ট্রাম্পের সময়েও যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সমর্থন চান জেলেন্সকি

২ সপ্তাহ আগে
ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধের তিন বছর যখন পূরণ হচ্ছে, তখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির জেলেন্সকি আসন্ন ট্রাম্প প্রশাসনের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন  অব্যাহত থাকবে বলে তাঁর দেশের আশার কথা জোর দিয়ে বলেন। এ সপ্তাহে ওয়ারস’ তে পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডনাল্ড টাস্কের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জেলেন্সকি বলেন,“আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অভিষেকের জন্য অপেক্ষা করছি। আমার মনে হয় গোটা বিশ্বই অপেক্ষা  করছে কারণ বিশ্বের স্থিতিশীলতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র একটি কৌশলগত সহযোগী রাষ্ট্র”। জেলেন্সকি যুক্তরাষ্ট্রকে “রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে ইউক্রেনের অস্তিত্বের জন্য সব চেয়ে বড় দাতা দেশ” বলে বর্ণনা করেন এবং “ শক্তির মাধ্যমে শান্তি”  এ নীতির  ভিত্তিতে সহযোগিতা আরও গভীর করার ব্যাপারে আশাবাদ প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, যিনি সোমবার ক্ষমতা গ্রহণ করতে যাচ্ছেন, তাঁর সঙ্গে সম্ভাব্য বৈঠকের জন্য তার সরকার ইতোমধ্যে ওয়াশিংটনের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।   তিনি বলেন,“এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিস্তারিত ব্যাপারে আমাদের টিম কাজ করছে। আমরা এই যুদ্ধ শেষ করতে চাই, তবে যথার্থ শান্তির শর্তে”। ভবিষ্যতের শান্তি  আলোচনায় ইউক্রেনের মূল বিষয়টি হবে ভবিষ্যতে  রাশিয়ার আগ্রাসন রোধে শক্ত ও সামগ্রিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা অর্জন করা। ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সামরিক সহায়তা প্রদানের ব্যাপারে ট্রাম্প সংশয় প্রকাশ করে বার বার এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন যে তিনি ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহণ করার আগেই যুদ্ধ শেষ করবেন। তবে সাম্প্রতিক দিনগুলিতে তাঁর সহকারীরা বলেছেন যুদ্ধ শেষ করার নতুন সময়সীমা হচ্ছে তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে, যা হবে এপ্রিলের শেষ নাগাদ। পররাষ্ট্র মন্ত্রী পদে ট্রাম্পের মনোনীত ব্যক্তি, মার্কো রুবিও বুধবার তাঁর পদের নিশ্চিতকরণ শুনানির সময়ে বলেন, “সংঘাত বন্ধ হয়ে গেলেও, নিজের প্রতিরক্ষার ক্ষমতা তাকে অর্জন করতে হবে”। তিনি বলেন এটি হচ্ছে ইউক্রেনের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার বিষয়। ওয়ারস’তে জেলেন্সকির পাশে দাঁড়িয়ে টাস্ক বলেন, ইউক্রেনের সর্বোত্তম নিরাপত্তা নিশ্চয়তা হচ্ছে ইউরো-অ্যাটলান্টিক প্রতিষ্ঠানগুলির সদস্যতা লাভ। তবে তিনি বলেন ইউক্রেনের নেটোতে যোগ দেয়ার চিন্তাটি  “কোন কোন রাষ্ট্রের কাছে বিতর্কিত বিষয়” হয়ে আছে যার ফলে পশ্চিমি এই জোটের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে যে ইউরোপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে ইউক্রেনকে বাস্তবসম্মত নিরাপত্তা দিতে হবে”।   ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর শক্তি জেলেন্সকি আরও বলেন ইউক্রেন তার সামরিক বাহিনীর কলেবর কমিয়ে দিয়ে “খেলা” করতে পারে না। তিনি এ রকম প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। রাশিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য শান্তি আলোচনার আগে তিনি বলেন,“নিরাপত্তার একমাত্র নিশ্চয়তা হচ্ছে” একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বাহিনী। তিনি ব্লুমবার্গ নিউজের এই প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করেন যেখানে বলা হয়েছে যে ট্রাম্পের সঙ্গে যে কোন আলোচনার সময়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনকে নেটোর সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করে সীমিত সামরিক বাহিনী নিয়ে একটি “নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের” মর্যাদা গ্রহণের ব্যাপারে চাপ দিতে পারেন। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর বর্তমান শক্তি সম্পর্কে জেলেন্সকি বলেন যে তাদের বর্তমানে রয়েছে ৮,৮০,০০০ সৈন্য এবং তারা নির্দিষ্ট স্থানগুলিতে থাকা আনুমানিক ৬০,০০০০০ রুশ সৈন্যের মোকাবিলা করছে। প্রেসিডেন্টের হিসেব অনুযায়ী, ইউক্রেন তার সামরিক সাজসরঞ্জামের ৩০% ‘এর বেশি উত্পাদন করে, প্রাধনত ড্রোন। তিনি সামরিক উত্পাদনে বিনিয়োগের জন্য মিত্র ও অংশীজনদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ইউরোপীয় নিরাপত্তার উদ্যোগ নিরাপত্তা নিশ্চয়তার  প্রস্তাবিত বিকল্পের মধ্যে রয়েছে  ইউক্রেনে ইউরোপীয় বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাঁক্রর ধারণা। ওয়ারস’তে সফরের সময়ে, জেলেন্সকি এটা নিশ্চিত করেন যে এই প্রস্তাব নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন। ভয়েস অফ আমেরিকার এক প্রশ্নের জবাবে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন যে এই বিষয়টি যদিও এখন একেবারে প্রাথমিক স্তরে রয়েছে , তিনি মনে করেন এই উদ্যোগ ইউক্রেনের বৃহত্তর নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অংশ হতে পারে। জেলেন্সকি আরও বলেন তিনি বিষয়টি নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টারমারের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে ভাবছেন সেই সঙ্গে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্যের জন্য প্রতিশ্রুতি চাইবেন। ব্রিটেন ও ইউক্রেন “১০০ বছরের সহযোগিতা” চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হয়েছে যার মধ্যে থাকছে প্রতিরক্ষা, বিজ্ঞান, জ্বালানি শক্তি ও বানিজ্য। ই.ইউ’তে সম্পৃক্তির আগ্রহ পোল্যান্ড ও ইউক্রেনের নেতারা শান্তি প্রক্রিয়া হিসেবে ইউক্রেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদের আগ্রহের ব্যাপারে সহমত হন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পালাক্রমে বর্তমান সভাপতি রাষ্ট্র পোল্যান্ড, ইউরোপে ইউক্রেনের অন্তর্ভূক্তির বিষয়টি দ্রুত নিশ্চিত করতে তাদের প্রতিশ্রুতির কথা আবার জানিয়েছে। টাস্ক ই.ইউ’র প্রেসিডেন্ট হ্ওয়ার বিষয়টিকে এমন এক ধরণের সুযোগ বলে বর্ণনা করেন যাতে সকল অচলাবস্থা ভেঙ্গে ইউক্রেনের অন্তর্ভুক্তিকে তরন্বিত করা যায়। তিনি বলেন, “আমরা এই বৃহত্ ও জরুরি কাজ সম্পাদনের জন্য ইউক্রেন ও ইউরোপে আমাদের অংশীজনদের সঙ্গে নিঃশর্ত ভাবে কাজ করে যাবো”।   টাস্ক বলেন যে ইউক্রেন ই.ইউ’র সদস্য হলে তা ইউরোপীয় নিরাপত্তার সহায়ক হবে এবং তিনি এই বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এই যৌথ সংবাদ সম্মেলনের সময়ে তিনি বলেন,“ এই বিষয়টি নিয়ে যে অচলবস্থা রয়েছে আমরা তা ভাঙবো। আমরা এই প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করব”।  
সম্পূর্ণ পড়ুন