করোনা মহামারি ও পবিত্র রমজানকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ৫ বছর পহেলা বৈশাখ উদযাপনের কোনো আয়োজন করা হয়নি। তাই এবছর জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে পালন করা হয়েছে নতুন বছরের প্রথম দিনটি। আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
উৎসব শুরু হয়েছে বৈশাখি শোভাযাত্রার মাধ্যমে। সকাল সাড়ে ১০ টায় বৈশাখি শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। নতুন বছরের রঙে রাঙানো ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, বিভিন্ন শিল্পকর্ম নিয়ে বৈশাখি শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। লাল সাদা রঙের পোষাকে পুরো পরিবেশই উৎসবমুখর হয়ে উঠেছিলো। স্মরণচত্বর থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়, যা শেষ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলায়। এছাড়াও দিনব্যাপী নানা ইভেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। এগুলো হলো পুতুল নাচ, বলি খেলা, বৌচি খেলা, কাবাডি।
আরও পড়ুন: চবির সমাবর্তনে অংশ নিতে সাড়ে ২২ হাজার আবেদন
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তুলতে এই সকল খেলার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যেখানে অংশ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই। এছাড়াও নাগরদোলা, নানা রকমের খাবার আর জিনিসপত্রের স্টল এখানে বৈশাখের আমেজকে যেন আরও পরিপূর্ণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে স্ব স্ব উদ্যোগে দিনটিকে বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতিও দেখা গিয়েছে। শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরাই নয়, এখানে ঘুরতে এসেছেন অন্যান্য অতিথিরাও। বিকেলে ছিলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সংগীত অনুষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস জুড়ে বৈশাখি মেলার আমেজে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল উৎসব। বিকেল হতেই মানুষের ভিড় আরও বেশি বাড়তে শুরু করে।
১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ বলেন, ‘৫ বছর আমরা এই উৎসব পাইনি। এবারই প্রথম। বন্ধু-বান্ধব সবাইকে নিয়ে বেশ ভালো লাগছে।’
একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সীমা আক্তার বলেন, ‘আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই তখন করোনা মহামারীর কারণে সব বন্ধ হয়ে যায়। এরপরের চার বছর রমজানের বন্ধে সবাই বাড়ি চলে যায়। এবারই প্রথম আমরা এই উৎসবে অংশ নিতে পেরেছি।’
আরও পড়ুন: দেশের প্রথম ওশান স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন হচ্ছে চবিতে
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার বলেন, ‘আমরা বৈশাখি শোভাযাত্রা করেছি। কারণ মঙ্গল শোভাযাত্রার সাথে আমরা কিছুটা দ্বিমত পোষণ করছি। কারণ মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্ম হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। সেটাকে চালিয়ে দেওয়া হতো আবহমান কালের বাঙালি সংস্কৃতি। এটা আবহমান কালের বাঙালি সংস্কৃতি হতে পারে না। এগুলো সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। এটি সবার উৎসব। কোনো বিশেষ ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণির নয়। সবার মনে আনন্দ ছড়িয়ে যাক আমরা সে আশা করি।’
পহেলা বৈশাখ বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক গৌরবের প্রতীক। পুরাতন বছরের ক্লান্তি, গ্লানি ও দুঃখ ভুলে নতুন বছরকে বরণ করতে এখানে সবার একত্রিত হওয়া। নববর্ষ উদযাপনের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন প্রতিহত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে স্বদেশী সংস্কৃতি চর্চা ও এর বিকাশে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।