জার্মানির বিরোধী নেতা ফ্রিড্রিখ মেরটজ-এর রক্ষণশীল দল রবিবারের নির্বাচনে টেনে-টুনে বিজয়ের পথে আছে বলে বুথফেরত সমীক্ষায় দেখা গেছে। অন্যদিকে, অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি বা এএফডি তাদের ভোট প্রায় দ্বিগুণ করে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে, যেটাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোন অতি-ডানপন্থী দলের সবচেয়ে ভাল ফলাফল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
চ্যান্সেলর (প্রধানমন্ত্রী) ওলাফ শল্টজ তাঁর ভাষায়, “তিক্ত নির্বাচন ফলাফল” এর পর তাঁর মধ্য-বামপন্থী সোশাল ডেমোক্র্যাট দলের পরাজয় মেনে নিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এআরডি এবং জেডডিএফ-এর হিসেবে দেখা গেছে, চ্যান্সেলরের দল তৃতীয় স্থানে নেমে আসবে, যা হবে বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যেকোন জাতীয় সংসদীয় নির্বাচনে তাদের সবচেয়ে খারাপ ফলাফল।
মেরটজ একটি জোট গঠনের লক্ষ্যে দ্রুত কাজ শুরু করার অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু সেটা বেশ জটিল কাজ হবে।
অসন্তুষ্ট জাতী
শল্টজ-এর সরকার তাদের মেয়াদের তৃতীয় বছরে জোটের ভেতরে মতবিরোধ এবং ক্রমশ জনপ্রিয়তা হারানোর ফলে গত নভেম্বরে ভেঙ্গে পড়ে। এর ফলে নির্বাচন নির্ধারিত সময়ের সাত মাস আগেই অনুষ্ঠিত হয়।
চতুর্দিকে অসন্তোষ বিরাজ করছিল এবং কোন প্রার্থীর জন্য তেমন কোন উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়নি।
নির্বাচনী প্রচারণার মূল বিষয় ছিল ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতিতে বছরব্যাপী স্থবিরতা এবং অভিবাসন কমানোর জন্য চাপ, যেটা বিবাদ সৃষ্টি করে যখন মেরটজ সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে অভিবাসন নিয়ে কঠোর নীতি অবলম্বনের জন্য চাপ দিতে থাকেন।
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ এবং ইউরোপের সাথে আমেরিকার মিত্রতা নিয়ে অনিশ্চয়তার পটভূমিতে।
জার্মানি ২৭-সদস্যের ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সবচেয়ে জনবহুল দেশ এবং সামরিক জোট নেটোর অন্যতম সদস্য। ইউক্রেনকে সামরিক সরঞ্জাম দেয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পর জার্মানি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সাংঘর্ষিক পররাষ্ট্র এবং বাণিজ্য নীতি সহ আগামী বছরগুলোর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইউরোপের নীতি প্রণয়নে জার্মানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
ক্ষমতাসীনদের ভরাডুবি
বুথফেরত সমীক্ষা বা এক্সিট পোল এবং আংশিক ভোট গণনার পর যে হিসেবে দেয়া হচ্ছে, তাতে মেরটজ-এর ইউনিয়ন ব্লক ২৮.৫ শতাংশ মত ভোট পাচ্ছে আর অভিবাসন-বিরোধী এএফডি ২০.৫ শতাংশ – যেটা ২০২১ সালে তাদের প্রাপ্ত ভোটের প্রায় দ্বিগুণ।
এই হিসেব অনুযায়ী, শল্টজের সোশাল ডেমোক্র্যাটরা ১৬ শতাংশের একটু উপড়ে থাকবে, যেটা গত নির্বাচনের চেয়ে অনেক কম এবং ২০১৭ সালে তাদের ঐতিহাসিকভাবে সবচেয়ে কম ভোটেরও নিচে, যখন তারা ২০.৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল।
পরিবেশবাদী দল গ্রিন্স, বিদায়ী সরকারে একমাত্র জোট সদস্য, ১২ শতাংশের কিছুটা বেশি পেয়েছে।
ছোট তিনটি দলের মধ্যে কট্টর বামপন্থী ডি লিঙ্কে (লেফট পার্টি) তাদের অবস্থান উন্নীত করে ৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে। বিদায়ী সরকারের প্রাক্তন সদস্য ফ্রি ডেমোক্র্যাটস এবং সারা ওয়াগেঙ্কনেখট অ্যালায়েন্স ৫ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে। জার্মান পদ্ধিততে সংসদে আসন লাভের জন্য কোন দলকে অন্তত ৫ শতাংশ ভোট পেতে হয়।
শল্টজের সোশাল ডেমোক্র্যাটদের নিয়ে একটি জোট সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা মেরটজের থাকবে কি না, নাকি তাকে তৃতীয় আরেকটি দলের সমর্থন নিতে হবে, তা নির্ভর করবে সংসদে দলের সংখ্যার উপর। রক্ষণশীল নেতা বলেছেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, জার্মানিতে যত দ্রুত সম্ভব একটি কার্যকর সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।”
“বাইরের বিশ্ব আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে না, এবং তারা জোট গঠনের জন্য দীর্ঘ আলোচনা আর দরকষাকষির জন্যও অপেক্ষা করছে না,” তিনি তাঁর উৎফুল্ল সমর্থকদের বলেন।
এএফডি উল্লসিত কিন্তু সঙ্গিহীন
এএফডি’র যৌথ নেতা টিনো ক্রুপাল্লা উল্লসিত সমর্থকদের বলেন যে, “আমরা আজ ঐতিহাসিক কিছু অর্জন করেছি।”
“আজ আমরা রাজনীতির কেন্দ্রে এবং আমরা আর কোনায় পড়ে নেই,” তিনি বলেন। এর আগে দলের সবচেয়ে ভাল ফলাফল ছিল ২০১৭ সালের ১২.৬ শতাংশ, যখন তারা প্রথমবারের মত জাতীয় সংসদে আসন পায়।
চ্যান্সেলর পদের জন্য দলের প্রার্থী অ্যালিস ভাইডেল বলেন তারা মেরটজ-এর দলের সাথে “জোট নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত,” এবং “অন্যথায়, জার্মানিতে কোন নীতি পরিবর্তন সম্ভব হবে না।”
মেরটজ বার বার এএফডি’র সাথে কাজ করার কথা নাকচ করে দিয়েছেন – এবং ভাইডেল ও অন্যান্য নেতাদের সাথে টেলিভিশনে নির্বাচন-পরবর্তী আলোচনায় তিনি সেই অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।
মূলধারার অন্যান্য দলগুলোও একই ভাবে এএফডি’র সাথে কাজ করতে অস্বীকার করে।
ভাইডেল বলেন যে একটি কাল্পনিক জোট গঠনে এএফডিকে খুব বেশি ছাড় দিতে হবে না, কারণ তিনি যুক্তি দেখান যে, মেরটজ-এর ইউনিয়ন মূলত এএফডি’র কর্মসূচীই নকল করেছে। তিনি মেরটজ-এর বিজয়কে “মূল্যহীন বিজয়” বলে অভিহিত করেন।
“তারা তাদের কর্মসূচী বামপন্থী দল নিয়ে বাস্তবায়ন করতে পারবে না,” তিনি বলেন। মেরটজ যদি সোশাল ডেমোক্র্যাট এবং গ্রিন্সদের সাথে জোট সরকার গঠন করেন, তাহলে “সেটা একটা অস্থিতিশীল সরকার হবে যারা চার বছর টিকতে পারবে না, সেখানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন চ্যান্সেলর মেরটজ থাকবে এবং আমরাই ইউনিয়ন দল দখল করবো।”
ভোটাররা এএফডি’র সাথে জোট চেয়েছে, এই ধারণা মেরটজ নাকচ করে দেন।
“আমাদের চিন্তা-ভাবনায় মৌলিক পার্থক্য আছে। যেমন, পররাষ্ট্রনীতিতে, নিরাপত্তা নীতিতে, অন্যান্য বিষয়ে, ইউরোপ নিয়ে, নেটো নিয়ে,” তিনি বলেন।
“আমরা যা চাই, আপনারা তার উল্টো চান। কাজেই, এখানে কোন সহযোগিতা হবে না,” মেরটজ বলেন। অন্যদিকে, বিদায়ী চ্যান্সেলর শল্টজ বলেন তিনি কখনোই এএফডি’র সাফল্য মেনে নিবেন না।
প্রায় সাড়ে আট কোটি জনসখ্যার দেশে ৫ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষ সংসদের নিম্নকক্ষ বুন্ডেস্টাগের ৬৩০জন সদস্যকে নির্বাচন করার জন্য ভোটার হিসেবে নথিভুক্ত ছিলেন।