তিনি বলেন, সরকার কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের জন্য বিনামূল্যে লবণ সরবরাহসহ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু বাজার ব্যবস্থাপনার মূল সংকট চিহ্নিত করে কার্যকর সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। মূল্য নির্ধারণ করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। বরং গ্রাম, মফস্বল ও শহরের স্থানভেদে গরুর চামড়া ২০০–৮০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় এবং কোথাও কোথাও সরাসরি ক্রেতার অভাবে কোরবানি পশুর চামড়া নদী-নালা ও রাজপথে ফেলে রাখার ঘটনাও ঘটেছে— যা জাতীয় দৈনিক, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও অনলাইন মাধ্যমগুলোতে উঠে এসেছে।
ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানী ঢাকায় চামড়া সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত ভুল ছিলো উল্লেখ করেন মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী। এর ফলে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়তে পারত, যা সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় আনা উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি।
মাওলানা রাব্বানী মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য তুলে ধরে জানান, এবারের ঈদুল আযহায় ৯১ লাখের বেশি পশু কোরবানি হয়েছে। অথচ শিল্প উপদেষ্টার তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত মাত্র ৩.৭৮ লাখ পিস চামড়া ট্যানারিতে গেছে এবং আরও ৭.৫ লাখ পিস ঢাকায় আছে। নাটোর মোকামে ৫ লাখ গরুর ও ১৫ লাখ ছাগলের চামড়া কেনাবেচার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও সব মিলিয়ে বিপুল পরিমাণ চামড়া নষ্ট হওয়ার শঙ্কা থেকে যায়— যা ব্যবস্থাপনার ঘাটতির প্রমাণ।
আরও পড়ুন: এবার পশু কোরবানি কমেছে ১৩ লাখ, কারণ কী?
তিনি বলেন, ‘সাভার চামড়া শিল্পনগরীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (CETP) এখনো আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে না পারায় বাংলাদেশের অধিকাংশ ট্যানারি এলডব্লিউজি (Leather Working Group) সনদ পাচ্ছে না। ফলে ইউরোপ, আমেরিকা ও জাপানে চামড়া রপ্তানির সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে। যেখানে ভারতে ২৪৮টি, পাকিস্তানে ৪১টি এবং থাইল্যান্ডে ২২টি প্রতিষ্ঠান এই সনদ পেয়েছে, সেখানে বাংলাদেশে অগ্রগতি নেই বললেই চলে।’
ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানিতে একচেটিয়া একটি সিন্ডিকেট বাধা সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ‘তাদের উদ্দেশ্য হলো দেশে কাঁচা চামড়ার দাম কমিয়ে রাখা, যাতে তারা পানির দামে কিনে লাভবান হতে পারে।’ এই সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে সরকারের এখনই জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান তিনি।
আরও পড়ুন: চামড়ার মূল্য কমানোতে দায়ী অসাধু ব্যবসায়ী ও কিছু সাংবাদিক: বাণিজ্য উপদেষ্টা
এ অবস্থায় তিনি সরকারের প্রতি চারটি সুস্পষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন:
১. নীতিগত সহায়তা ও প্রণোদনা: ট্যানারিগুলোকে এলডব্লিউজি সার্টিফিকেশন অর্জনে কারিগরি সহায়তা, অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রণোদনা প্রদান।
২. CETP আধুনিকায়ন: আন্তর্জাতিক মানের পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা।
৩. আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব: ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ADB, বিশ্বব্যাংক ও জাপানের সহায়তায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা।
৪. জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন: এলডব্লিউজি সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়ার তদারকি ও সমন্বয়ের জন্য একটি কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্স গঠন।
]]>