ঘোড়ার গাড়িতে প্রধান শিক্ষকের রাজকীয় বিদায়

২ দিন আগে
শেষ কর্মদিবসে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে অবসরে গেলেন পঞ্চগড়ের প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ বিষ্ণু প্রসাদ (বিপি) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. ছায়ফুল্লাহ। প্রিয় শিক্ষকের বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দিয়েছেন রাজকীয় সংবর্ধনা।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেলে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ব্যতিক্রমী আয়োজনে শিক্ষার্থী, সহকর্মী ও স্থানীয়দের ভালোবাসায় শিক্ষকতার শেষ কর্মদিবসে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে অবসরের যান প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক। এ দৃশ্য ছুঁয়ে যায় সবার হৃদয়।


জানা যায়, প্রিয় প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. ছায়ফুল্লাহর বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে বিদ্যালয়টির সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের আয়োজনে বিকেলে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিদায় ও সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। পরে লাল গালিচা মাড়িয়ে হেঁটে চলেন তিনি। এ সময় শেষ কর্মদিবসে প্রধান শিক্ষককে ফুল ছিটিয়ে সম্মান জানানো হয়। পরে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে শহরের পঞ্চগড়-তেতুঁলিয়া মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শহরের কায়েত পাড়া এলাকায় নিজ বাড়িতে পৌঁছান এ শিক্ষক।


এ সময় স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ঘোড়ার গাড়ির পেছনে পায়ে হেঁটে শ্রদ্ধা পদযাত্রা করে শিক্ষককে বাড়িতে পৌঁছে দেন। বিদায় ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মচারীসহ শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


আরও পড়ুন: ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহতরা পেলেন জেলা পরিষদের সংবর্ধনা


বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন জানান, স্যারের সৎ উপদেশগুলো আমাদের অনেকের জীবনে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। শিক্ষারমান আমাদের বিদ্যালয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। আমরা আরও কিছুদিন যদি তাকে পেতাম তাহলে হয়তোবা এই স্কুলটিকে বাংলাদেশের আরও সর্বোচ্চ জায়গায় নিয়ে যেতে পারতাম।


তিনি আরও জানান, তিনি অনেক ভালো ও উদার মনের মানুষ। শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ প্রিয় ছিলেন। কখনো রাগ বা ক্ষোভ দেখিনি। বাবার মতো শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছেন। আমার কর্মজীবনে এমন শিক্ষক পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি। তিনি এতো উদার মনের মানুষ, কোনো শিক্ষকের বিপদ হলে সঙ্গে সঙ্গে যেতেন এবং খোঁজ খবর নিতেন। অবসরজনিত কারণে তিনি বিদায় নিয়েছেন। এটি সবাইকে মানতেই হবে। আমরা তার দীর্ঘায়ু ও সুস্থতা কামনা করছি।


সদ্য সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. ছায়ফুল্লাহ বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৪ বছর শিক্ষকতা শেষে অবসর নিয়েছি। মহান এ পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পেরে আজ আমি সার্থক। আমার শিক্ষকতায় অনেক শিক্ষার্থীদের পেয়েছি। তাদের ভালোবাসা পেয়েছি, তাদের মনে স্থান পেয়েছি বলেই শেষ বিদায়ে তারা আমাকে অশ্রুসিক্ত জলে বিদায় দিয়েছেন। আমি সার্থক এমন শিক্ষার্থীদের পেয়ে।’


আরও পড়ুন: ১০০ হাফেজকে সংবর্ধনা দিলো ছাত্রশিবির


তিনি আরও বলেন, ‘আজকে শুধু আমার ফেয়ারওয়েল নয় শুধু শেষ কর্মদিবস। আমি মনে করি আমার ছেলেরা যে আমাকে ভালবাসে তা আমি আগে জানতাম। তারা আজকে আমাকে বিদায় দিয়েছে। অবসর জীবনে আমি শিক্ষকতা করে কাটাতে পারলে ভালো হতো। তবে কৃষিকাজসহ অন্যান্য কাজে বাকি সময় কাটাতে হবে।’


প্রধান শিক্ষক মো. ছায়ফুল্লাহ বলেন, ‘আমার শিক্ষকরা অনেক ভালো মনের মানুষ। তারা আমার এ প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনে সর্বত্র সহযোগিতা করেছেন। সেজন্য তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’


জানা গেছে, পঞ্চগড় জেলার প্রাচীনতম পঞ্চগড়ের প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ বিষ্ণু প্রসাদ (বিপি) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি।


এর আগে, ১৯৯১ সালের ২৫শে মে দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (ইসলাম ধর্ম) হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন। এরপর ১৯৯৪ সালে জুলাই মাসে পঞ্চগড় বিষ্ণু প্রসাদ (বিপি) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করেন। তারপর ২০১২ সালের ৭ মে পঞ্চগড় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি হন তিনি। অবসরজনিত কারণে ২৯ মে কর্মদিবসের সমাপ্তি ঘটে।
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন