ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় শীর্ষ রফতানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির চাহিদা মেটাতে গেল বছর ৮৪০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। বছর ব্যবধানে যা বেড়েছে ১.১ শতাংশ। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি দফতরের (ইউএসটিআর) তথ্য বলছে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ১০.৬ শতাংশ শুল্ক দিয়ে ৪৭৭ কোটি ৫১ লাখ ডলারের ওভেন আর ১২ শতাংশ শুল্ক দিয়ে ২৬২ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের নীট পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ।
একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে ৫.২ শতাংশ শুল্কে ৩৪ কোটি ১৭ লাখ ডলারের ক্যাপ, ১৫.৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে ২৫ কোটি ১৯ লাখ ডলারের ফুটওয়্যার; ৬.৮ শতাংশ শুল্কে ১৮ কোটি ৮০ লাখ ডলারের হোমটেক্সটাইল, ৪ শতাংশ শুল্কে ১৩ কোটি ডলার মূল্যের পরচুলা ও মানুষের চুল আর ৮.৯ শতাংশ শুল্কে ১০ কোটি ৭৯ লাখ চামড়াজাত পণ্য রফতানি হয়েছে মার্কিন বাজারে।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কে ক্ষতির শঙ্কায় বাংলাদেশ
এ বাজারেই আগামী ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশি পণ্য রফতানিতে বিদ্যমান শুল্কের সঙ্গে আরও ৩৫ শতাংশ যোগ করার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। অর্থাৎ আগামী মাস থেকে দেশটিতে পোশাক রফতানিতে শুল্ক পড়বে ৪৫.৬ শতাংশ থেকে ৪৭.৬ শতাংশ।
এই শুল্কারোপে; আলোচনায় থাকা ২ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের রফতানি আদেশ বাংলাদেশে না আসার শঙ্কা করছেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা। বাংলাদেশ অ্যাপারেল ইয়ুথ লিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বায়লা) সভাপতি আবরার হোসেন সায়েম বলেন, ২ থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার সরে যেতে পারে।
আবার এই ক্রয়াদেশ কমার প্রভাবে মূল্য কমিয়ে দেয়ার সুযোগ নিতে পারেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্রেতারা। তাহলে স্বল্প, মধ্য, দীর্ঘমেয়াদি বিকল্প কী?- এমন প্রশ্নে আবরার হোসেন সায়েম বলেন, বিকল্প রাতারাতি হয়ে যাবে না।
দেশের নিট গার্মেন্টস মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, নতুন বাজার তৈরি করতে অনেক সময় লাগবে।
রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাজার বৈচিত্র্যকরণ একটি দীর্ঘমেয়াদি চিন্তাভাবনা। কিন্তু আমরা এখনও সেটি সঠিকভাবে করতে পারিনি।
দীর্ঘমেয়াদে নতুন করে বাজার খোঁজার পাশাপাশি স্বল্প-মধ্য মেয়াদে বর্তমান রফতানি গন্তব্যে হিস্যা বাড়ানোর তাগিদ দিচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এজন্য, পণ্য বৈচিত্র্যকরণে উৎপাদন নীতি ও আর্থিক সহায়তা আর বিপণনে ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশে জোর দেয়ার পরামর্শ তাদের। বায়লা সভাপতি আবরার হোসেন সায়েম বলেন, এই বাজারগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের পরিচিতি আছে। কিন্তু আমরা শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারিনি। ব্রান্ডিং বাড়াতে হবে।
আরও পড়ুন: শুল্কারোপের বিষয়টি অপ্রত্যাশিত, তবে বৈঠকে ইতিবাচক ফল আসবে: বাণিজ্য সচিব
এদিকে, রফতানি বাজার সম্প্রসারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জুলাই আলোচনায় সীমাবদ্ধ না থেকে লাগাতার নতুন নতুন কৌশলে বৈঠক করার পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।
র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জুলাই মাসের মধ্যে শুল্ক নিয়ে আলোচনা শেষ করা তাগিদ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাই জুলাইয়ের মধ্যেই এটি শেষ করার চেষ্টা করতে হবে। এটি না পারলেও আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। কারণ বাণিজ্য আলোচনায় শেষ কথা বলে কিছু নেই।
উদ্যোক্তারা বলছেন, মার্কিন পোশাকের বাজারে বাংলাদেশিদের চাপে পড়ার বড় কারণ ভিয়েতনামের শুল্ক বাড়ানো হয়েছে ২০ শতাংশ, ২৬ শতাংশ শুল্ক নিয়ে সুবিধাজনক আলোচনায় রয়েছে ভারত। আর চীনের শুল্ক বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হলেও ম্যানমেইড ফাইবার, টেকনিক্যাল টেক্সটাইল ও উচ্চমানের ও মূল্যের পোশাক তৈরিতে এগিয়ে রয়েছে অনেক বেশি।
]]>