সংঘর্ষের সময় বিএনপির নেতার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করে বহিষ্কৃত যুবদলের নেতার পক্ষের লোকজন।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) রাত ৯টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত অন্ধকারের মধ্যে টর্চ লাইটের আলো জ্বালিয়ে এ সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনার পর এখনও এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তি ইউনিয়নের বুধন্তি গ্রামের ভূঁইয়া গোষ্ঠীর নেতৃত্ব রয়েছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য চমক ভূঁইয়া। একই গ্রামের বদা গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন বহিস্কৃত যুবদল নেতা মিজানুর রহমান ওরফে মিজান মিয়া।
এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপি নেতা চমক ভূঁইয়া ও বহিষ্কৃত যুবদল নেতা মিজানুর এবং তার পক্ষের লোকজনের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছিল। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে যুবদল নেতা মিজানুর, তার গোষ্ঠী ও পক্ষের লোকজন বিএনপির নেতার বাড়িতে হামলা চালায়। পরে বিএনপির নেতার পক্ষের লোকজনও পাল্টা হামলা চালায়। দুইপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালীন বিএনপির নেতা চমক ভূঁইয়ার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট শেষে অগ্নিসংযোগ করা হয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন।
খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। পরে বিজয়নগর ও হবিগঞ্জের মাধবপুর ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
আরও পড়ুন: রাতে টর্চ জ্বালিয়ে ফরিদপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, নিহত ১
আহতরা হলেন চমক ভূঁইয়া-(৪৮), জাহাঙ্গীর আলম-(৫২), আশিক মিয়া- (৩৩) , ফরিদ মিয়া-(৫০), হান্নান মিয়া (৩৮), ইয়াসিন মিয়া- (৪৫) এবং জহুরুল ইসলাম। আহতদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলমের দুই পা ভেঙে গেছে এবং আশিক মিয়ার চোখে আঘাত লেগেছে। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে বিজয়নগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য চমক ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাতের বেলা টর্চ লাইটের আলোর সাহায্যে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের নিয়ে মিজান আমার বাড়ি-ঘরে হামলা চালায়। আমার বাড়ির তিনটি বসত ঘরে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট শেষে বাড়ির বনের কুঞ্জি এবং ফসল কাটার দুটি কম্বাইন হার্ভেস্টারে আগুন জ্বালিয়ে দেন। বাড়ি থাকা দুধ দেয়ার দুটি বড় গাভি ও তিনটি ছোট বাছুর লুট করে নিয়ে গেছে মিজান ও তার লোকজন। বাড়িতে অবশিষ্ট কিছুই নেই। হামলায় আমার এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশের কাছ থেকে যুবলীগ নেতাকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করায় দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমি তাকে বহিষ্কার করার কেউ না। বিনাকারণে মিজান আমার বাড়িঘরে হামলা ও আমার লোকজনকে মারধর করেছে। গত ৫ আগস্টের পর থেকে মিজান এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে আসছেন। আমি মামলা দায়েরের প্রস্ততি নিচ্ছি।’
এ ব্যাপারে বহিষ্কৃত যুবদল নেতা মিজানুর রহমান বলেন, ‘ছোট একটি ভুলের কারণে দল থেকে আমার পদটি স্থগিত রাখা হয়। এরপর থেকে চমক ভূঁইয়ার ছেলেসহ বাড়ির ও গোষ্ঠীর লোকজন বুধন্তি বাসস্ট্যান্ডসহ এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বিষয়টি নিয়ে বলাবলি করে। বৃহস্পতিবার রাতে জেলা বিএনপির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিষয়টি মিমাংসা করতে চমক ভূঁইয়ার বাড়িতে যান। সে সময় তার লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে আমাদের গোষ্ঠীর লোকজনের ওপর হামলা চালায়।’
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শসা চুরি নিয়ে সংঘর্ষ, নারী-শিশুসহ অর্ধশতাধিক আহত
এ ব্যাপারে বিজয়গর উপজেলার ইসলামপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রাজীব আহমেদ বলেন, ‘পূর্ব বিরোধের জেরে মিজান ও চমক ভূঁইয়ার পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। চমক ভূঁইয়ার বাড়ির তিনটি বসতঘরে হামলা-ভাঙচুরসহ বাড়ির বনের কুঞ্জি ও কম্বাইন হার্ভেস্টারে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।’
বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম জানান, কোনো পক্ষই এখন পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ করেনি। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। তবে অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয়তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকায় উত্তেজনা থাকায়, অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।