বুধবার (২০ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বাগমারা মোড় থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
জয় মিজি সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের সূর্যনগর গ্রামের মো. টুকু মিজির ছেলে। তার বাবা টুকু মিজি মিজানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মিজানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলার সময় ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণের অভিযোগে গত ৩০ আগস্ট শিক্ষার্থী রাজিব মোল্লা বাদী হয়ে রাজবাড়ী সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
আরও পড়ুন: ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের মতো ত্রাসের রাজনীতি করবে না ছাত্রদল: নাসির
মামলায় রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সভাপতি কাজী কেরামত আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী, কাজী ইরাদত আলীর ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক কাজী রকিবুল হাসান শান্তনু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জাকারিয়া মাসুদ রাজিব, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান মিয়া সোহেল, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. শাহিন শেখ ও রাজবাড়ী পৌরসভার সাবেক মেয়র আলমগীর শেখ তিতুসহ ১৭০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৩০০ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় এজাহারনামীয় আসামি জয় মিজি।
সদর উপজেলার মাটিপাড়ার কাউরিয়া গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাক মোল্লার ছেলে ও রাজবাড়ী সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র রাজিব মোল্লা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, রাজবাড়ীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে নসাৎ করার জন্য আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। গত ১৮ জুলাই বিকেল ৩টার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র, অভিভাবক ও শিক্ষকরা রাজবাড়ী শহরের বড়পুল মোড়ে অবস্থান নেন। বিকেলে উল্লেখিত এজাহারনামীয় আসামিরা তাদের সঙ্গীদের সঙ্গে দেশীয় অস্ত্র, আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে অতর্কিতভাবে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়।
সাবেক সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলীর নির্দেশে এজাহারনামীয় আসামিরা তাদের সঙ্গীদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনকারীদের হত্যার উদ্দেশ্যে বোমা নিক্ষেপ করে ও গুলি করে। এ ছাড়া আন্দোলনকারীদের বেধড়ক মারধর করে গুরুতর জখম করা হয়।
আসামিরা আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেননি। আসামিদের আক্রমণে সোনিয়া আক্তার স্মৃতি, নুরুন্নবী, আশিক ইসলাম অভি, রাজিব মোল্লা, মেহেরাব, আলতাফ মাহমুদ সাগর, উৎস সরকার, রিয়াজসহ অসংখ্য আন্দোলনকারী আহত হন।
আরও পড়ুন: ঝটিকা মিছিলকারী নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৩ নেতাকর্মী আটক
এছাড়া গত ৫ আগস্ট দুপুর সোয়া ১টার দিকে গোয়ালন্দ মোড়ের করিম পেট্রোল পাম্পের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সাধারণ জনগণের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা করে। এ সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় গত ২ অক্টোবর সদর উপজেলার খানখানাপুর ইউনিয়নের ব্রাকপাড়া গ্রামের মো. ইদ্রিস ফকিরের ছেলে মো. শাহিন ফকির (৩৮) বাদী হয়ে সদর থানায় ৮৭ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলাতেও এজাহারনামীয় আসামি জয় মিজি।
মামলার বাদী শাহিন ফকির বলেন, গত ৫ আগস্ট গোয়ালন্দ মোড়ে করিম পেট্রোল পাম্পের সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় আমার আপন ভাই রেজাউল করিম ও মা রাহেলা বেগমসহ আরও অনেকে গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় আমি ৮১ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা দায়ের করি।
রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুর রহমান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার দুপুরে বাগমারা মোড়ে অভিযান চালিয়ে রাজবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মামলায় সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয় মিজিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় দুটি মামলায় তিনি এজাহারনামীয় আসামি। বিকেলে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।