ছয় বছরেও শেষ হয়নি হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উন্নয়ন প্রকল্প

৩ সপ্তাহ আগে
নির্মাণাধীন ভবনের কাজ অসম্পূর্ণ রেখে ঠিকাদার পালিয়ে যাওয়ায় ছয় বছরেও শেষ হয়নি চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উন্নয়ন প্রকল্প। ফলে জরাজীর্ণ টিনসেড ভবনে অমানবিক পরিবেশে চলছে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন আড়াই লাখেরও বেশি মানুষের এই চর উপজেলার রোগীরা।

২০১৯ সালে হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের লক্ষ্যে ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮টি ভবন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। কিন্তু চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিসিএলএমসি কাজ শুরু করেও ২০২৩ সালে তা বন্ধ রেখে চলে যায়।

 

স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় স্থানীয় নেতাদের লাগাতার চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে আলগী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম কোতোয়াল বলেন, ‘নেতাদের চাঁদাবাজির কারণে ঠিকাদার বাধ্য হয়ে কাজ বন্ধ রাখে।’

 

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম সফিক বলেন, ‘চলমান নাজুক অবস্থা দ্রুত দূর করতে হবে। নয়তো মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিতই থাকবে।’

 

স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা জানান, ভাঙাচোরা টিনশেড ভবনে চিকিৎসা নিতে এসে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়তে হচ্ছে। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, ঘুরে বেড়ানো কুকুর-বিড়াল, মানসিক ভারসাম্যহীন লোকজন সব মিলিয়ে এক বিষম অবস্থা।

 

আরও পড়ুন: চাঁদপুরে জুলাই আন্দোলনের স্মরণে প্রতীকী মিনি ম্যারাথন

 

অপর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও পরীক্ষার অভাবে রোগীদের বাইরের ক্লিনিকে যেতে হচ্ছে। মাত্র একজন চিকিৎসক প্রতিদিন ৪৫০-৫০০ জন রোগীকে দেখেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।

 

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ১৫ জন চিকিৎসকের স্থলে কর্মরত আছেন মাত্র ৪ জন। অন্যান্য পদেও রয়েছে শূন্যতা। বরাদ্দ ১৩১ জনের মধ্যে বর্তমানে কর্মরত মাত্র ৬৪ জন, তারও অনেকে দীর্ঘ ছুটিতে।

 

চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. নূরুল আলম দীন বলেন, ‘হাইমচরে যেই চিকিৎসককে পাঠানো হয়, তিনিই প্রেষণ নিয়ে অন্যত্র চলে যান। এবার থেকে প্রেষণ ঠেকাতে হবে এবং দ্রুত জনবল সংকট দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে।’

 

স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মাবরুর ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাই নতুনভাবে আবার টেন্ডার ডেকে কাজ শুরু করতে হবে। সব ঠিকঠাক থাকলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণ শেষ করা সম্ভব হতে পারে।’

 

নদীবেষ্টিত হাইমচর উপজেলার প্রায় ২.৫ লাখ মানুষ এখন কার্যত চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় দিন পার করছেন। দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করে নতুন ভবনে চিকিৎসাসেবা শুরু না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন