সরেজমিনে বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখা গেছে, নির্মাণাধীন ভবনে লাগানো হয়নি দরজা-জানালা, পলেস্তারা, মেঝে পাকা করা হয়নি, বিদ্যুতিক কাজ ও ওয়াশরুমের কাজও বাকি। একতলা একটি জরাজীর্ণ ভবনে চলছে ক্লাস। দেয়াল ও ছাদের বিভিন্ন স্থান থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। প্রতিষ্ঠানটির একটি নতুন দোতলা ভবনের প্রায় সাড়ে ৬ বছর আগে নির্মাণ শুরু হলেও তা স্থবির হয়ে আছে। শ্রেণিকক্ষ সংকটে বর্তমানে একটি বেঞ্চে বসতে হচ্ছে চার থেকে পাঁচজন শিক্ষার্থীকে। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ময়মনসিংহ নগরীর আকুয়া মড়লপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে টেন্ডার হয়। স্কুল ভবন নির্মাণের কাজ পায় আকুয়া দক্ষিণপাড়া এলাকার মেসার্স অয়ন এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম মোস্তফা। ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) কার্যাদেশ দেয়।
আরও পড়ুন: এক স্কুলে ২০ যমজ শিশু!
৭৯ লাখ এক হাজার ২৪৫ টাকা ব্যয়ে স্কুল ভবনটি নির্মাণ কাজ ২০২১ সালের ৩ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজ শেষ করার আগেই ৭০ লাখ ৬২ হাজার ২৩৮ টাকা বিল তুলে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বাস্তবে ৮০ শতাংশের কম কাজ হলেও প্রায় ৯০ শতাংশ বিল তুলে নিয়ে ২০২০ সালের শুরুতেই কাজ বন্ধ করে লাপাত্তা হয় ঠিকাদার। এরপর থেকে এভাবেই পড়ে আছে ভবনটি। নির্মাণাধীন ভবনটি এখন রূপ নিয়েছে মাদকসেবীদের আড্ডখানায়। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারাও।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক এনামুল কবীর বলেন, ‘২০১৮ সালের শেষের দিকে শুরু হয় ২০১৯ সালে এক বছর পুরোদমে কাজ হয়। ২০২০ সালে করোনা শুরুর পর থেকেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ঠিকাদারের কাছে অনেকবার গিয়েছি, উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে গিয়েছি, এর এক পর্যায়ে ঠিকাদারকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। এখন উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে গেলে শুধু ঘোরাচ্ছে।’
আরও পড়ুন: ১৪ মাসে ৫ মাস বন্ধ স্কুল, পড়ালেখা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা
তিনি আরও বলেন, ‘৩১৪ জন শিক্ষার্থীর পাঠ কার্যক্রম চালাতে খুব হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতি বেঞ্চে ৪-৫ জন করে শিক্ষার্থী বসাতে হচ্ছে। এতে মানসম্মত শিক্ষা দেয়া যাচ্ছে না। স্কুলের ভবনটি দ্রুত শেষ করে শ্রেণিকক্ষ সংকট দূর করা দরকার।’
স্থানীয় বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘কাজ বন্ধ থাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে নতুন ভবনটি। কি কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে তা জানতে পারেননি এলাকাবাসী। আগের ভবনে বাচ্চাদের ক্লাস করতে অনেক সমস্যা হয়। আর নির্মাণাধীন ভবনে বখাটেরা আড্ডা দেন, নেশা করেন। স্কুলের কাজ দ্রুত শেষ হোক এটাই আমাদের দাবি।’
সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মনিকা পারভীন বলেন, ‘পড়ালেখা করার জন্য যে সুন্দর পরিবেশ দরকার স্কুলটিতে তা নেই। গাদাগাদি করে শিশুদের বসতে হয়। সময় মতো স্কুলের নির্মাণ কাজ শেষ হলে শিশুদের এই কষ্ট করতে হতো না, পড়ালেখার গতি বৃদ্ধি পেতো। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নিয়ে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন শেষে আমাদের দফতরে লিখিতভাবে বিষয়টি অবগত করবো।’
আরও পড়ুন: কালকিনিতে আবুল হোসেন কলেজের সব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ, কমছে শিক্ষার্থী
এ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হয়নি এলজিইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি ঠিকাদারকে। তবে, শিগগিরই কাজ শেষ করার আশ্বাস উপজেলা প্রশাসনের।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, ‘লাপাত্তা হওয়া ঠিকাদারের জরিমানা আরোপের বিষয়টি সম্পন্ন করে যেন দ্রুত বিদ্যালয়টির নির্মাণ কাজ শেষ করা যায় সেজন্য আমরা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, নগরের আকুয়া মড়লপাড়া এলাকায় ২০০২ সালে ৩৩ শতক জমিতে বেসরকারি উদ্যোগে প্রাথমিক বিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হলেও ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হয়।