ডাকসুতে জয়ে কর্মী-সমর্থকদের মিছিল না করার আহ্বান শিবির সভাপতির

৩ সপ্তাহ আগে
ডাকসুতে জয় লাভ করায় কর্মী-সমর্থকদের কোথাও মিছিল না করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করার পর তার ফেসবুক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি।

 

ওই পোস্টে শিবির সভাপতি জাহিদুল লিখেন, 

আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ মহান। অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাই বিজয়ী হলো। আমরা সারাদেশের কোথাও কোনো মিছিল করবো না। শুধু মহান রবের নিকট সিজদার মাধ্যমে শুকরিয়া আদায় করবো। এই বিজয় আল্লাহর একান্ত দান। আমরা অহংকারী হবো না, সবার প্রতি উদার ও বিনয়ী থাকবো।

 

তিনি আরও লিখেন, স্বপ্নের ক্যাম্পাস গড়ার পথযাত্রী, আমরা থামবো না। প্রিয় মাতৃভূমি হবে সবার বাংলাদেশ।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহ-সাধারণ সম্পাদকের তিনটি শীর্ষ পদসহ প্রায় সবকটি পদেই বিজয়ী হয়েছে এই জোট। ভিপি পদে ছাত্রশিবিরের মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম), জিএস পদে এস এম ফরহাদ ও এজিএস পদে মহিউদ্দিন খান বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন।

 

সকালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এ ফলাফল ঘোষণা করেছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। এবারের নির্বাচনে ছাত্রদল, বাম ও বাগছাসসহ অন্য যেসব প্যানেল থেকে প্রার্থী দেয়া হয়েছিল তাদের কেউই গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে জয়লাভ করতে পারেনি। তবে তিনটি পদে স্বতন্ত্র থেকে বিজয়ী হয়েছেন।

 

ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে- ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম) সর্বমোট ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৮ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমা পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৮৯ ভোট। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন পেয়েছেন ৩ হাজার ৬৮১ ভোট।

 

জিএস পদে এস এম ফরহাদ ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী তানভীর বারী হামীম ৫ হাজার ২৮৩ ভোট পেয়েছেন। প্রতিরোধ পর্ষদের প্রার্থী মেঘমল্লার বসু পেয়েছেন ৪ হাজার ৯৪৯ ভোট। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের আবু বাকের মজুমদার ২ হাজার ১৩১।



এজিএস পদে মহিউদ্দীন খান পেয়েছেন ১১ হাজার ৭৭২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৬৪ ভোট।

 

আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচন ২০২৫ /শিবির সমর্থিত জোটের ভূমিধস জয়, ছাত্রদলের ভরাডুবি

 

এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে শিবির সমর্থিত জোটের ফাতেমা তাসনিম জুমা (১০৬৩১), বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে একই প্যানেলের ইকবাল হায়দার (৭৮৩৩), কমন রুম-রিডিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে একই প্যানেলের উম্মে সালমা (৯৯২০), আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে এই প্যানেলেরই জসীমউদ্দিন খান (৯৭০৬) (যিনি জুলাইয়ে চোখ হারান), এই প্যানেল থেকে ক্রীড়া সম্পাদক পদে আরমান হোসেন (৭২৫৫), ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে একই প্যানেলের আসিফ আব্দুল্লাহ (৯০৬১), এই প্যানেল থেকেই ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদে মাজহারুল ইসলাম (৯৩৪৪), স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে একই প্যানেলের আব্দুল্লাহ আল মিনহাজ (৭০৩৮), মানবাধিকার ও আইন বিষয়ক সম্পাদক পদে সাখাওয়াত জাকারিয়া (১১৭৪৭)বিজয়ী হয়েছেন।

 

এদিকে তিনটি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। তারা হলেন- সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ (৭৭৮২), গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে জুলাই আন্দোলনের আলোচিত মুখ সানজিদা আহমেদ তন্বি (১১৭৭৮) এবং সমাজসেবা সম্পাদক পদে যুবাইর বিন নেছারী (৭৬০৮) জয় লাভ করেন।

 

এরইমধ্যে নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন আবিদুল এবং উমামা ফাতেমা। আব্দুল কাদেরও নির্বাচনের ব্যাপক সমালোচনা করে কারচুপির অভিযোগ এনেছেন।

 

আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী জুলাই আন্দোলনের আলোচিত মুখ তন্বি

 

বিজয়ী সাদিক কায়েম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলাকালে তিনিও ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছিলেন। এছাড়া ছাত্রদলকে অনৈতিক সুবিধা দেয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
 

 

এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ডাকসুর ভোটগ্রাহণ চলে। এবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আটটি কেন্দ্রের ৮১০টি বুথে ডাকসু এবং হল সংসদে শিক্ষার্থীদের ভোটগ্রহণ চলে। এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। পাঁচ ছাত্রী হলে ১৮ হাজার ৯৫৯ ভোটের বিপরীতে ১৩ ছাত্র হলে এই সংখ্যা ২০ হাজার ৯১৫ জন। ডাকসুতে ২৮টি পদের জন্য মোট ৪৭১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রতি হল সংসদে ১৩টি করে ১৮টি হলে মোট পদের সংখ্যা ২৩৪টি। এসব পদে ভোটের লড়াইয়ে ছিলেন ১ হাজার ৩৫ জন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এবার ভোটারদের ৪১টি ভোট দিতে হয়েছে।

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন