বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) প্রকাশিত যশোর শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল থেকে এ তথ্য জানা গেছে। লিতুন জিরার এই সাফল্যে খুশি তার বাবা-মাসহ শিক্ষকরা।
লিতুন জিরা উপজেলার শেখপাড়া খানপুর গ্রামের কলেজ শিক্ষক হাবিবুর রহমান ও গৃহিণী জাহানারা বেগমের মেয়ে। ২০০৮ সালের ২৫ জুন হাত-পা বিহীন জন্ম হয় তার। শুরুতে মেয়ের শারীরিক গড়ন দেখে বাবা-মাসহ স্বজনরা হতাশ হলেও অদম্য মেধার কারণে সেই মেয়েটি এখন পরিবারের আশার আলো।
২০১৪ সালে স্থানীয় খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে লিতুন জিরার স্কুল জীবন শুরু হয়। প্রথম দিকে বাবা মায়ের কোলে চড়ে স্কুলে যেত সে। পরে হুইল চেয়ারে চড়ে পরিবারের সাহায্যে স্কুলে যাওয়া শুরু করে লিতুন জিরা। পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি লাভের পর গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় লিতুন। সেখান থেকে অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি লাভের পর সে একই প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান বিভাগে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। সেখান থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধার সাফল্য দেখিয়েছে লিতুন।
লিতুন জিরা বলে, ‘আমি আশানুরূপ ফল পেয়েছি। আমি আল্লাহর কাজে কৃতজ্ঞ। মা-বাবা ও শিক্ষকদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমি পরিবারের বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। লেখাপড়া শিখে ডাক্তার হয়ে দেশ সেবায় অংশ নিতে চাই।’
আরও পড়ুন: এসএসসি: ৫২ বছর বয়সী দুলু ইংরেজিতে ফেল, পরীক্ষা দেবেন আবারও!
লিতুন জিরার বাবা কলেজ শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মেয়ের সাফল্যে আমরা খুব খুশি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। তিনি মেয়ের ও আমাদের কষ্ট সার্থক করেছেন। শুরু থেকে প্রতি ক্লাসে মেয়ে প্রথম হয়েছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি রচনাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সে স্বর্ণপদকসহ জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে ছয়টি পুরস্কারও অর্জন করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মেয়ে আমার বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায়। আমার কাছে সে বোঝা নয় বরং তাকে নিয়ে আমি অহংকার করি। কারণ মেয়ের কৃতিত্বের জন্য দেশের মানুষ আমাকে চিনেছে।’
লিতুন জিরার প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, ‘লিতুন জিরা অসম্ভব মেধাবী। পড়াশোনার পাশাপাশি কো-কারিকুলার এক্টিভিটিসে সে খুবই দক্ষ। হাত-পা বিহীন চোয়াল ও বাহুতে কলম চেপে লিখে যে মেধার কৃতিত্ব দেখানো যায় তার দৃষ্টান্ত লিতুন জিরা। এবার এসএসসিতে সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। আশা করি সামনের ধাপগুলোতে সে মেধার একই স্বাক্ষর রাখবে। আমরা তার সাফল্যে খুব খুশি।’
]]>