গুম কমিশনে অভিযোগ দায়ের করলেন সমন্বয়ক ইব্রাহীম নিরব

৬ ঘন্টা আগে
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই সকালবেলা আজিমপুর থেকে সমন্বয়ক ইব্রাহীম নিরবকে অপহরণ–নির্যাতন বিষয়ে গুম কমিশনে বিস্তারিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার অভিযোগ ফাইল নম্বর ১৮৯৮। অভিযোগের বিষয়ে কমিশন কর্তৃপক্ষের দ্রুত তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে।

উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রকাশিত সমন্বয়ক তালিকার মধ্যে সর্বপ্রথম গুম করা হয় তৎকালীন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক ইব্রাহীম নিরবকে। পরিবারের নিরাপত্তা ইস্যু ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত হুমকি ধামকির কারণে এই খবরটি মিডিয়ায় অপ্রকাশিত রয়ে যায়।


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক ও কবি ইব্রাহীম নিরবকে লক্ষ্য করে সংঘটিত হামলা, পরিকল্পিত অপহরণ, গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় গুম সংক্রান্ত কমিশনে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন তিনি।


অভিযোগ গ্রহণের পর কমিশন কর্তৃপক্ষ জানান, আমাদের মেয়াদ যদিও শেষ পর্যায়ে তবুও আমরা দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে দোষী ও পরিকল্পনাকারীদের শনাক্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তির আশ্বাস ব্যক্ত করছি।


অভিযোগে নিরব উল্লেখ করেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার পর থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নিয়মিত হুমকি ও হয়রানি চালিয়ে আসছিল। তারা আমার সব ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে পুলিশ, র‍্যাব ও গোয়েন্দাদের কাছে সরবরাহ করে গ্রেফতারের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকে।


আরও পড়ুন: গুম কমিশনে নিখোঁজ ২০০ জনের তালিকা দিলো ইউভিইডি


১৮ জুলাই আজিমপুর চৌরাস্তায় তাকে বহনকারী রিকশা থামিয়ে ধারালো অস্ত্র, স্টিল পাইপ, রড, হকিস্টিক ও স্টাম্প দিয়ে প্রায় ২০ মিনিট পিটিয়ে অচেতন করা হয়। পরে সাদা পোশাকধারীরা চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেলে শুরু হয় আরও ভয়াবহ নির্যাতন।


তিনি জানান, মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করে অন্ধকার সেলে কয়েকদিন রেখে খাদ্য–পানীয় বঞ্চিত করে রাখা হয়। নির্যাতনের মাত্রা এতটাই তীব্র ছিল যে নখ উপড়ে ফেলা, পায়ে আঘাত, এবং যৌনাঙ্গে স্টিল পাইপ দিয়ে আঘাত করে তাকে স্থায়ীভাবে অক্ষম করার চেষ্টা করা হয়। নির্যাতনের পর তাকে একটি মিথ্যা মামলায় আসামি দেখিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয় এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা হয়।


বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে নিরব জানান, তিনি এখনও শারীরিক অসুস্থতা ও মানসিক ট্রমা থেকে পুরোপুরি সেরে উঠতে পারেননি; পরিবারও চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।


নিষিদ্ধঘোষিত লীগ সন্ত্রাসীরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভাবে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। সরকারের কাছে দাবি জানাই আমিসহ সব জুলাইযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।


তিনি বলেন, ‘আমাকে গুমের ঘটনায় আমি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও লালবাগ থানায় পৃথকভাবে দুইটি মামলা দায়ের করব। বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা নিয়ে আমার দীর্ঘদিনের শঙ্কা থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ট্রাইব্যুনালের কিছু পদক্ষেপ বিশেষ করে গুম-খুন-নির্যাতনের অভিযোগে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনা এবং দুই হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যার দায়ে পতিত স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় ন্যায়বিচারের প্রতি আমার আস্থা কিছুটা ফিরিয়ে দিয়েছে। নিরাপত্তাহীনতা ও ট্রমা কাটিয়ে আজ আমি নিজের ঘটনার ন্যায় বিচার দাবি করতে এসেছি।’


আরও পড়ুন: গুম কমিশনের দ্বিতীয় প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য


তবে আমার দাবি শুধু ব্যক্তিগত নয়; অতীতের গুম-নির্যাতনের শিকার সব ছাত্র-যুবকের জন্যও বিচার চাই। যারা এসব ঘটিয়েছে, এবং যারা পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় যুক্ত ছিল সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি গুম কমিশনের কাছে থাকা মামলাগুলোর সমাধান ও পরবর্তী প্রক্রিয়া তাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা জরুরি।


পাশাপাশি তিনি পরিকল্পিত অপহরণ, গুম, নির্যাতন ও মিথ্যা মামলাচক্রের সঠিক পূর্ণাঙ্গ তদন্ত, জুলাই গণঅভ্যুত্থানসহ ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলের সব ঘটনার দ্রুত নিষ্পত্তি এবং ভুক্তভোগীদের দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে বলেন, যারা দোষী ও পরিকল্পনাকারী ছিল তাদের সম্পত্তি জব্দ করে আদালতের মাধ্যমে ভিক্টিমদের ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন