ভোটের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে এই তিন শীর্ষ পদে (মোট পদ ৫৪) স্বতন্ত্ররা বিজয়ী হয়েছেন ৫৩টিতে। শুধু জগন্নাথ হলের ভিপি পদে বিজয়ী হয়েছেন ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের প্রার্থী।
এবার হল সংসদ নির্বাচনে শুধু ছাত্রদল আনুষ্ঠানিক প্যানেল ঘোষণা করেছিল। বাকি ছাত্রসংগঠনগুলো কোনো আনুষ্ঠানিক প্যানেল ঘোষণা করেনি। তবে তারা অনেক স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছিল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। এর বাইরে জগন্নাথ হলে শহীদ জগৎজ্যোতি ব্রিগেড নামে প্যানেল দিয়েছিল ছাত্র ইউনিয়ন (মেঘমল্লার–মাঈন)।
প্রতিটি হল সংসদে ১৩টি করে পদে নির্বাচন হয়েছে। ১৮টি আবাসিক হলে ভিপি, জিএস, এজিএসসহ মোট পদ ২৩৪টি। এসব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এক হাজার ৩৫ জন প্রার্থী।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি কেন্দ্রে ডাকসু ও হল সংসদের ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ভোট গণনা শেষে মধ্যরাতের পর সব হল সংসদ নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়। আর ডাকসুর ফল ঘোষণা করা হয় বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে।
আবাসিক হলগুলোতে বিজয়ী প্রার্থীদের বেশিরভাগ স্বতন্ত্র হলেও তাদের প্রতি রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সমর্থন ছিল। এই সমর্থন তাদের জয়ী হওয়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছে বলেও মনে করেন অনেকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে আবাসিক হলগুলোতে গণরুম–গেস্টরুম সংস্কৃতির কারণে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ। যে কারণে হল সংসদে ভোটের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পছন্দ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: ডাকসুতে নতুন ইতিহাস, পরিবর্তন আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন বলছেন শিক্ষার্থীরা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ইফরান হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের গণরুম, গেস্টরুম ও অপরাজনীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সেজন্য শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতি বেশি আস্থা রেখেছে।
হল সংসদে শীর্ষ তিন পদে বিজয়ী যারা
রোকেয়া হলের ভিপি ফাতেমাতুল জান্নাত ইমা (৯৪১ ভোট), জিএস সিনথিয়া মেহরিন সকাল (১৯৬১) এবং এজিএস হয়েছেন আদিবা সায়মা খান (১৬৫৬)। কবি সুফিয়া কামাল হলের ভিপি সানজানা আক্তার চৌধুরী (১২২০), জিএস মোছা. রুকু খাতুন (১২৪৯) এবং এজিএস শিমু আক্তার (১৬৫৫)। শামসুন নাহার হলে ভিপি কুররাতুল আইন কানিজ (১০৪৬), জিএস সামিয়া মাসুদ মম (১৫৯০) এবং এজিএস নূরে জান্নাত সুজানা (১১০৩)।
কুয়েত মৈত্রী হলের ভিপি রাফিয়া রেহনুমা (৭৭১), জিএস নিশিতা জামান নিহা (৭২২) এবং এজিএস তানজিনা তাম্মিম হাপসা (৫৪৮)। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ভিপি তাসনিম আক্তার আলিফ নাবিলা (৫১৮), জিএস মিফতাহুল জান্নাত (৭৬৫) এবং এজিএস রূপা আক্তার (৭৪০)। সূর্য সেন হলের ভিপি আজিজুল হক (৬৯২), জিএস মোখলেছুর রহমান (৪৮২) এবং এজিএস রিয়াজ উদ্দীন সাকিব (৩৮৮); মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ভিপি মো. মহিউদ্দিন (৪৬১), জিএস আসিফ ইমাম (৪২৪) এবং এজিএস মো. ফোজায়েল আহমাদ (৪৫০); বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ভিপি মো. মুসলিমুর রহমান (৬০৮), জিএস আহমেদ আল সাবাহ (৪০৫) এবং এজিএস মুশফিক তাজওয়ার মাহির (৬১৩); কবি জসীমউদ্দীন হলে ভিপি মুহাম্মদ ওসমান গনী (৫৭৮), জিএস মাসুম আব্দুল্লাহ (৩৪৪) এবং এজিএস হিজবুল্লাহ আল হিজুল (৩৬৯)।
বিজয় একাত্তর হলে ভিপি হাসান আল বান্নাহ (৬৭৩), জিএস আশিক বিল্লাহ (৮৯৫) এবং এজিএস ইমরান হোসেন (৫৪৭); স্যার এ এফ রহমান হলে ভিপি রফিকুল ইসলাম রফিক (৪৬১), জিএস হাবিবুল্লাহ হাবিব (৩৬৯) এবং এজিএস আব্দুল্লাহ আল জুবায়ের (৩২৯); হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ভিপি ছাদিক হোসেন (৪৪৯), জিএস রাফিদ হাসান সাফওয়ান (৬৪৫) এবং এজিএস মোহাম্মদ আবদুল মজিদ (৪১৬); সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ভিপি জায়েদুল হক (২৫৪), জিএস সাদমান আব্দুল্লাহ (১৬৬) এবং এজিএস শাহিন আলম (১০২)।