চোখের সামনে পাথর লুট, প্রশাসন কতটা দায়বদ্ধ?

৬ দিন আগে
সর্বদলীয় পাথর লুটকাণ্ড প্রশাসনের দলগত গাফিলতি ও ব্যর্থতার ফল ছিল বলে মনে করেন পরিবেশবিদরা। তাদের মতে, সিলেটের পাথর ও পরিবেশ রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে প্রায় অর্ধডজন মন্ত্রণালয় কোনো না কোনোভাবে দায়বদ্ধ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো নিজেদের দায়িত্ব পালন করলে কখনোই চোখের সামনে দিনে দুপুরে এভাবে পাথর লুট করা সম্ভব হতো না। যদিও তৎকালীন জেলা প্রশাসক দাবি করেন, লুটের সময়ও চলমান ছিল আইনি প্রক্রিয়া।

গ্রামগঞ্জের ঝোপঝাড়েই মিলছে মূল্যবান সাদাপাথর। প্রশ্ন ওঠে, ভোলাগঞ্জ থেকে কীভাবে দূরদূরান্তের গ্রামেগঞ্জে পৌঁছেছে এটি? সবকিছু কি এতোটাই সহজ? প্রথমে শ্রমিক দিয়ে পাথর সংগ্রহ, তারপর নৌকায় ধলাই নদী পেরোনো, পরে ট্রাকে তুলে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া-সবকিছুই হয়েছে প্রকাশ্যে, মাসের পর মাস ধরে, প্রশাসনের নাকের ডগায়।

 

মূল্যবান এ পাথর আর পরিবেশ রক্ষায় কার কী দায়?

 

মূল্যবান এই খনিজ সম্পদের অভিভাবক বা মূল কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়। শুধু জ্বালানি মন্ত্রণালয়ই নয়, পাহাড় ঘেরা পাথরের রাজ্য হিসেবে পরিচিত ভোলাগঞ্জ সাদাপাথরের মতো জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান দেখভালের দায়িত্ব বর্তায় পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ওপর।

 

অন্যদিকে প্রকৃতির অপার মায়ায় মোড়ানো ভোলাগঞ্জের সৌন্দর্যহানী ঠেকাতে কী করলো পরিবেশ মন্ত্রণালয়, সামনে আসছে এমন প্রশ্নও। বলা হচ্ছে, এ প্রকাশ্য হরিলুট হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একেবারে সামনে থেকে, অথচ তা আটকাতে ছিল না দৃশ্যমান তৎপরতা। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধেও। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর দলগত ব্যর্থতা, কিছু ক্ষেত্রে আবার মৌন সম্মতিও সুযোগ করে দিয়েছে সর্বদলীয় লুটপাটের।

 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক কাসমির রেজা বলেন, দিনের আলোয় মানুষের চোখের সামনে লুটপাট হয়েছে। দায়বদ্ধতার ঘাটতি ছিল পুরো প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। পর্যটন, জ্বালানি, খনিজসম্পদ ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ও এই সম্পদ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। তারা কেউ দায় এড়াতে পারে না।

 

আরও পড়ুন: কাদের থাবায় দীর্ঘদিন লুট হলো সাদাপাথর?

 

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, অনেক মানুষ মিলেই পাথর সরিয়েছে। পাথর কেয়ারি ও সিলিকা বালু খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। স্থানীয় প্রশাসনের কাজ হলো এগুলো তত্ত্বাবধান করা। তাই পাথর রক্ষা করতে না পারার দায় স্থানীয় প্রশাসনকে নিতে হবে।

 

যখন লুটপাট চলছিল, তখন দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসক অবশ্য দায় এড়িয়েছেন। তবে পাথরকাণ্ডের পর তাকে সিলেট থেকে প্রত্যাহার করেছে সরকার। সদ্য প্রত্যাহার হওয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ জানান, অবৈধ কার্যক্রম চলায় আইনি প্রক্রিয়া চলছিল।

 

এদিকে, দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ ও নানা মহলের সমালোচনার পর প্রশাসন ভোলাগঞ্জে পাথর প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু করেছে। তবে কাজের চলছে কচ্ছপগতিতে। শেষ পর্যন্ত তা কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা এখন দেখার বিষয়। অন্যদিকে পাথরকাণ্ডের আলোচনা থামলে নতুন লুটপাটের নতুন অধ্যায় শুরু হয় কিনা, সেই শঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। তাই অব্যাহত নজরদারির দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ অধিকার কর্মীরা।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন