চীন এবং পাকিস্তান ক্রমবর্ধমান হামলার পটভূমিতে সন্ত্রাসবিরোধী মহড়া শুরু করতে যাচ্ছে

১৭ ঘন্টা আগে
চীন মঙ্গলবার জানিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী ও ঘনিষ্ঠ মিত্রের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদার করার উদ্দেশে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী সামরিক মহড়ায় অংশ নিতে যাচ্ছে। যা পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথম সামরিক মহড়া। এ মাসের শেষের দিকে চীন পাকিস্তানে সেনা পাঠাবে। এই ঘোষণাটি দেওয়া হয়, যখন বেইজিং-এর পক্ষ থেকে ইসলামাবাদকে চাপ দেওয়া হচ্ছে যেন তারা পাকিস্তানে কাজ করা হাজার হাজার চীনা নাগরিককে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা থেকে রক্ষার জন্য চীনের নিরাপত্তা কর্মীদের অনুমতি দেয়। একই সঙ্গে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে যার জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) দোষারোপ করা হচ্ছে বা তারা নিজেরাই দায়িত্ব স্বীকার করছে। চীনা রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানিয়েছে, "যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ওয়ারিয়র- ৮ মহড়া নভেম্বর মাসের শেষের দিকে শুরু হবে এবং তা ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলবে," যা পাকিস্তান আয়োজন করবে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই মহড়ায় চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের সেনারা অংশ নেবে। “উভয় পক্ষ নানা পর্যায়ের এবং বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে এবং সেনারা প্রকৃত যুদ্ধ প্রক্রিয়ার প্রশিক্ষণও নেবে," রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। চীন ও পাকিস্তান ২০১৯ সালে শেষ সন্ত্রাসবিরোধী যৌথ সামরিক মহড়া চালিয়েছিল। গত মাসে পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের বন্দর শহর করাচীর বিমান বন্দরের বাইরে আত্মঘাতী এক গাড়ীবোমা বিস্ফোরণে দুই চীনা ইঞ্জিনিয়ার নিহত হয়। ঐ দুই ব্যক্তি ছুটি শেষে থাইল্যান্ড থেকে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য ফিরে এসেছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের গ্লোবাল বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনেশিয়েটিভের আয়তায় চায়না-পাকিস্তান ইকোনোমিক করিডোর প্রকল্পে কাজ করতেন। মার্চ মাসে পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে এক আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলায় পাঁচ চীনা শ্রমিক ও তাদের স্থানীয় এক চালক নিহত হন। চীনা নাগরিকদের বারবার লক্ষ্য করে আক্রমণ করার ফলে চীন ক্ষুব্ধ এবং পাকিস্তানে চীনা নাগরিকদের নিরাপদ রাখতে তারা একটি যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার কাঠামো তৈরির বিষয়ে আলোচনার জন্য পাকিস্তানকে অনুরোধ করেছে। পাকিস্তান সরকার চীনের কথিত কূটনৈতিক চাপকে “মিডিয়ার জল্পনা” এবং বেইজিংয়ের সাথে ইসলামাবাদের সম্পর্ক নিয়ে "বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা" বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। “সন্ত্রাসবাদ দমন ও পাকিস্তানে চীনা নাগরিকদের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে জোরালো সংলাপ ও সহযোগিতা রয়েছে," বৃহস্পতিবার, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মুমতাজ বালুচ তার সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন। "পাকিস্তানে চীনা নাগরিক, প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য আমরা আমাদের চীনা ভাইদের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব," তিনি বলেন। বালুচ আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতা অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা সফল হবে না এবং এই দুটি দেশ " কোন প্রচেষ্টা বা গল্পকে পাকিস্তান-চীনের কৌশলগত অংশীদারিত্বকে অন্য পথে চালিত করতে দেবে না।" করাচিতে গাড়ি বোমা হামলার কয়েকদিন পর ইসলামাবাদে এক সেমিনারে চীনের রাষ্ট্রদূত জিয়াং জাইডং প্রকাশ্যে চীনা নাগরিকদের প্রতি হুমকি প্রতিরোধে পাকিস্তান সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। জিয়াং বলেন, “মাত্র ছয় মাসের মাঝে আমাদের উপরে দুইবার হামলা গ্রহণযোগ্য নয়।” তিনি ইসলামাবাদকে "এই ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যেন পুনরায় না ঘটে তা রোধে কার্যকর প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করা, ধরা ও শাস্তি নিশ্চিত করার" আহ্বান জানান। পাকিস্তানে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য পাকিস্তান প্রত্যাখ্যান করে বলেছে এটা হচ্ছে “বিভ্রান্তিকর” এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত কূটনৈতিক রীতিনীতির পরিপন্থী। পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া ছিল নজিরবিহীন এবং ইসলামাবাদকে লক্ষ্য করে জিয়াং-এর প্রকাশ্য অভিযোগে চীনা নাগরিকদের উপর আক্রমণের কারণে উদ্ভূত উদ্বেগগুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছ। গত পাঁচ বছরে চীনের নাগরিকদের উপর এই ধরণের আক্রমণে অন্তত ২১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। পাকিস্তানি ও চীনা সেনাদের মধ্যে যৌথ মহড়া এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন পাকিস্তানে নিরাপত্তা বাহিনী ও বেসামরিক নাগরিকদের উপর প্রাণঘাতী জঙ্গি হামলার ঘটনা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব হামলা করা হচ্ছে প্রতিবেশী আফগানিস্তানে অবস্থিত “টিটিপি’র আশ্রয়স্থল” থেকে। তবে আফগানিস্তানের ইসলামপন্থী তালেবান নেতারা এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। আফগান বিষয়ক চীনের বিশেষ দূত ইউ জিয়াওইয়ং এই সপ্তাহে ইসলামাবাদ সফর করেন। ঐ সময় পাকিস্তানি কর্মকর্তারা তাকে আফগানিস্তানে টিটিপি’র উপস্থিতি এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য এটা যে হুমকি স্বরূপ তার বহুবিধ প্রমাণ তার সঙ্গে শেয়ার করেন। সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্টগুলো নিয়ে ইসলামাবাদ বা বেইজিং কোনো পক্ষই মন্তব্য করেনি। বৈঠকের পর পাকিস্তানের একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আলোচনাটি মূলত আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে হয়েছে এবং উভয় পক্ষই “শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল আফগানিস্তানের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা” পুনর্ব্যক্ত করেছে।
সম্পূর্ণ পড়ুন