তিন দশকের মধ্যে এই প্রথম বড় ধরণের ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে পাকিস্তান

১ সপ্তাহে আগে
পাকিস্তান বুধবার থেকে আয়োজন করছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল চ্যাম্পিয়নস ট্রফি প্রতিযোগিতা । গত তিন দশকে এই প্রথম বড় ধরণের ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় যোগ দিচ্ছে আটটি টিম। পাকিস্তান শেষবার ইন্টারন্যশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের অধীনে ১৯৯৬ সালে পুরুষদের বিশ্বকাপ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। তিন সপ্তাহব্যাপী এই চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড,ভারত, নিউজিল্যান্ড,পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়রা অংশ নিচ্ছেন। ফাইনাল খেলাটি অনুষ্ঠিত হবে ৯ মার্চ। ভারত ছাড়া বাকি দলগুলি পাকিস্তানের তিনটি স্টেডিয়ামে খেলবে। নিরাপত্তা জনিত উদ্বেগের কারণ দেখিয়ে ভারতের ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড  তাদের বৈরি দেশ পাকিস্তানে তাদের ক্রিকেট টিম পাঠাতে সম্মত না হওয়ায়, ভারত যে সব খেলায় অংশ নিচ্ছে সেগুলি অনুষ্ঠিত হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। এ দিকে আফগানিস্তানের ক্রিকেট টিমকে বর্জন করার আহ্বান জানিয়েছেন ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনীতিকরা । তারা চান না যে তাদের ক্রিকেট বোর্ড আফগানিস্তানের সঙ্গে খেলুক কারণ আফগানিস্তানের  তালিবান নারীদের চলাচল, শিক্ষা ও কর্মক্ষমতার উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তালিবান।   এই ক্রিকেট সিরিজের প্রথম দিনেই পাকিস্তানের বৃহত্তম শহর করাচিতে স্বাগতিক দেশ পাকিস্তান খেলবে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে।   দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আসলো এ সুযোগ ২০০৯ সালে লাহোরে শ্রী লংকার ক্রিকেট দলের উপর হামলায় ছয় জন খেলোয়াড় আহত হন। ওই ঘটনায় ছয় জন পাকিস্তানি পুলিশ  এবং দু জন পথচারি নিহত হন। এই ঘটনার কারণে পাকিস্তান ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি এবং ২০১১ সালের পুরুষদের বিশ্ব কাপ ক্রিকেট আয়োজন করা থেকে বঞ্চিত হয়। ২০১৫  সালে জিম্বাবওয়ের সফরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আবার পাকিস্তানে ফিরে আসে। ২০১৯ সাল থেকে বিভিন্ন বড় দল পাকিস্তানে খেলেছে। ক্রিকেট প্রেমী দেশটির জন্য এক দশকেরও বেশি  সময় পর দেশে এই একটি বিশাল অনুষ্ঠান দেখা যেন স্বপ্ন পুরণের  সমান। মহসিন আলী বলেন, “২০০৯ সালের পর এটি হচ্ছে সব চেয়ে বড় আয়োজন, সুতরাং আমরা খুব উত্তেজিত হয়ে আছি”। আলী ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন ২৭ ফেব্রুয়ারি রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের খেলার টিকেট তিনি ১০ ডলারের একটু বেশি অর্থ দিয়ে কিনেছেন। ঊবায়েদ হাসান বলেন, “পাকিস্তানি দল বিদেশে খেলবে আর আমরা তা টিভিতে দেখবো, সেটা তেমন মজার নয়”। আন্তর্জাতিক দলগুলি যখন পাকিস্তানকে পরিহার করে তখন হাসান খুব ছোট ছিলেন। এখন নিজের গ্রামের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হাসান বলেন তিনি দুটি ম্যাচের টিকেট পেয়েছেন।   