জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবদান

২ সপ্তাহ আগে
’২৪- এর জুলাইতে রাজপথে শুধু শিক্ষার্থীদের পা চলেনি- হেঁটে এসেছিল এক প্রজন্মের সাহস, ক্ষোভ আর মমত্ববোধ। জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে ভূমিকা রেখেছেন, তা শুধু সাহসিকতার নয়- একটি জনপদের বিবেক হয়ে ওঠার গল্পও বটে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) আদেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বন্ধ হয়ে গেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই ধরেন আন্দোলনের হাল। বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায় ১৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্তত ১৯ জন শিক্ষার্থী শহীদ হন জুলাই আন্দোলনে। আহত হয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অগণিত শিক্ষার্থী।

৩১ জুলাই, ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে হাইকোর্ট মাজার গেট থেকে কিছুটা দূরে অবস্থান নেন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ঘিরে ফেলে পুলিশ। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।

 

কিছু বুঝে ওঠার আগেই স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের নূর হোসেনকে তুলে নেয় পুলিশ। তখন প্রিজন ভ্যানের সামনে একাই দাঁড়িয়ে পরেন নুসরাত জাহান। নিজ বিভাগের বড় ভাইকে কিছুতেই নিয়ে যেতে দেবে না সে। নুসরাতের সেই প্রতিবাদী মুহূর্ত হয়ে ওঠে পুরো অভ্যুত্থানের প্রতীক।

 

সেই সময়ের উত্তরা ছিল দুর্বার আন্দোলনের এক অনন্য উদাহরণ। সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারানোর আগমুহূর্ত পর্যন্ত মুগ্ধতা ছড়িয়ে গেছেন মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। একই সময়ে বাড্ডা, রামপুরাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে।

 

সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে মেরুল-বাড্ডা এলাকায়। কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের আশপাশে র‍্যাবের হেলিকপ্টার থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ছোড়া হয় টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড। তবুও বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন নর্থ সাউথ, ব্র্যাক, ইউআইইউ, ইউল্যাবের শিক্ষার্থীরা।

 

আরও পড়ুন: রক্তাক্ত ৭ জুলাই: নতুন কর্মসূচিতে স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানী

 

তারা বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করতে আসিনি; সত্যের পাশে দাঁড়াতে এসেছিলাম। হেলিকপ্টার দেখেছি, গুলি দেখেছি—ভয় পাইনি, দাঁড়িয়ে ছিলাম।’

 

অনেকে মনে করেন, এই আন্দোলনের প্রতিধ্বনি দেশ-বিদেশে পৌঁছে দেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই। ফেসবুক লাইভ, ইনস্টাগ্রাম স্টোরি, টুইটারে পোস্টের মাধ্যমে পুরো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে ওঠে আন্দোলনের মাধ্যম। আর তার বাস্তব রূপ ছিল দেয়াল লিখন আর গ্রাফিতি। সঙ্গে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো বন্ধ হওয়ার পর বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই বাঁচিয়ে রাখেন জুলাই আন্দোলনকে।

 

তাই তো শিক্ষার্থীরা মনে করেন- নর্থ সাউথ, স্ট্যামফোর্ড, ইউআইইউ, ড্যাফোডিল কিংবা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কেউ একা ছিল না। অধিকারের লড়াইয়ে নেমেছিল পুরো একটি প্রজন্ম। প্রাণও দিয়েছেন অনেকেই।

 

আরও পড়ুন: সংস্কারবিহীন নির্বাচন হলে আবারও গণ-অভ্যুত্থান ঘটতে পারে: নুর

 

বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটা অন্তত ১৭ থেকে ১৯ জনের মতো। আহত আর পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অজস্র শিক্ষার্থী। যে কারণে তাদের চোখে এই অর্জন অনন্য।

 

নুসরাতের একা দাঁড়িয়ে যাওয়া, মুগ্ধের রক্ত, কিংবা বাড্ডার আকাশে উড়ে যাওয়া সেই হেলিকপ্টার—এসব কেবলই ঘটনা প্রবাহ নয়, বরং এক প্রজন্মের প্রতিবাদ। বলাই যায় এরা প্রমাণ করেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শুধু পড়ালেখাই নয়, প্রয়োজনে ইতিহাসও লিখতে জানে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন