জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে সবচেয়ে বেশি দূষণকারী দেশের নেতারা অনুপস্থিত

১ সপ্তাহে আগে
জাতিসংঘের বার্ষিক জলবায়ু সম্মেলনে মঙ্গলবার বিশ্ব নেতারা আজারবাইজানের বাকুতে সমবেত হচ্ছেন, তবে এবারে নামদামী ব্যক্তিত্ব এবং শক্তিশালী দেশগুলি যে অনুপস্থিত তা লক্ষণীয়। অতীতের জলবায়ু সম্মলনগুলোতে যে ফুটবল বিশ্বকাপের মতোই তারকাদের ঝলক ছিল এবারেরটি তা থেকে ভিন্ন। তবে ২০২৪ সালের জলবায়ু সম্মেলনের অবস্থা অনেকটা আন্তর্জাতিক দাবা ফেডারেশনের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মতো। যেখানে পরিচিত নামের অভাব রয়েছে তবে জ্ঞানী এবং কৌশল্যার উপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বের ১৩টি সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাইঅক্সাইড-নিঃসরণকারী দেশের শীর্ষ নেতারা এই সম্মেলনে উপস্থিত থাকছেন না। এই দেশগুলো ২০২৩ সালের তাপ ধরণকারী গ্যাস উৎপাদনের ৭০ শতাংশের বেশির জন্য দায়ী। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দূষণকারী ও শক্তিশালী অর্থনীতি, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের ১ নম্বর নেতাকে সম্মেলনে পাঠাচ্ছে না। ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানরাও উপস্থিত থাকছেন না। অর্থাৎ বিশ্বের ৪২ শতাংশের বেশি জনসংখ্যার চারটি জনবহুল দেশের নেতারা জলবায়ু সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন না। “এটা রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবেরই লক্ষণ। এটা হচ্ছে জরুরি অবস্থা সম্পর্কে বিকারহীন থাকা," ক্লাইমেট অ্যানালিটিকসের সিইও, জলবায়ু বিজ্ঞানী বিল হেয়ার বলেন। তিনি বলেন, এর ব্যাখ্যা এমন যে “আমরা চরম বিশৃঙ্খলার মাঝে নিজেদেরকে ফেলেছি।” সম্মেলনে উপস্থিত জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুটেরেস বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে বলেন, বিশ্ব রেকর্ডউচ্চ উষ্ণতম দিন, মাস ও বছর প্রত্যক্ষ করেছে এবং "জলবায়ু ধ্বংসের চরম অবস্থা" প্রত্যক্ষ করেছে। তবে গুটেরেস যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পের পুনঃনির্বাচিত হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন যে “দূষণহীন শক্তির বিপ্লব এখানে উপস্থিত। কোনও দল, কোনও ব্যবসা, কোনও সরকার এটাকে বন্ধ করতে পারে না। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, ২০১৬ সালে ট্রাম্প যখন প্রথম নির্বাচিত হন, তখন বিশ্বে ১৮০ গিগাওয়াট দূষণহীন বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিল এবং ৭ লক্ষ বৈদ্যুতিক যানবাহন ছিল। এখন ৬০০ গিগাওয়াট দূষণহীন বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে এবং ১ কোটি ৪০ লক্ষ বৈদ্যুতিক যানবাহন রয়েছে। স্বাগতিক দেশ আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ বিশ্ব নেতাদের নিয়ে আয়োজিত সম্মেলনের দুটি নির্ধারিত দিনের বক্তৃতার শুরুতেই আর্মেনিয়া, পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যম, জলবায়ু কর্মী এবং সমালোচকদের সমালোচনা করেন। বিশেষত যারা তার দেশেকে তেল ও গ্যাস সমৃদ্ধ এবং বাণিজ্য দেশ হিসেবে তুলে ধরেছিল তাদের ভণ্ড বলে আখ্যায়িত করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। তিনি বলেন, আজারবাইজানকে “পেট্রোস্টেট” বলা ঠিক হবে না কারণ দেশটি বিশ্বের ১ শতাংশেরও কম তেল ও গ্যাস উৎপাদন করে থাকে। আলিয়েভ বলেন সূর্য, বাতাস ও খনিজ পদার্থের মতোই তেল ও গ্যাস “ঈশ্বরের উপহার।” “এসব যাদের আছে সেই দেশগুলোর এর জন্য দোষারোপ করা উচিত নয়। এবং এই সম্পদগুলি বাজারজাত করণের জন্য দোষারোপ করা উচিত নয় কারণ বাজারে এর প্রয়োজন রয়েছে ।” কপ২৯ নামে পরিচিত জলবায়ু সম্মেলনের হোস্ট এবং প্রেসিডেন্ট হিসাবে আলিয়েভ বলেন যে তার দেশ জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে সরে নবায়নযোগ্য জ্বালানীতে রূপান্তরণের দিকে কঠোরভাবে চাপ দেবে “তবে সেই সাথে আমাদের অবশ্যই বাস্তববাদী হতে হবে।” নেতৃস্থানীয়দের অভাব মঙ্গলবার প্রায় ৫০ জন নেতা বক্তব্য রাখবেন তবে এদের মাঝে আলিয়েভ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কির স্টারমার এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়েপ এরদোয়ান প্রধান বক্তা। বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ বেশ কিছু দেশের নেতারাও শক্তিশালী ব্যক্তব্য রাখবেন। বিশ্ব নেতাদের দুই দিনব্যাপী কপ২৯ শীর্ষ সম্মেলনে কয়েকটি ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবংআফ্রিকার বিভিন্ন দেশের এক ডজনেরও বেশি নেতাও বক্তব্য রাখবেন। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা প্রধান প্রধান দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানের অভাবকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে বলেছেন, জলবায়ু সংক্রান্ত আলোচনায় প্রতিটি দেশই প্রতিনিধিত্ব করে এবং তারা সক্রিয়। একটি সমস্যা ছিল যে, সবচেয়ে শক্তিশালী দেশগুলোর নেতাদের আগামী সপ্তাহে বিশ্বের অপরপ্রান্তে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে উপস্থিত হতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক নির্বাচন, জার্মানির সরকারের পতন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ব্যক্তিগত অসুস্থতা করণেও কিছু নেতা জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিতে পারেন নি। আলোচনার প্রধান লক্ষ্য হবে জলবায়ু অর্থায়ন। যার মধ্যে রয়েছে দরিদ্র দেশগুলিকে জীবাশ্ম জ্বালানী থেকে সরিয়ে আনা এবং তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনে সাহায্য করা, জলবায়ু পরিবর্তনের আসন্ন ক্ষতির সাথে মোকাবিলা করা এবং আবহাওয়ার চরম বিপর্যয়ের জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিত্তশালী দেশগুলো দরিদ্র দেশগুলিকে অর্থ প্রদান করতে সহায়তা করার চেষ্টা। দেশগুলো বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে দরকষাকষি করছে। বছরে ১০ হাজার কোটি ডলার থেকে ১৩০,০০০ কোটি ডলার পর্যন্ত তারা চাইছে। গুটেরেস বলেন, এই অর্থ কোনো চ্যারেটি বা দাতব্য নয়, এটা একটি বিনিয়োগ। "উন্নয়নশীল দেশগুলোর বাকু থেকে খালি হাতে ফেরানো উচিত হবেনা," গুটেরেস বলেন। “ একটি চুক্তি আবশ্যক।”
সম্পূর্ণ পড়ুন