ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ে দুর্ভোগে সরিষাবাড়ীবাসী

১ সপ্তাহে আগে
জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার মানুষদের রাজধানী ঢাকায় যাতায়াতের অন্যতম নিরাপদ ও জনপ্রিয় মাধ্যম ট্রেন। অথচ বর্তমানে সেই ভরসার বাহনটি হয়ে উঠেছে ভোগান্তির নামান্তর। ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়, পুরাতন ও নিম্নমানের ইঞ্জিন, স্টেশনগুলোতে জনবল সংকটসহ নানা অব্যবস্থাপনায় প্রতিদিনই দুর্ভোগে পড়ছেন এ উপজেলার হাজারও মানুষ।

সরিষাবাড়ীর মানুষ মূলত দুটি আন্তঃনগর ট্রেন 'জামালপুর এক্সপ্রেস' ও 'অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস'-এর ওপর নির্ভর করে চলাফেরা করেন। কিন্তু এই দুই ট্রেনের যাত্রাপথ এখন যাত্রীদের জন্য ভোগান্তির আরেক নাম। সময়মতো ট্রেন না আসা, অপ্রয়োজনীয় স্টপেজ, পুরোনো লোকোমোটিভ এবং রেলের নজরদারির অভাব। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠেছে।


সরিষাবাড়ীতে প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১ থেকে ৪ ঘণ্টা দেরিতে পৌঁছায় আন্তঃনগর ট্রেনগুলো। ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে সকালবেলা যাত্রা করেও সরিষাবাড়ীতে পৌঁছাতে অনেক সময় বিকাল গড়িয়ে যায়। আবার ঢাকায় ফেরার পথে, ট্রেন ছাড়ে সন্ধ্যায়, পৌঁছায় গভীর রাতে। এতে ঢাকায় পৌঁছে যাত্রীরা পড়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায়।


নিয়মিত যাত্রী মজনু মিয়া বলেন, রাতে কমলাপুরে পৌঁছে বাসা পর্যন্ত যেতে অনেক সময় রাস্তায় অপেক্ষা করতে হয়। তখন ছিনতাইয়ের ভয়ে ভুগতে হয়। নারী ও বৃদ্ধ যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি বিপদে থাকেন।


আরেক যাত্রী রাশেদুল ইসলাম বলেন, সরিষাবাড়ী থেকে যদি কোনো ট্রেন সকালবেলায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়তো, তাহলে সবচেয়ে বেশি উপকার হতো। সকালের যাত্রায় অফিস-আদালত, হাসপাতাল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সময়মতো পৌঁছানো সম্ভব হতো।


সরিষাবাড়ী উপজেলার আওতায় রয়েছে সাতটি রেলস্টেশন- জাফরশাহী, বাউসী, বয়ড়া, বারইপটল, শহীদ নগর, সরিষাবাড়ী ও বালিজুড়ি। তবে এর মধ্যে চারটি স্টেশনে নেই পর্যাপ্ত জনবল। রেলস্টেশনে কর্তব্যরত না থাকায় যাত্রীরা বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন। টিকিট কেনা, সঠিক তথ্য পাওয়া, বা যাত্রী নিরাপত্তার মতো মৌলিক সেবাও থেকে যায় অধরা।


আরও পড়ুন: ট্রেনে ঈদযাত্রা: অগ্রিম টিকিট কাটবেন যেভাবে


স্টেশন মাস্টার আসাদুজ্জামান বলেন, জেলা পর্যায়ে ট্রেন সময়মতো ছাড়ে না। আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। রেলপথের উন্নয়ন ছাড়া এই দুর্ভোগ দূর করা সম্ভব নয়।


রেলওয়ের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, কেবল জামালপুর জেলাতেই ঢাকা থেকে পাঁচটি আন্তঃনগর এবং দুটি মেইল ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু সেই তুলনায় সরিষাবাড়ী উপজেলার দিকে নজর কম। বিশেষ করে আন্তঃনগর জামালপুর এক্সপ্রেস ও অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।


এ ব্যাপারে যাত্রীরা অভিযোগ করেন, রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই দিনের পর দিন সমস্যাগুলো থেকে যাচ্ছে। ট্রেন দুটিকে যদি সকাল ও সন্ধ্যার সময় ভাগ করে দেওয়া হতো, তাহলে যাত্রীরাও স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারতেন।


বর্তমানে এই দুটি আন্তঃনগর ট্রেন মাত্র ২০ থেকে ৩০ মিনিটের ব্যবধানে সরিষাবাড়ী স্টেশন ছাড়ে। রাত ১টা থেকে ২টার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছায়, যা অধিকাংশ যাত্রীর জন্য অস্বস্তিকর। শিডিউল এমনভাবে পুনর্বিন্যাস করা দরকার যাতে অন্তত একটি ট্রেন সকাল বেলায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়ে।


আরও পড়ুন: নরসিংদী স্টেশনে যাত্রাবিরতি পেল আরও ৩ আন্তঃনগর ট্রেন


স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম বলেন, সরিষাবাড়ী অনেক মানুষ প্রতিদিন ঢাকায় যান চিকিৎসা, ব্যবসা বা অফিসের কাজে। অথচ এমন সিডিউলে যাওয়া-আসা কঠিন। ফলে বাস বা অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ মাধ্যমে যাতায়াত করতে হয়।


ট্রেনের সময় বিপর্যয় ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে বহু যাত্রী আন্তঃনগর ট্রেনে যাতায়াত করা থেকে বিরত থাকছেন। এতে একদিকে যাত্রীরা যেমন কষ্ট পাচ্ছেন, অন্যদিকে সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে।


রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ট্রেনের লোকোমোটিভ, সময় ব্যবস্থাপনা ও স্টেশন উন্নয়ন—এই তিনটি জায়গায় উন্নয়ন আনতে পারলে সরিষাবাড়ীর চিত্রই পাল্টে যাবে। যাত্রীও বাড়বে, রাজস্বও বাড়বে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন