চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে জিলহজের প্রথম দশকের রোজা

১ সপ্তাহে আগে
হজরত আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ এমন কোন দিন নেই যে দিনগুলোর (নফল) ইবাদাত আল্লাহ্ তা'আলার নিকট যিলহজ মাসের দশ দিনের ইবাদাত হতে বেশী প্রিয়। এই দশ দিনের প্রতিটি রোজা এক বছরের রোজার সমান এবং এর প্রতিটি রাতের ইবাদাত কদরের রাতের ইবাদাতের সমান। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ৭৫৮)

জিলহজ মাসের প্রথম দশকে রোজা রাখার অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন একটি হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে-


عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ، مَا مِنْ أَيَّامٍ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ أَنْ يُتَعَبَّدَ لَهُ فِيهَا مِنْ عَشْرِ ذِي الْحِجَّةِ يَعْدِلُ صِيَامُ كُلِّ يَوْمٍ مِنْهَا بِصِيَامِ سَنَةٍ وَقِيَامُ كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْهَا بِقِيَامِ لَيْلَةِ الْقَدْرِ

 

মুহাদ্দিসগনের বর্ণনা মতে যদিও এ হাদিসের সনদে দুর্বলতা রয়েছে তথাপি ফজিলতের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদিস গ্রহণযোগ্য। তাই জিলহজের প্রথম দশকে দিনের বেলা রোজা রাখা এবং রাতের বেলা ইবাদত বন্দেগীর মাঝে কাটানোর চেষ্টা করা অনেক বড় সৌভাগ্যের কাজ।

 

হার্টের সমস্যা এবং রোজা

 

কোরবানির ঈদের পূর্বের দিনগুলোতে রোজা রাখা ফরজ নয়; তবে মুস্তাহাব। কিন্তু এই রোজার উপকারিতা শুধু পরকালের সাথেই সম্পৃক্ত নয়; বরং ইহকালেও রয়েছে এর অনেক উপকারিতা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামত অনুসারে সারা বছরের তুলনায় কোরবানির ঈদের পরে হার্টের রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। মাত্রাতিরিক্ত গরুর গোশত আহারের ফলে অনেকেই হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন। একারণে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে তার আগে রোজা রাখা হার্টের জন্য উপকারী। কারণ রোজার মাঝে হার্টের সমস্যার নিরাময় রয়েছে।

 

আরও পড়ুন: পশুর দাঁত নাকি বয়স দেখে কোরবানি করবেন?

 

আহারের সময় আল্লাহর নাম নেওয়া বরকত

 

প্রকৃতপক্ষে, কোরবানির পশুর গোশতে আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ বরকত রয়েছে। এজন্যই আমাদের সমাজে একটি কথা প্রসিদ্ধ—কোরবানির গোশত খেলে সহজে কোনো সমস্যা হয় না। আসলে, এই নিরাপত্তা ও হেফাজত একমাত্র আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেই আসে।


তবে দুঃখজনকভাবে, আমরা অনেক সময় খাওয়ার আগে আল্লাহর নাম নিতে ভুলে যাই—‘বিসমিল্লাহ’ না পড়েই খাদ্য গ্রহণ করি। এই ধরনের অবহেলা আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই আল্লাহ তাআলা মাঝে মাঝে আমাদেরকে বিভিন্ন রোগ বা কষ্টের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন, যেন আমরা সচেতন হই এবং প্রতিটি কাজের শুরুতেই তাঁর নাম স্মরণ করি।
তো যাই হোক কোরবানির পূর্বে জিলহজের এ রোজার মধ্যে আমাদের জন্য পরকালীন অবারিত কল্যাণের পাশাপাশি ইহকালীন অনেক উপকারিতাও রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে জীবন ধ্বংসকারী হার্টের সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি।

 

রোজা শরীরে সক্ষমতা সৃষ্টি করে

 

জিলহজের প্রথম দশকের রোজাগুলোর মাধ্যমে শরীরে প্রোটিন এবং শক্তি ধারণের এক ধরনের ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। যার কারনে শরীর আল্লাহর রহমতে কোরবানির গোশতের অতিরিক্ত প্রোটিন এবং শক্তির চাপ সহ্য করে নিতে সক্ষম হয়।

 

দৈনন্দিন কতটুকু প্রোটিন প্রয়োজন?

 

একজন মানুষের আদর্শ ওজন ৫০ কেজি। তিনি যদি সুস্থ থাকেন তাহলে প্রতিদিন তার  জন্য ৫০ গ্রামের মতো প্রোটিন প্রয়োজন। তবে যদি তার কিডনি জটিলতা থাকে তাহলে তিনি প্রতিদিন ২৫ গ্রাম প্রোটিন খেতে পারেন। এর বেশি খাওয়াটা তার জন্য নিরাপদ নয়।

 

তবে যাদের ওজন ৫০ কেজির চাইতে কম তাদের ওজন অনুপাতে প্রোটিন একটু বেশি খাওয়া প্রয়োজন। আর যাদের ওজন ৫০ কেজির বেশি তাদের জন্য একটু কম প্রোটিন খাওয়া জরুরি।
তবে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে কারো জন্যই প্রতিদিন ৭০ গ্রামের বেশি এবং সপ্তাহে ৫০০ গ্রামের বেশি প্রোটিন খাওয়া উচিত না।

 

কোরবানিতে আমাদের শরীরে কি পরিমান প্রোটিন তৈরি হয়? এবার আসুন আমরা হিসাব করে দেখি কোরবানির মৌসুমে আমরা কি পরিমান গোশত খেয়ে থাকি। এবং এর ফলে আমাদের শরীরে কি পরিমান প্রোটিন তৈরি হয়?

 

সবচেয়ে বেশি প্রোটিন গরুর গোশতে রয়েছে। গরুর গোশতের প্রতি ১০০ গ্রামে ২৬ গ্রাম প্রোটিন এবং ২ গ্রাম ফ্যাট থাকে। তাহলে ৩০০ গ্রাম গোশতে ৭৮ গ্রাম প্রোটিন এবং ৬ গ্রাম ফ্যাট থাকবে। তো চিন্তা করে দেখা যাক, আমরা খেতে বসলে কি মাত্র ৩০০ গ্রাম খাই, না আরো অনেক বেশি খেয়ে থাকি? 

 

আরও পড়ুন: কোরবানির আগে চুল-নখ না কাটার বিষয়ে কী বলে ইসলাম?

 


কোরবানির সময় তো আমরা শুধু গোশত খাওয়ার উপর সীমাবদ্ধ থাকিনা।আরো কত কিছু খেয়ে থাকি। তার মধ্যেও প্রোটিন রয়েছে। তারপরও যদি ধরি, আমরা প্রত্যেক বেলায় ৩০০ গ্রাম গোস্ত খেয়ে থাকি তাহলে তিন বেলার গোশতে অন্ততপক্ষে ২৩৪ গ্রাম প্রোটিন এবং ১৮ গ্রাম ফ্যাট তৈরি হবে। যা দৈনন্দিন প্রোটিন এর প্রয়োজনীয়তার তুলনায় তিনগুণ বেশি।

 

প্রয়োজনের তুলনায় অধিক প্রোটিন এবং ফ্যাট যা আমাদের জন্য সত্যিই ক্ষতিকর। কিন্তু আল্লাহর অপরিসীম দয়া ও ভালোবাসার কারণে আমরা নানাবিধ ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকি। এখন যদি আমরা যিলহজ মাসের প্রথম দশকের ৯দিন রোজা রাখি তাহলে এই ক্ষতি থেকে মুক্তি পাওয়াটা আরো অনেক সহজ হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এই দশকে বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগী তথা দিনের বেলা রোজা এবং রাতের বেলায় ইবাদত করার তৌফিক দান করেন, আমিন।

 

লেখক, শিক্ষক, জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ ঢাকা, খতিব, আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ, পরিচালক, দাওয়াতুস সুন্নাহ বাংলাদেশ

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন