিক্ষোভকারীরা। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১৪ জন। পরে তাদের চিকিৎকার জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে গাজীপুর শহরের দক্ষিণখান এলাকায় ক্ষমতাচ্যুত সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী, মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ভাঙচুর চালাতে গেলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিক্ষুদ্ধ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হয় এবং মারধর করে। হামলার ঘটনা নিশ্চিত করে গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান জানান, হামলার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পুলিশ। পরে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওসি আরও জানান, ওই ঘটনা সংশ্লিষ্ট আরও তথ্য সংগ্রহে কাজ করছে পুলিশ। গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শহরের রাজবাড়ী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। এতে যোগ দিয়েছেন সংগঠনটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম। এদিকে গাজীপুরে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে মারধরে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের খোঁজখবর নিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, "ছাত্রদের ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের প্রত্যেককে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।"
সম্পূর্ণ পড়ুন