জমি বেচে বিপাকে রংপুর সিটি করপোরেশনের বাসিন্দারা

৪ সপ্তাহ আগে
রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় জমি বিক্রি করলেই উৎসে কর হিসেবে প্রতি শতাংশে রাজস্ব দিতে হবে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এমন সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন জমির ক্রেতা ও বিক্রেতারা।

গত দু’মাসে দলিল রেজিস্ট্রেশন কমে এসেছে অর্ধেকেরও কম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর ফলে কর হার বাড়লেও রাজস্ব আয় কমেছে।

 

জানা যায়, উৎসে কর বিধিমালা সংশোধন করে গত ২৪ জুন গেজেট প্রকাশ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। নতুন এই সংশোধনে রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় জমি বিক্রি করলেই উৎসে কর হিসেবে বিক্রেতাকে দিতে হবে প্রতি শতাংশের মোট দামের ৩ শতাংশ অথবা সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা। এ ক্ষেত্রে টাকার পরিমানে যা বেশি তাই কার্যকর হবে। পহেলা জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া এ সিদ্ধান্তে বিপাকে পেড়েছেন জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা।
 

রংপুর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে কথা হয় তামপাট এলাকার কৃষক মকবুল হোসেনের সাথে। মেয়েকে বিয়ে দেয়ার জন্য গত দু মাস আগে ২৪ হাজার টাকা শতাংশ দরে ৩০ শতাংশ জমির বায়না নেন তিনি। কথা ছিল মেয়ের বিয়ে শেষে ক্রেতাকে জমি রেজিস্ট্রেশন করে দেবেন। তবে জমি রেজিস্ট্রেশন করে দিতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। সরকারের নতুন নিয়ম অনুযায়ী সিটি করপোরেশন এলাকায় জমি বিক্রি করলে বিক্রেতাকে উৎসে কর দিতে হবে প্রতি শতাংশে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা।
 

আরও পড়ুন: একটি মহল ষড়যন্ত্র করে নির্বাচনী পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে: দুলু

সময় সংবাদকে মকবুল হোসেন বলেন, ‘মেয়েকে বিয়া দিতে জমি বেচতে এসে মহাবিপদে পড়ছি। জমি বেঁচলাম ২৪ হাজার টাকা শতকে এখন শুনতেছি সরকারকেই নাকি দিতে শতকে ২৫ হাজার। এমন পরিস্থিতি না পারতেছি জমি লিখে দিতে না পারছি বায়নার টাকা ফেরত দিতে। কারন মেয়ের বিয়েতে সব খরচ করে ফেলেছি।’
 

নগরীর ৮ নং ওয়ার্ডের রঘু বাজার এলাকার বাসিন্দা আমির মিয়া বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত হলেও এখনো আমাদের জমির দাম ইউনিয়ন পরিষদের জমির মতোই। ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজারের বেশি দরে জমি বিক্রি হয় না অথচ সরকার প্রতি শতাংশে উৎসে কর নির্ধারণ করেছে সর্বনিম্ন ২৫ হাজার টাকা। যে কারনে বিক্রি করা জমি ক্রেতাকে রেজিস্ট্রেশন করে দিতে পরছিনা। অন্যদিকে ক্রেতাও খুব চাপ দিচ্ছে।’
 

নগরীর ১৫ নাম্বার ওয়ার্ড দর্শনা এলাকার বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, ‘একটি প্রাইভেট স্কুলের জন্য ৮০ হাজার টাকা দরে ৬ শতাংশ জমি কিনতে বিক্রেতাকে ৪ লাখ টাকা বায়না করি। বেশ কিছুদিন থেকে লিখে দেয়ার কথা থাকলেও জমির মালিক রেজিস্ট্রেশন করে দিচ্ছে না। কারন হিসেবে তিনি বলছেন উৎস কর হিসেবে শতাংশ প্রতি ২৫ হাজার টাকা তিনি দিতে পারবেন না। এখন জমি পাবো কিনা এ নিয়ে শংকায় পড়েছি।’
 

সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব গিলাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা বুলবুল আহমেদ বলেন, তার এলাকার কিছু জমি লাখ টাকায় বিক্রি হলেও ৯০ ভাগ জমি বিক্রি হয় শতাংশ প্রতি ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকায়া। এ অবস্থায় সরকারের নতুন নিয়মে ওই এলাকায় জমি বেচা-কেনার অনেকাংশে কমে গেছে। অনেক সময় মানুষ বিপদে পড়লেও জমি বিক্রি করতে পারছে না। এতে দিন দিন সমস্যা আরও বাড়ছে।
 

দলিল লেখকরা বলছেন, ২০১২ সালে শুরু হওয়া রংপুর সিটি করপোরেশনের মূল শহর ছাড়া নগরীর ৭০ ভাগ এলাকাই অনুন্নত। যেখানে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয় বেশিরভাগ জমি। তাই নতুন এই সিদ্ধান্তের কারণে জমির রেজিস্ট্রেশন কমে এসেছে অর্ধেকে। ফলে ক্ষতির মুখে পরতে হচ্ছে তাদেরও।
 

রংপুর দলিল লেখক সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) শাহীনুর ইসলাম সময় সংবাদকে বলেন, সরকারের নতুন নিয়মের কারনে গত দুমাসে ব্যাপকহারে জমি রেজিস্ট্রেশন কমে গেছে। অনেকসময় রেজিস্ট্রি অফিসেই ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে এ নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডাও হচ্ছে। কারণ এই সিটি করপোরেশনের ৭০ ভাগই কৃষি জমি। মূল শহরে জমির দাম থাকলেও গ্রামাঞ্চলে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয় বেশিরভাগ জমি। এ অবস্থায় উৎসে কর হিসেবে শতাংশ প্রতি ২৫ হাজার টাকা তাদের ওপর বোঝা চাপিয়ে দেয়ার মতো।

আরও পড়ুন: রংপুর / গবাদি পশু থেকে মারাত্মক রোগে আক্রান্ত মানুষ, কোন পথে জনস্বাস্থ্য?


তিনি বলেন, এমন সিদ্ধান্তের বিরূপ প্রভাব পরেছে তাদের পেশাতেও। জমির রেজিস্ট্রেশন কমেছে অর্ধেকেরও নিচে। যা হচ্ছে তার বেশিরভাগই বায়না রেজিস্ট্রি, পাওয়ার প্রদান অথবা দানপত্র। ফলে রেজিস্ট্রেশন কমে যাওয়ায় দলিল লেখকদের আয় কমে গেছে।
 

রংপুর সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার সুব্রত কুমার সিংহ সময় সংবাদকে বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নতুন সিদ্ধান্তে কর হার বাড়লেও রাজস্ব আয় কমেছে। কারন আগের থেকে জমির বিক্রির রেজিস্ট্রেশন ৫০ শতাংশ কমে এসেছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন