উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টার দিকে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা রাধারানী মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আতাউর রহমান বুকে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসে। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক সাবরিনা মুসরাত জাহান মৌ (৩০) ওই রোগীকে হৃদরোগে আক্রান্ত হিসেবে চিকিৎসা সেবা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। এরপর তিনি অন্য রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত হন। এ সময় সেখানে রোগী আতাউর রহমানের ছেলে তাহমিদ সরকার তুর্য বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তারাগঞ্জের ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে আরও চার পাঁচজনসহ চিকিৎসক মৌকে অকথ্য ভাষা গালিগালাজ করেন।
চিকিৎসকের শরীরে আঘাত করে। এ ঘটনা চিকিৎসক সাবরিনা মুসরাত জাহান মৌ তুর্যসহ অজ্ঞাতনামা চার পাঁচজনের বিরুদ্ধে শুক্রবার রাতে তারাগঞ্জ থানায় অভিযোগ দেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা।
তাহমিদ সরকার তুর্য বলেন, আমার বাবা হাসপাতালে ব্যথায় কাতরাচ্ছিল। ওই চিকিৎসককে বারবার দেখার জন্য অনুরোধ করছিলাম। তিনি না শুনে উল্টো আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে একটু কথাকাটাকাটি হয়েছে।
রোববার (১৩ এপ্রিল) সকাল ৯টায় থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বহির্বিভাগে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ। চিকিৎসকদের কক্ষে তালা ঝুলছে। হাসপাতাল চত্বর বহির্বিভাগের সামনে ও বারান্দায় রোগীদের জটলা। অনেকে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ভোলায় নিরাপত্তার দাবিতে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা ঝাকুয়াপাড়ার নুর বানু বলেন, 'জীবন বাঁচার জন্যে হাসপাতাল আসনো, তা এটা সউগ বন্ধ। এখন কারতে চিকিৎসা নেমো, কি করমো বুঝির পাওছি না। হামার জীবন নিয়া টানাটানি উঠছে।'
দুই ঘণ্টা অপেক্ষার পর চিকিৎসক দেখাতে না পেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন জগদীশপুর গ্রামের বৃদ্ধা মজিফা বেগম। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, বুকোত ব্যথা। ব্যথাতে সারারাত ঘুমার পাও নাই। সকাল ৯টায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিবার আলছুং। কিন্তু দুই ঘণ্টা বসি থাকি কোনো চিকিৎসা পানু না। বাড়ি ফেরত যাওছু।
জানতে চাইলে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার অর্নিবান মল্লিক বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত চিকিৎসককে হামলাকারী গ্রেফতার হবে না। ততক্ষণ পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।
তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। চিকিৎসকদের পুলিশি প্রটেকশন দেয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।