সামাজিক ম্যাধম প্ল্যাটফর্ম টিকটক জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের অ্যাপ ব্যবহারকারীদের জন্য সেবা পুনরায় শুরু করার “প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।” শনিবার রাতে একটি নতুন আইনের কারণে টিকটক যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ হয়ে যায়।
যে কোম্পানি টিকটক পরিচালনা করে, তারা রবিবার সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ দেয়া এক পোস্টে জানায়, যেসব প্রযুক্তি কোম্পানি তাদের ডিজিটাল ষ্টোর থেকে টিকটক না সরালে জরিমানার হুমকিতে ছিল, তারা এবং অন্যান্য সেবা প্রদানকারীরা সাহায্য করতে সম্মত হয়েছে।
টিকটক প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানায়। ট্রাম্প রবিবার বলেন যে, সোমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেকের পর তিনি টিকটকের চীন-ভিত্তিক মালিক কোম্পানিকে একটি অনুমোদিত ক্রেতা খুঁজে পাবার জন্য আরও সময় দেবেন। যার পড়ে এই জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ার করার প্ল্যাটফর্ম স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ হবে।
ট্রাম্প রবিবার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশাল-এ তাঁর পদক্ষেপের কথা জানান। একই সময় যুক্তরাষ্ট্রে লক্ষ লক্ষ টিকটক ব্যবহারকারী সকাল থেকে দেখতে পায় যে তারা টিকটক অ্যাপ ব্যবহার করতে পাড়ছে না।
টিকটক আবার শনিবারের আগের মত কাজ করছে কি না, তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার ছিল না। কিছু ব্যবহারকারী জানান অ্যাপ কাজ করছিল এবং টিকটকের ওয়েবসাইট অন্তত কিছু ব্যবহারকারীর জন্য কাজ করছিল বলে মনে হয়। তবে, অ্যাপল অ্যাপ ষ্টোরে টিকটক ডাউনলড করা যাচ্ছে না।
গুগল এবং অ্যাপল একটি আইনের বিধান অনুসরণ করে তাদের ডিজিটাল ষ্টোর থেকে টিকটক সরিয়ে ফেলে। এই ফেডেরাল আইন অনুযায়ী, টিকটকের মালিক কোম্পানি বাইটড্যান্স যদি রবিবারের (১৯ জানুয়ারি) মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কার্যক্রম বিক্রি না করে দেয় তাহলে তাদের অ্যাপ নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।
গত এপ্রিল মাসে দ্বিপাক্ষিক সমর্থন নিয়ে পাস করা এই আইনের অধীনে নিয়ম না মানলে কঠোর জরিমানার বিধান রয়েছে।
টিকটক জানায়, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের প্রতিশ্রুতি “আমাদের সেবা প্রদানকারীদের প্রয়োজনীয় স্বচ্ছতা এবং আশ্বাস দিয়েছে যে ১৭ কোটি আমেরিকানকে টিকটক সেবা দিয়ে ৭০ লক্ষ ব্যবসাকে টিকে থাকতে দিলে তারা কোন জরিমানার মুখে পড়বে না।”
ট্রাম্প বলেন যে তাঁর নির্বাহী আদেশ “আইনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার সময়সীমা বাড়িয়ে দেবে,” এবং “আমার আদেশের আগে যেকোন কোম্পানি টিকটক চালু রাখতে সহায়তা করার জন্য কোন দায়ভার বহন করবে না।”
শনিবারেই টিকটক 'বন্ধ'
যুক্তরাষ্ট্রে শনিবার রাত থেকে সামাজিক মাধ্যম টিকটক কাজ করা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং অ্যাপল ও গুগল অ্যাপ স্টোর থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। রবিবার থেকে একটি আইন কার্যকর হচ্ছে, যার অধিনে আমেরিকার ১৭ কোটি ব্যবহারকারীর জন্য অ্যাপটি বন্ধ করে দেয়ার হয়।
এর আগে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, সোমবার দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি টিকটককে ‘খুব সম্ভবত’ নিষেধাজ্ঞা থেকে ৯০ দিনের জন্য ছাড় দেবেন, যে কথা টিকটক অ্যাপ ব্যবহারকারীদের জন্য বার্তায় উল্লেখ করেছে।
চীনের বাইটড্যান্স কোম্পানির মালিকানাধীন টিকটক স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে (গ্রেনিচ মান সম্ময় ০৩৪৫ মিনিট) ব্যবহারকারীদের জানায়, “যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার একটি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে এর অর্থ হলো আপনি আপাতত টিকটক ব্যবহার করতে পারবেননা। আমরা সৌভাগ্যবান যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর টিকটক পুনরায় চালু করার সমাধানে আমাদের সাথে কাজ করবেন। দয়া করে সাথেই থাকুন।”
ভিডিও এডিটিং অ্যাপ ক্যাপকাট এবং লাইফস্টাইল সোশ্যাল অ্যাপ লেমন ৮-এর মতো বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন অন্যান্য অ্যাপও অফলাইন ছিল এবং ইউএস অ্যাপ স্টোরে এগুলো পাওয়া যাচ্ছিলো না।
এনবিসিকে ট্রাম্প বলেন, “৯০ দিনের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি সম্ভবত করা হবে, কারণ এটি যথাযথ। যদি আমি তা করার সিদ্ধান্ত নেই, তাহলে সম্ভবত সোমবার আমি এটি ঘোষণা করবো।”
আমেরিকানদের প্রায় অর্ধেককেই টিকটক আকৃষ্ট করেছে।টিকটক ক্ষুদ্র ব্যবসাকে শক্তিশালী করেছে, অনলাইন সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে। শুক্রবার তারা সতর্ক করে দেয় যে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন অ্যাপল এবং গুগলের মতো সংস্থাগুলোকে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পরে তারা প্রয়োগকারী পদক্ষেপের মুখোমুখি হবে না এমন নিশ্চয়তা না দিলে রবিবার যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক বন্ধ হয়ে যাবে।
গত বছর পাস হওয়া এবং শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট দ্বারা সর্বসম্মতিক্রমে বহাল রাখা একটি আইনের অধীনে, প্ল্যাটফর্মটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে এমন উদ্বেগ নিরসনে এটি তার চীন-ভিত্তিক প্যারেন্ট কোম্পানির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে অথবা যুক্তরাষ্টড়ে কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য রবিবার পর্যন্ত সময় পাবে।
শনিবার হোয়াইট হাউস পুনর্ব্যক্ত করেছে যে, পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি পরবর্তী প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে।