চড়া সুদ ও এনজিও কর্মীদের চাপে ৩ মাসে প্রাণ গেল ১০ জনের!

৩ সপ্তাহ আগে
রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর জেলায় এনজিওর ঋণ শোধ করতে না পেরে গেল তিন মাসে অন্তত ১০ জন আত্মহত্যা করেছেন।

মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, চড়া সুদ ও এনজিও কর্মীদের অতিরিক্ত চাপে অসহায় মানুষজন ঘরছাড়া কিংবা আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নিচ্ছেন। এর বাইরে বহু নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত এনজিও হঠাৎ গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে। তবে অনিবন্ধিত এনজিওর সঠিক সংখ্যা নেই সমাজসেবা অধিদফতর কিংবা জেলা প্রশাসকের কাছে।

 

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শেখপাড়া গ্রামের পেয়ারা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার অভিযোগ, আলোর বাংলা ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিও ৫ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে। পানের বরজে কাজ করে জমানো সেই অর্থ তিনি জমা রেখেছিলেন এখানে। প্রতিষ্ঠানটি বছরে প্রতি লাখে ২০ হাজার টাকা লাভ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

 

প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের দাবি, প্রায় ৬ হাজার গ্রাহকের ৫০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে এনজিওটি। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আজিজুর রহমানকে গ্রাহকেরা নিজ বাড়িতে আটক করে পাহারা দিচ্ছেন। তবে তিনি দাবি করেন, ধাপে ধাপে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করা হবে।

 

জেলার ৯টি উপজেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য এনজিও। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে। অভিযোগ রয়েছে, ঋণের টাকা পরিশোধের পরও অতিরিক্ত অর্থ দাবি করে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে এনজিওগুলো।

 

আরও পড়ুন: বারোমাসি কাটিমনে ভাগ্য বদলাচ্ছে চাষিদের, আম রফতানিতে নতুন সম্ভাবনা

 

এরই মধ্যে একের পর এক ঘটছে মর্মান্তিক ঘটনা। গত ১৫ আগস্ট রাজশাহীর পবায় মিনারুল নামে এক ব্যক্তি স্ত্রী, ছেলে ও শিশুকন্যাকে হত্যার পর চিরকুট লিখে আত্মহত্যা করেন। ১৬ আগস্ট শামসুদ্দিন নামে এক ব্যক্তি একই কারণে আত্মহত্যা করেন। ১৮ আগস্ট মোহনপুরে কিস্তির টাকা না দিতে পারায় আকবরকে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

রাজশাহী বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টা নামের একটি মানবাধিকার সংগঠনের পরিচালক মো. ফয়েজউল্লাহ বলেন, ‘এনজিওগুলো সুদের হার ১৪ শতাংশ দাবি করলেও বাস্তবে আদায় করে প্রায় ৩০ শতাংশ। এ কারণে ঋণের জালে ফেঁসে গিয়ে অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন।’

 

এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক মুনিরা খাতুন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মহিনুল হাসান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম জানিয়েছেন, গ্রাহকের টাকা নিয়ে লাপাত্তা হওয়া এনজিওর রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হবে। পাশাপাশি অভিযোগ পেলে নেয়া হবে আইনি ব্যবস্থা।

 

সমাজসেবা অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহীতে মোট নিবন্ধিত এনজিও রয়েছে এক হাজার ২০০টির মতো। এর মধ্যে নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৭৮৯টি। তবে অনিবন্ধিত এনজিওর সংখ্যা সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন