জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে ‘কীটনাশক’, বলছে সমীক্ষা

৬ দিন আগে
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব বিষয়ক এক মাঠ অনুসন্ধানমূলক সমীক্ষা বলছে, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে ‘কীটনাশক’। যা স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি আর্থিকভাবেও প্রভাব ফেলেছে উপকূলীয় এলাকার মানুষের ওপর। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক) এ গবেষণা করেছে।

কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ও যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে বিপর্যয়। সম্প্রতি এক গবেষণায় এসব উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।


বুধবার (৬ আগস্ট) শ্যামনগর প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরেন বারসিকের প্রোগ্রাম অফিসার মফিজুর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন, বারসিকের সহযোগী আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রামকৃষ্ণ জোয়ারদার।


এতে বলা হয়, কৃষি ক্ষেতে মাজরা পোকা, লেদা পোকা, জাব পোকা, ছিদ্রকারী পোকা এবং বিভিন্ন ভাইরাসজনিত রোগ দমনের লক্ষ্যে কীটনাশকের ব্যবহার করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কৃষক এসাটপ, কট, ভিত্তাকো, এ্যমিস্টার টব, ডেল এক্সপার্ট, ইনসিপিও, তুবা, সাম, তালাফ, গম বিষ, কালো গুড়া বিষ, সবিক্রম, এন্টাকল, ক্যারাটে, তাসলা, ফোলিকুর, জোয়াস, রিপকট, জাহিম, ফার্মকট, মিমটক্স, কনজাপ্লাস, বাইফোরান, কারবেন্ডাজীম, ম্যানকোজেব, মর্টারসহ নানা ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করছে। এর মধ্যে ফার্মকট, মিমটক্স, কনজাপ্লাস, বাইফোরান, কারবেন্ডাজীম, ম্যানকোজেব, মর্টার এর ব্যবহার সরকারিভাবে নিষিদ্ধ।

আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় গণ-অভ্যুত্থানের এক বছরেও শুকায়নি ছাত্র-জনতার ক্ষত

প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজনে কীটনাশকের ব্যবহার এখন বাস্তবতা হলেও এর অন্ধ ও অনিয়ন্ত্রিত প্রয়োগ জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং আর্থ-সামাজিক কাঠামোয় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। শ্যামনগর উপজেলার ১৪টি গ্রামের ৩১জন কৃষকের ওপর পরিচালিত অনুসন্ধানমূলক সমীক্ষায় দেখা গেছে, কৃষকরা নিজেরাই কীটনাশক প্রয়োগ করেন। তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা, প্রতিবেশী কৃষক, কীটনাশক বিক্রেতা, কোম্পানির প্রতিনিধি, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে এসব কীটনাশক ব্যবহার করেন। 


কীটনাশকের সরাসরি সংস্পর্শে আসার কারণে কৃষকদের শরীরে চুলকানি, চোখে ঝাপসা দেখা, চোখে ছানি পড়া, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, হাত-পা ঝিনঝিন করা, দুর্বলতা, লিভারের জটিলতা ও চর্মরোগসহ নানা রোগ দেখা দেয়।

 

সমীক্ষায় দেখা গেছে, অধিকাংশ পরিবারকেই চিকিৎসার জন্য ৮শ টাকা থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হয়েছে। পরিবারগুলো নিজস্ব সঞ্চয় ও আত্মীয়দের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে চিকিৎসা চালিয়েছেন। অনেকে এখনো চিকিৎসাধীন। কীটনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব শুধু জনস্বাস্থ্যে নয়, পরিবেশ ও প্রাণিজগতেরও ক্ষতি করছে। কৃষি ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রের ফলে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগির মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। পুকুরের মাছ মারা যাচ্ছে। বাসাবাড়িতে তেলাপোকা মারতে গিয়ে শিশু ও বৃদ্ধরা ক্ষতির শিকার হয়েছে।


সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, কীটনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দেশনা ও সচেতনতার ঘাটতি হয়েছে। অধিকাংশ কৃষক লেবেল না পড়ে কীটনাশক ব্যবহার করেন। কীটনাশক ব্যবহারের পর কী করা উচিত সে সম্পর্কেও ধারণা নেই তাদের। প্রশিক্ষণ না থাকায় ভুলভাবে কীটনাশক প্রয়োগ করেন অনেকে। কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের আর্থ-সামাজিক প্রভাবও অনেক। এর কারণে চিকিৎসা, কাজ হারানো, গবাদি পশু মারা যাওয়া, ফসল নষ্ট হওয়া সব মিলিয়ে কৃষকের মানসিক চাপ, পুষ্টিহীনতা ও আয় হ্রাসের মত সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

আরও পড়ুন: সাতক্ষীরা-৩ আসনের সীমানার পুনর্নির্ধারণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

সমীক্ষায় কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার রোধে বিকল্প নিরাপদ কৃষির জন্য জৈব পদ্ধতির প্রসার ও স্থানীয় কৃষকদের জ্ঞানের প্রসার ঘটানোর উদ্যোগ গ্রহণ, কীটনাশক ব্যবহারের আগে কৃষকদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ, কীটনাশকের লেবেলের ভাষা সরলীকরণ ও গণমাধ্যমে প্রচার, কৃষকদের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতিবন্ধী কৃষকদের পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন