নিষিদ্ধ সংগঠনের এ নেতার নিয়োগকে কেন্দ্র করে বইছে সমালোচনার ঝড়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে সর্বত্রই প্রশ্ন; একজন পদধারী নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা কিভাবে এখনো এই পদে বহাল রয়েছেন?
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাহবুবুর রহমান বাবু নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের হাজীগঞ্জ উপজেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চাঁদপুর বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের জেলা সাধারণ সম্পাদক। ’২৪- এর জুলাই আন্দোলনে ছাত্রলীগের হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এই নিয়োগের পেছনে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার এক জামায়াত নেতার আত্মীয়তার সূত্র রয়েছে। জামায়াতের ওই নেতা এবং জেলা পর্যায়ের একজন শীর্ষ নেতার সুপারিশও রয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের দলীয় পদে থাকা সত্ত্বেও গত ১৭ মার্চ চাঁবিপ্রবি ভিসি তাকে আগের তারিখ দেখিয়ে (১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ) এই নিয়োগ দেন।
আরও পড়ুন: মৌলভীবাজারে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেফতার
অভিযোগ রয়েছে, মাহবুবুর রহমান বাবু আওয়ামী লীগের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসিকে ব্যবহার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বর্তমানে জামায়াত নেতাদের আত্মীয় পরিচয়ে এবং সুপারিশে ভিসিকে ম্যানেজ করে তিনি তার নিয়োগ বৈধ করে নেন।
এই পদে আবেদন করা একাধিক চাকরিপ্রার্থীর অভিযোগ, ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুর রহমান বাবুর নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় চলে এবং তার কাছে জিম্মি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তার এই ক্ষমতা ও শক্তির উৎস হাজীগঞ্জ উপজেলার এক জামায়াত নেতার আত্মীয়তার সূত্র। শুধু তাই নয়, জামায়াতের ওই নেতা এবং জেলা পর্যায়ের একজন শীর্ষ নেতার সুপারিশ থাকায় সপদে বহাল রয়েছেন বাবু।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বাবু বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কেউ আপনাকে ভুল তথ্য দিচ্ছে।’
ছাত্রলীগের এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের পদে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন,
আমার ব্যাকগ্রাউন্ড মাদরাসার। এই ব্যাকগ্রাউন্ডে বিগত ১৫ বছরে কেউ চাকরি পেয়েছে কিনা তা আপনার কাছে প্রশ্ন রাখছি। জাতীয় ও স্থানীয় অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো কি সত্য নয়? এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুর রহমান বাবু বলেন, চাকরির জন্য অনেকেই তো বিভিন্ন পদ ব্যবহার করেছেন।
আরও পড়ুন: নেত্রকোনো জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার
বাবু সম্পর্কে জানতে চাইলে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. পেয়ার আহমেদ জানান, ‘তার নিয়োগ হয় (ছয় মাসের জন্য) সাবেক ভিসির সময়ে। বর্তমানে সে কর্মরত রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার যে অভিযোগ রয়েছে তার সত্যতা আমি পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনো সিন্ডিকেট গঠন হয়নি। সিন্ডিকেট গঠন হলে তার বিষয়ে পর্যালোচনা করা হবে এবং এর সত্যতা নিশ্চিত হলে সিন্ডিকেট যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’
জামায়াত নেতার আত্মীয়তার সূত্র এবং সুপারিশের বিষয়ে জানতে চাইলে ভিসি বলেন,
প্রথমে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি জামায়াতের একজন নেতা আমাকে মুঠোফোনে জানান। পরবর্তীকালে ওই একই নেতা ছাত্রলীগের সঙ্গে মাহবুবুর রহমান বাবুর সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি সত্য নয় বলে জানান।