ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে পদে পদে ভোগান্তি

৪ দিন আগে
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত নির্মাণাধীন নাজুক ১২ কিলোমিটার চারলেন যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’য়ে পরিণত হয়েছে। যাত্রীরা এ সড়ক পাড়ি দিতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে সময় পার করছেন। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে কর্ম-ঘণ্টা। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যেই সড়কটি মেরামতের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ২০১৭ সালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫১ কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মাণের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) পরে প্রকল্পটির খুঁটিনাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ২০২০ সালে ৩টি প্যাকেজ ৫১ কিলোমিটার মহাসড়কের কাজ শুরু করে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। এরপর করোনা মহামারী, পরে মহাসড়ক নির্মাণে বালু সংকট, সবশেষ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কয়েক দফা পিছিয়ে যায় সড়কটির নির্মাণ কাজ।


এর মধ্যে প্যাকেজ-১ এর আওতায় আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার চারলেন মহাসড়কের একপাশ নির্মাণ করতে কেটে যায় ৮ বছর। এর মধ্যে ২০২৫ সালে ৩১ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। পরে সড়কটি নির্মাণে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হয়।

 

এর মধ্যে বর্ষাকালে সড়কটির আশুগঞ্জ ও বিশ্বরোড অংশে বড়বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। এতে মহাসড়কটিতে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে ওঠে। ফলে প্রায়শই থমকে থাকে যানবাহনের চাকা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন এই মহাসড়কে চলাচলরত কয়েক লাখ যাত্রী ও পরিবহন চালক।


ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চর ইসলামপুরগামী যাত্রী স্বপন ঘোষ বলেন, ‘ঢাকা থেকে ভৈরব চলে আসি ২ ঘণ্টার মধ্যে। আর ভৈরব থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের রামপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করতে সময় ক্ষেপণ হয়েছে ১১ ঘণ্টা।’


যাত্রীদের ক্ষোভ, এই যদি হয় সড়কের অবস্থা, যাত্রীদের কী উপায় হবে। যাত্রীদের এমন ভোগান্তি দেখার কি কেউ নেই।


আরও পড়ুন: চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না টিকিট, ভোগান্তিতে সিলেটবাসীর ট্রেনযাত্রা


ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে চলাচলরত ট্রাকচালক রমজান আলী বলেন, ‘সিলেট তামাবিল থেকে পাথর নিয়ে ঢাকা যাচ্ছি। মোটামুটি ঝামেলামুক্তভাবে সিলেট থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইলের শাহবাজপুর পর্যন্ত এসেছি। এরপরই তীব্র যানজটের কবলে পড়তে হয়েছে। এই সড়কে চলাচল করতে গিয়ে বিশ্বরোডের মোড় আর আশুগঞ্জে গোল চত্বর নামটি শুনলেই আগে থেকে ভোগান্তির কথা মনে পড়লে গায়ে কাঁপুনি চলে আসে। কারণ ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লেগে যায়।’

 

নিয়মিত জ্যাম লাগার কারণ সম্পর্কে তিনি জানান, এক দিকে মহাসড়কে বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দ। অন্যদিকে মহাসড়কের দুই পাশে অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড ও অবৈধ বাস স্ট্যান্ড। এসব কারণে যানজটের ভোগান্তি আরও বাড়ছে। যে যেভাবে পারে, সেভাবেই মহাসড়কের আশপাশ দখল করছে।


বাস চালক কায়েস আলী বলেন, ‘ঢাকা থেকে সিলেট যেতে আগে যেখানে ৫-৬ ঘণ্টা সময় লাগতো এখন লাগে ১১ ঘণ্টা। এর কারণ একটাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ এবং বিশ্বরোড মোড়ে নির্মাণাধীন চারলেন মহাসড়কের একাংশের খানাখন্দ, আর বড়বড় গর্ত। আর প্রতিনিয়ত অনিয়ন্ত্রিত যানজট।’


এ দুটি স্থানে যানজটের কারণে যাত্রীরা এখন বাসে করে সিলেট যেতে আগ্রহ হারাচ্ছে। তিনি দ্রুত মহাসড়কটি মেরামতের জন্যে সরকারের কাছে দাবি জানান।


মহাসড়কে দায়িত্বরত খাটিহাতা হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সড়কটি নাজুক হওয়ায় দায়িত্বপালন করতে গিয়ে নিয়মিত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা হিমশিম খাচ্ছেন।’


তিনি বলেন, ‘কখনো গর্তের মধ্যে ট্রাকের চাকা আটকে যাচ্ছে। কখনো যানবাহন বিকল হয়ে পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এছাড়া যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ থাকায় এই মহাসড়কে প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।’


আরও পড়ুন: ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ


তিনি আরও বলেন, ‘একদিকে নাজুক মহাসড়ক, অন্যদিকে একটু বৃষ্টি হলে গর্তগুলোতে পানি জমে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। পরিবহনচালক ও যাত্রীদের ভোগান্তির মাত্রা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সড়কটি মেরামত করা ছাড়া বিকল্প আর কোনো উপায় দেখছি না।’


অপরদিকে মহাসড়কেন সরাইল অংশে তদারককারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রায় সময়ই সড়কটির বিভিন্ন অংশে ইট-বালু ফেলে সড়কটি সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে সেগুলো বেশিক্ষণ স্থায়ী হচ্ছে না। তবে প্রকল্পের একটু সমস্যা ছিল এই সমস্যাগুলো শেষ হয়েছে। লোকবল এবং মালামাল সবই চলে এসেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি নির্মাণে কাজ শুরু হবে।


সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক সম্প্রতি সড়কটি পরিদর্শন এসে বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নাজুক সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এতে এই সড়কের চলাচলরত যাত্রী এবং পরিবহন চালকেরা ভোগান্তি থেকে অনেকটাই মুক্তি পাবেন।’


সড়ক বিভাগের তথ্যমতে, এই মহাসড়কে ১২ কিলোমিটার অংশে প্রায় অর্ধশত ছোট বড় গর্ত রয়েছে। যার ওপর দিয়ে দৈনিক গড়ে ২২ হাজার ছোটবড় যানবাহন ধীরগতিতে চলাচল করছে। আগামী বুধবার সবশেষ উপদেষ্টা এ মহাসড়কটি পরিদর্শনে আসার কথা রয়েছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন