তিন দফা বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে হাওরের বোরোর দিকে তাকিয়ে কৃষকরা

১ সপ্তাহে আগে
তিন দফা বন্যার আঘাতে নেত্রকোনার কৃষকেরা তাদের রোপা-আমন ফসল হারালেও নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে বোরো আবাদে নেমেছেন। হাওরাঞ্চলের একমাত্র ফসল বোরো নিয়ে শঙ্কা থাকলেও দিনরাত এক করে মাঠে কাজ করছেন তারা।

এদিকে বোরো ফসল উৎপাদনে খরচ বেশি হলেও অনেকের কৃষি ছাড়া অন্য কোনো পেশা নেই। তবে ধানের দাম সারের দামের চেয়ে বেশি হলে অথবা সমান হলেও ক্ষতি পোষানোর আশাও করছেন অনেকে।

 

কৃষি বিভাগ বলছেন, হাওরে শঙ্কার কারণে স্বল্প জীবনকালীন ফসল উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে কৃষকদেরকে।

 

হাওর অধ্যুষিত নেত্রকোনা জেলার মদনের কাইটাইল গ্রামের ষাটোর্ধ্ব প্রান্তিক কৃষক স্বপন মিয়া। গণেশের হাওরে তুলছেন বীজতলা। ইতিমধ্যে ১০ কাঠা জমিতে চারা রোপণ করলেও তার বাকী রয়েছে আরও ৪০ কাঠা।

 

আরও পড়ুন: নেত্রকোনায় অধ্যাপক হত্যার বিচার দাবিতে রাস্তায় সহকর্মীরা

 

একই হাওরে বাবুল মিয়া নামের অপর কৃষক ২৫ কাঠা জমিতে চারা রোপণ করেছেন এবার। এমনি করে হাজারো প্রান্তিক কৃষক তাদের স্বপ্ন বুনে যাচ্ছেন। কিন্তু গত রোপা-আমন মওসুমে দফায় দফায় তিনবার বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফসল হানি হয়েছে অনেকের।

 

কৃষক স্বপন মিয়া জানান, এক বস্তা সারের দাম ১ হাজার ৪০০ টাকা। বাবুল মিয়া জানান, এদিকে কাঠা প্রতি জমিতে চারা রোপনে কৃষকদের খরচ হচ্ছে ৫০০ টাকা। তার ওপরে সেচের জন্য লাগছে আবার ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা।

 

হাওরের কৃষকেরা বলেন, এভাবে ধান চাষ করে দিনে দিনে খরচ বাড়লেও বাড়ে না ধানের দাম। তারপরও খেয়ে পড়ে বাঁচার লড়াইয়ে থাকেন কৃষকরা।

 

বন্যার ক্ষতির পরও নিজেদের পেশায় টিকে থাকার লড়াই করছেন কৃষকেরা। তাদের মতে, ধান চাষে খরচ বাড়লেও ধানের দাম বাড়ে না। তবে বৈশাখ মাসে ভালো দাম পেলে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আশায় আছেন তারা।  

 

কৃষি বিভাগের তথ্যানুসারে, গত রোপা-আমন মৌসুমে ১ লাখ ৩০ হাজার ৫০ হেক্টর জমি আবাদ হয়েছিল। তবে বন্যায় ২১ হাজার ৬২৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত ৭৫ হাজার কৃষকের মধ্যে ২৬ হাজার কৃষককে সরকারি প্রণোদনা দেয়া হয়।  

 

আরও পড়ুন: দরজায় তালা, খাটের নিচে মিলল কলেজশিক্ষকের রক্তাক্ত মরদেহ

 

এ বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৪৮০ হেক্টর। এর মধ্যে হাওরাঞ্চলের জন্য ৪১ হাজার ৭০ হেক্টর নির্ধারণ করা হয়।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, ‘আগাম বন্যার ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে কৃষকদের স্বল্প জীবনকালীন ধানের বীজ লাগাতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বড় ধরনের কোনো দুর্যোগ না হলে বোরো থেকে বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে।’  

 

গণেশের হাওরে চারা রোপণের কাজে ব্যস্ত স্বপন মিয়া, বাবুল মিয়া এবং আরও হাজারো কৃষক নিজেদের ফসলের ওপর নির্ভরশীল। তবে তারা শঙ্কিত, কারণ গত মৌসুমে উঁচু জমির ধানও তলিয়ে গিয়েছিল। হাওর তো এমনিতেই নিচু এলাকা, তাই ক্ষতির ভয় কাজ করছে সবার মাঝে।

 

২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী জেলার ১০ উপজেলায় ৪ লাখ ৮২ হাজার কৃষকের মধ্যে হাওরাঞ্চলে আছেন প্রায় ১ লাখ কৃষক। তাদের জন্য কৃষি বিভাগ স্বল্প জীবনকালীন ফসল চাষের পরামর্শ দিচ্ছে। এছাড়াও জেলায় বন্যায় রোপা আমনের ক্ষতি পোষাতে ২৬ হাজার কৃষককে কৃষি প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।

 

আরও পড়ুন: নেত্রকোনায় পুলিশ পরিদর্শক হত্যা মামলায় গ্রেফতার ২

 

নেত্রকোনার কৃষকেরা জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন বোরো ধানের ওপর নির্ভর করছেন। তাদের সংগ্রামের পাশাপাশি সরকারি প্রণোদনা এবং কৃষি বিভাগের সঠিক দিকনির্দেশনা মিলে যদি কোনো বড় দুর্যোগ না আসে, তবে এই মৌসুমে বাম্পার ফলনের আশা করছেন সবাই।  

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন