জাহাজের জট ঠেকাতে নতুন সিদ্ধান্ত চট্টগ্রাম বন্দরের

৪ দিন আগে
নানামুখী জটিলতায় বহির্নোঙরে জাহাজ অবস্থানের সময় বাড়তে থাকায় কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আন্তর্জাতিক শিপিং বাণিজ্যে সুনাম ক্ষুণ্ন হওয়ায় তারা অন্তত ১৫টি জাহাজকে বহির্নোঙ্গরে অবস্থান করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে শঙ্কা শিপিং ব্যবসায়ীদের।

চট্টগ্রাম বন্দরে অন্তত ১৫টি গিয়ার কিংবা গিয়ারলেস জাহাজ হ্রাস করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। জাহাজের তালিকা বন্দরের কমিটির কাছে জমা দিতেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মূলত ঈদের দীর্ঘ বন্ধ, কাস্টমসের আন্দোলন এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বন্দরের বহির্নোঙরে জট তৈরি হয়। এতে জাহাজের অবস্থানের সময় বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক শিপিং বাণিজ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়।

 

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, ইচ্ছা করলেই কোনো একটি জাহাজ সরিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। কারণ প্রতিটি জাহাজের সঙ্গে চাটার্ড অ্যাগ্রিমেন্ট বা চুক্তি বেঁধে দেয়া থাকে। তাই বিষয়টি সময়সাপেক্ষ এবং তাৎক্ষণিকভাবে পরিবর্তন আনা কঠিন।

 

আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বন্দরের ১৬৮ সেবায় বাড়ছে শুল্ক, উদ্বেগ ব্যবসায়ীদের

 

চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙরে বর্তমানে ১১১টি জাহাজের অবস্থান রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান জেটিতে অবস্থানরত ১৭টি এবং বহির্নোঙরে ৯১টি জাহাজের মধ্যে ৩৮টি থেকে পণ্য খালাস হচ্ছে। এই মুহূর্তে কন্টেইনারবাহী জাহাজ রয়েছে ৩৬টি।

 

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বন্দরে পণ্য নিয়ে আসার জন্য ১২৬টি মাদারভ্যাসেলের অনুমোদন রয়েছে। এরমধ্যে ৯০-৯৬টি মাদারভ্যাসেল পণ্য আনানেয়া করছে। বাকিগুলো চলছে এডহক ভিত্তিতে। তবে এসব মাদারভ্যাসেল ধারণক্ষমতার চেয়ে কম কনটেইনার আনায় চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকালীন সময় বাড়ছে বলে অভিযোগ বন্দরের।

 

বন্দরের ১৬টি বার্থের মধ্যে ১০টি বার্থ কন্টেইনারবাহী জাহাজের জন্য বরাদ্দ রাখতে হয়। এক্ষেত্রে চলতি বছরের শুরুতেও বন্দরে ৯৬টি পণ্যবাহী জাহাজ আসা-যাওয়া করে। কিন্তু এডহক ভিত্তিতে ২৫ থেকে ৩০টি জাহাজের অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। এ অবস্থায় জট এড়াতে ১৫টি জাহাজ বন্দরে অবস্থান করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন্দর।

 

চট্টগ্রাম বন্দর বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ফজলে একরাম চৌধুরী বলেন, গিয়ারলেস জাহাজ বেশি হয়ে গেছে। যদি গিয়ারলেসের পরিবর্তে গিয়ারযুক্ত জাহাজ আনা যায়, তাহলে জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি) ও চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনালসহ (সিসিটি) অন্যান্য টার্মিনালে জাহাজগুলো আরও সমানভাবে বণ্টন করা সহজ হবে।

 

বছরে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের অংশ হিসেবে ৩২ লাখের বেশি কনটেইনার এবং ১৩ কোটি মেট্রিকটন কার্গো পণ্য আনা-নেয়া করা হয় এসব জাহাজ দিয়ে। এর মধ্যে বিদেশি মালিকানাধীন জাহাজের সংখ্যাই বেশি। জিবিএক্স লজিস্টিক লিমিটেডের হেড অব অপারেশন মুনতাসির রুবায়েত বলেন, এই সিদ্ধান্ত আবারও ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে। কারণ, বর্তমানে বন্দরে একাধিক বিদ্যমান সংকট চলছে। এসব পরিস্থিতিকে গুরুত্ব দিয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জাহাজগুলো সরিয়ে নিতে হবে। এটি আগেও করেছে বন্দর। আশা করি এখনও বন্দর সেটি পারবে।

 

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরে দেশি-বিদেশি অন্তত ৩০টি শিপিং লাইনের জাহাজ পণ্য আনা-নেয়া করে। এরমধ্যে প্রতি মাসে গড়ে ১১৩ থেকে ১২৬টি কন্টেইনারবাহী জাহাজ আসে বন্দরে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন