জনগণের টাকায় নির্মিত এসব মাঠ ও পার্ক ব্যবস্থাপনার নামে ক্লাবগুলো দখল করে প্রশিক্ষণ, মেলা এবং নানা বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ক্লাবগুলো মাঠে স্থাপনা নির্মাণ, ভাড়া প্রদান এবং সদস্যপদ বিক্রির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আয়ের পথ খুলে দিচ্ছে। এতে করে মাঠগুলো কমিউনিটির পরিবর্তে বাণিজ্যিক ক্লাবের মাঠে পরিণত হচ্ছে, যা শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার সুযোগ কমিয়ে দিচ্ছে।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘শিশুদের খেলার মাঠ দখলে ক্ষমতাবান অপশক্তি এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের নীরবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব অভিমত ব্যক্ত করেন।
আরও পড়ুন: ডিএনসিসির নাম ভাঙিয়ে মাঠ দখল!
পবার কার্যকারী সভাপতি ডা. লেলিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ সুমন। সভায় তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের অগ্রদূত সৈয়দা রতনা, সিএসপিএ-এর কনসালটেন্ট অধ্যাপক আ ফ ম সরোয়ার, বারসিকের পরিচালক ও নৃবিজ্ঞানী সৈয়দ আলী বিশ্বাস, মো. হাবিবুর রহমান ময়না এবং বারসিকের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পবার নির্বাহী সদস্য, ব্যারিস্টার নিশাত মাহমুদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন যুগ্ম সম্পাদক এম এ ওয়াহেদ রাসেল।
মাঠ-পার্কের গুরুত্ব তুলে ধরে বক্তারা বলেন, ‘মাঠ ও পার্ক বিলাসিতা নয়, এটি নাগরিক জীবনের অপরিহার্য অংশ। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোকসহ নানা অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ এবং যুব সমাজকে মাদক ও হতাশা থেকে দূরে রাখতে মাঠ ও পার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে নগর পরিকল্পনায় এ বিষয়ে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।’
বক্তারা আরও বলেন, কমিউনিটি মাঠ স্টেডিয়াম বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নয়। এ মাঠ শিশু-কিশোরদের জন্য উন্মুক্ত থাকতে হবে। অথচ বিভিন্ন ক্লাব মাঠের পাশে ক্লাব হাউস নির্মাণ করে প্রথমে প্রশিক্ষণ শুরু করে, পরে ধীরে ধীরে স্থাপনা তৈরি করে মাঠগুলো দখল করছে। এতে স্থানীয় শিশু-কিশোররা খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মোহাম্মদপুরে কলোনি মাঠ নিয়ে এতো লুকোছাপা কেন ডিএনসিসির!
বক্তারা ধানমন্ডি মাঠের উদাহরণ দিয়ে বলেন, একসময় উন্মুক্ত থাকা এই মাঠ ক্লাবের নামে দখল করে নেওয়া হয়েছে। একইভাবে গুলশানের শহীদ তাজউদ্দিন স্মৃতি পার্কও কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী দখলে নিয়ে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মাঠ দখল নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ তিনটি মামলায় স্পষ্ট নির্দেশনা দিলেও সিটি কর্পোরেশন এবং রাজউক তা অমান্য করছে।
সভায় বক্তারা মহানগরীর মাঠ, পার্ক ও জলাধার সংরক্ষণ আইনের সংশোধন, মাঠ ব্যবস্থাপনায় নীতিমালা প্রণয়ন, দেশের সকল মাঠ ও পার্কের তালিকা প্রস্তুত ও উন্মুক্তকরণ এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। একই সঙ্গে নাগরিক অধিকার রক্ষায় ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।