এই আয়োজনের জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা পাকিস্তান,খেলার দিনগুলিতে করাচি, লাহোর এবং রাওয়ালপিন্ডিতে ২০,০০০ পুলিশ মোতায়েন করেছে এবং স্টেডিয়ামের চার পাশের ভবনগুলিতে স্নাইপার লাগানো  হয়েছে। পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অত্যন্ত দূর্বল, সেখানকার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া এবং দক্ষিণ -পশ্চিমাঞ্চলীয় বালুচিস্তান প্রদেশগুলিতে প্রায় প্রতিদিনই জঙ্গিদের প্রাণঘাতী হামলা হচ্ছে। তবে সে দেশর পূর্বাঞ্চলীয় পাঞ্জাব ও দক্ষিণাঞ্চলের সিন্ধু প্রদেশ দুটি, যেখানে এই ম্যাচগুলি খেলার  কথা, সেই স্থানগুলি প্রধানত শান্তই রয়েছে। তা সত্ত্বেও সিন্ধু প্রদেশের রাজধানী করাচিতে এই আয়োজন চলার সময়ে নিরাপত্তাজণিত জরুরি আহ্বানে সাড়া দিতে আধা-সামরিক বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।       খেলোয়াড়দের রাষ্ট্রীয় অতিথী পর্যায়ের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। তার অর্থ হচ্ছে যেখানে এই সব টিম রয়েছে সেই হোটেলগুলিতে পুলিশের কড়া পাহারা রয়েছে এবং তাদের চলার পথে সাধারণ যানচলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যেসব লোকের নিরাপত্তা বিষয়ক ক্লিয়ারেন্স থাকবে কেবল তারা খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। পাঞ্জাব পুলিশের অপারেশনস বিভাগের উপ-মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ ওয়াকাস ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “২০০৯ সালের হামলার পর, “খেলাধূলার নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানগুলির নিরাপত্তা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে”। ওয়াকাস বলেন, “এমনকী সামান্যতম প্রশাসনিক গাফিলতি, বড় ধরণের অস্বস্তিকর বিষয় হয়ে উঠতে পারে, আর আমরা যদি ভাল কাজ করি এবং দক্ষতার সঙ্গে সব কিছু আয়োজন করতে পারি তা হলে বহু কোটি মানুষের মনে  ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হবে। আর সে জন্যই এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তা উচ্চতম পর্যায়ে পরিকল্পনা এবং নজরদারি করা হচ্ছে”। স্টেডিয়ামে যে সব ভক্ত দর্শকরা আসবেন তাদেরকে নানান স্তরের নিরাপত্তা তল্লাশির মধ্য দিয়ে যেতে হবে যার মধ্যে রয়েছে মেটাল ডিটেক্টার ও দেহ তল্লাশি। প্রতিটি টিকেটে ক্রেতার নাম ও জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর থাকছে। রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি    যদিও এটা এখনো পরিস্কার নয় যে বিদেশী দর্শকদের জন্য কত ভিসা দেওয়া হয়েছে, পাকিস্তানে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আয়োজন দেশের ভাবমূর্তি বাড়াতে সহায়ক হবে । পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান তওকির জিয়া বলেন, “ আপনার দেশে যখন কোন পর্যটক আসেন না তখন লোকজন জানতেই পারবে না আপনার দেশটা কেমন, লোকজন মুসলমান এবং পাকিস্তানিদের নীচু চোখেই দেখবে। যদিও পাকিস্তানের  মাঠে ভারতের অনুপস্থিতি অনেক পাকিস্তানি ক্রিকেট প্রেমীদের জন্য হতাশাব্যঞ্জক কারণ তারা দেখতে চান ক্রিকেটের বড় প্রতিপক্ষ দেশের মাটিতেই খেলুক, অনেকেই বলছেন ক্রিকেটে অন্যান্য  শক্তিশালী দেশের যোগদান এক ধরণের আস্থা ভোট। ক্রিকেট সাংবাদিক উমর ফারুক বলেন, “ছয়টি দেশ এখানে খেলতে আসছে সেটাই পাকিস্তানের জন্য বড় বিজয়। ভারত যদি না আসে, তাতেতো আর ক্রিকেট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে না। খেলাতো হচ্ছেই”। ফাইনাল খেলাটি পাকিস্তানেই হবে যদি না ভারত ফাইনালে ওঠে, আর সে ক্ষেত্রে ফাইনাল খেলাটি হবে দুবাইয়ে।   করাচি, লাহোর ও রাওয়ালপিন্ডির স্টেডিয়ামের মান উন্নত করতে পাকিস্তান লক্ষ লক্ষ ডলার ব্যয় করেছে। পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেট খেলোয়াড় মুশতাক আহমেদ বলেন “তিনি আশা করছেন নামী-দামী খেলোয়াড় আসায় দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা হবে”।
সম্পূর্ণ পড়ুন