এরপর থেকেই উপজেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করলেও থামেনি সংঘর্ষ। পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয় বিজিবি। ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরগাঁও জেলার সীমান্ত ঘেঁষা হরিপুর উপজেলায়। এমন পরিস্থিতিতে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
তবে বিজিবি ও পুলিশ প্রশাসন বলছে, আপাতত পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত অবস্থানে আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে গুজব সৃষ্টির কারণে মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। যা ঘটেছে তা প্রথম দিনেই ঘটেছে। এর পর থেকে আর কোনো ঘটনা ঘটেনি।
স্থানীয়রা জানান, হরিপুর উপজেলার গেদুড়া ইউনিয়নের আটঘরিয়া গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে স্থানীয়দের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপজেলার গেদুড়া ইউনিয়নের আটঘরিয়া বাজার ও আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে ঝড়-শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত ৬৫ হেক্টর জমির ফসল
অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হলেও শনিবার (১২ এপ্রিল) রাত ১০ টার পর থেকে দফায় দফায় আবারও দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। কেন প্রশাসন তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে না এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ।
এরইমধ্যে সংঘর্ষে গুরুতর হয়েছে- নুর ইসলাম (৫০), মুজিবর এবং মোহাম্মাদ আলী। তাদের সবার বাড়ি আটঘড়িয়া গ্রামে। বর্তমানে তারা ঠাকুরগাঁও জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকিদের নাম পাওয়া যায়নি।
এদিকে, শনিবার বিকেলে হরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামানকে বদলি করে দেওয়া হয়। রাতে স্থানীয়রা ১৪৪ ধারা ভেঙে একটি মিছিল বের করেন। মিছিলে মালদইয়াদের নিয়ে অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করে স্লোগান দেন স্থানীয়রা। এতেই অপরপক্ষ ক্ষিপ্ত হয়ে আবারও সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।
অপদিকে, হরিপুরের আটঘরিয়ার মারামারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের কাউন্সিল বাজার ও সীমান্তবর্তী চেকপোস্ট বাজারসহ আশপাশের এলাকাতেও ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। এতে ওই এলাকার দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে দুই উপজেলায় পরিস্থিতি থমথমে বিরাজ করছে।
রোববার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাণীশংকৈল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাফিউল মাজলুবিন রহমান।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে স্থানীয়দের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যানমালের ক্ষয়ক্ষতির হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয়দের জানমাল ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এই ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।’
আরও পড়ুন:ঠাকুরগাঁওয়ে ১৪৪ ধারা ভেঙে সংঘর্ষে আহত ৫০, ভাঙচুর-আগুন
পুলিশ, ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে হরিপুর উপজেলার মরাধার গ্রামের ইয়াসিন আলীর সঙ্গে পাশের আটঘরিয়া গ্রামের মো. মাহাতাবের জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এর জেরে গত বছরের আগস্টে সরকার পতনের পর ইয়াসিন লোকবল নিয়ে ওই জমি দখলে নেন।
গেল শুক্রবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে মাহতাব ও তার লোকজন সেই জমি উদ্ধারে সেখানে যান। এ সময় ইয়াসিনের লোকজনের সঙ্গে তারা সংঘর্ষে জড়ান। এ সংঘর্ষে এলাকার বাড়িতে বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ঘটনা ঘটে। ওই সময় প্রায় ২০টি বসতঘরে আগুন দেওয়া হয়। হামলায় উভয়পক্ষের প্রায় ৫০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হরিপুরের আটঘরিয়ার ঘটনাটি কেন প্রশাসন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না এ নিয়ে নেট দুনিয়ায় জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন নেটিজনেরা।
তাদের দাবি, প্রশাসনের ব্যর্থতার জন্যই হরিপুর আটঘরিয়া এখনও সংঘর্ষ চলছে। এসময় নেটিজনরা ডিসি-এসপিকে ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে ঠাকুরগাঁও থেকে বিদায় নেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।
হরিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকারিয়া মণ্ডল জানান, পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক আছে। প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে। ঘটনার তদন্ত চলছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে আটঘরিয়ায় ঘটনাকে কেন্দ্র করে সীমান্তে নিরাপত্তার বিষয়ে ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল তানজীর আহম্মেদ বলেন, ‘সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদারের পক্ষেই আমরা সব সময় কাজ করি। পাশাপাশি আটঘরিয়া চেকপোস্ট, এ দুই জায়গায় গত দিন ঝামেলা হয়েছিল। এখন খবর পেয়েছি যে বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে, কিন্তু পরিস্থিতি থমথমে। আমাদের বিজিবিও পুলিশে সঙ্গে কাজ করছে। তবে বিজিবি স্ট্রং আছে।’