পৌরসভার আয়তন বাড়লেও নতুন করে ১ মিটার পাইপ লাইন নেটওয়ার্কও স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। নিয়মিত বিল পরিশোধ করলেও ঠিকমত পানি না পাওয়ায় পুরাতন গ্রাহকরাও পড়েছে পানির সংকটে।
পানি সরবরাহ কর্তৃপক্ষ জানায়, বিপুল চাহিদা থাকলেও সার্ফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের বেহাল দশার কারণে তা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ৩টি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ও ৬ টি ওভার হেড ট্যাংক থাকলেও দিন দিন সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। প্রথম শ্রেণীর পৌরসভাটিতে বর্তমানে পানির গ্রাহক রয়েছে ১০ হাজার ১৪৯ জন। ৩০.৭০ বর্গ কিলোমিটারের এ পৌরসভাটিতে প্রতিদিন পানির চাহিদা রয়েছে ৬০ মিলিয়ন লিটার। কিন্তু সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে মাত্র ১৫ মিলিয়ন লিটার। ১৩.৮২ বর্গ কিলোমিটারের পৌরসভাটিকে ২০২১ সালে আরো বর্ধিত করা হয় ১৬.৮৮ বর্গ কিলোমিটার। পরিধি বাড়লেও ৪ বছরে নতুন কোন লাইন নেটওয়ার্কও স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। ৯টি হাইলিফট পাম্পের মধ্যে ১টি নষ্ট দীর্ঘদিন ধরে। বাকী পাম্পগুলোরও করুণ দশা। প্রায়শয়ই ঘটছে ছোট ত্রুটি। এতে পুরাতন গ্রাহকদেরকেই চাহিদা মতো পানি সরবরাহ করা সম্ভভ হচ্ছে না। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহক কর্তৃপক্ষ উভয়েই।
পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা ৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে পানি পাচ্ছিনা। নিয়মিত পানির বিল পরিষোধ করে যাচ্ছি। এখন একটু বন্যার পানি এসেছে, তাই গোসল ও ধোয়া মোছার জন্য পাইপের মাধ্যমে মটর বসিয়ে বিল থেকে পানি উঠিয়ে দৈনন্দিন চাহিদা মিটাচ্ছি।’
পৌরসভার অপর বাসিন্দা ধুমিতা সরকার চম্পা বলেন, ‘জলের সংকটের কারণে খাওয়া ও রান্নার জন্য বোতলের পানি কিনতে হচ্ছে। আবার পৌরসভার জলের বিলও দিতে হচ্ছে। দুই দিক দিয়েই খরচ হওয়ায় স্বল্প আয় দিয়ে পরিবার সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিলের পানিতে দুর্গন্ধ থাকার পরেও বাধ্য হয়ে ব্যবহার করতে হচ্ছে। সমস্যা সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
পানির সংযোগ না পেয়ে আক্ষেপ করে আমেনা বেগম বলেন, প্রায় তিন বছর হয়েছে নতুন পৌরসভার আওতায় পড়েছি। এত বছর হয়ে গেল এখন পর্যন্ত পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানির সংযোগ পেলাম না। তাহলে পৌরসভায় নাগরিক হয়ে আমাদের কী লাভ হলো।’
আরও পড়ুন: চীন থেকে ফিরেই গ্রেফতার গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান
পৌরসভার বাসিন্দা রুবেল সরদার বলেন, ‘পানির এত সংকট পৌরসভার ভিতরের বাড়িঘর ছেড়ে মনে হয় নদীর ধারে গিয়ে আমাদের বসবাস করতে হবে। পানি ছাড়া জীবন কী চলে?’
পৌর পানি সরবরাহ শাখার ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী সরুপ বোস বলেন, ‘পৌরসভা ১৫ টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এখানে পানির চাহিদা রয়েছে প্রতিদিন ৬০ মিলিয়ন লিটার। পানি সরবরাহ করতে পারি প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ মিলিয়ন লিটার। শোধনাগারের সক্ষমতা অনুযায়ী আমরা ২৪ ঘন্টা পানি সরবরাহ করি। চাহিদার তুলনায় পানি শোধনের সক্ষমতা না থাকায় মুলত এই পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নতুন ওয়ার্ডে নতুন কোন পাইপ লাইন বসানো হয়নি কারন পুরাতন লাইনগুলোতে পানি দেওয়ার যে শোধনাগার রয়েছে তার মেয়াদ দীর্ঘ বছর হয়ে যাওয়ায় সেটির সক্ষমতা কমে গেছে। নতুন শোধনাগার তৈরি না হলে বর্ধিত এলাকাগুলোতে পাইপ লাইন সংযোগ স্থাপন করে কোন ফলাফল পাওয়া যাবে না।
গোপালগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, পানির যে সংকট রয়েছে সেটি নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে এই সমস্যা সমাধানের জন্য একটি প্রকল্প তৈরি করে ডিপিপি আকারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আমরা আশাবাদি দ্রুতই প্রকল্পটি অনুমোদন পাবে।’