গাজায় ইসরাইলের গণহত্যার সমালোচনা করে এমআইটি শিক্ষার্থীর জ্বালাময়ী ভাষণ

৪ দিন আগে
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় চলমান গণহত্যার জন্য ইসরাইলের কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন শিক্ষার্থী মেঘা ভেমুরি। সেই সঙ্গে ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে এমআইটির সহযোগিতার সম্পর্কের সমালোচনা করেছেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে) এক অনুষ্ঠানে এই বক্তব্য দেন মেঘা ভেমুরি। তবে ইসরাইলের সমালোচনা করে বক্তব্য তাকে শুক্রবার (৩০ মে) স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মেঘা ভেমুরি এমআইটির ২০২৫ ব্যাচের সভাপতি। স্নাতক অনুষ্ঠানের মার্শাল তথা প্রধান হিসেবে ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার কথা ছিল।

 

টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদন মতে , তবে মেঘা ভেমুরির স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি বেশিরভাগ শিক্ষার্থী। শুক্রবারের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় এমআইটি চ্যান্সেলর মেলিসা নোবেলসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন ও স্লোগান দেন। ফলে চ্যান্সেলর তার বক্তৃতা বন্ধ করতে বাধ্য হন।

 

পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টায় চ্যান্সেলর নোবেলস শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘মাফ করবেন, আমি আপনার মত প্রকাশের অধিকারকে সম্মান করি। কিন্তু এটা উপযুক্ত সময় বা স্থান নয়। আজকের দিনটি আমাদের স্নাতক ও তাদের পরিবারের জন্য। দয়া করে তাদের সম্মান করুন এবং আমাকে অনুষ্ঠান চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিন।’

 

আরও পড়ুন: পশ্চিম তীর / হজযাত্রীদের বহনকারী মিনিবাসে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ ধাক্কা দিলো ইসরাইলি সেনাদের গাড়ি!

 

ফিলিস্তিনের গাজায় গত প্রায় ২০ মাস ধরে সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। এতে পুরো উপত্যকা কার্যত ধ্বংস হয়ে গেছে। এখানকার ২০ লক্ষাধিক বাসিন্দা এখন উদ্বাস্তু। ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের মধ্যে তারা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। এর মধ্যে মুহূর্মুহু বোমাবর্ষণ করে চলেছে ইসরাইলি বাহিনী।

 

ইসরাইলের এই নির্বিচারে ফিলিস্তিনি হত্যা বন্ধের দাবিতে গত বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ শুরু হয়। এরপর তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। লন্ডন, প্যারিস ও রোম থেকে সিডনি, টোকিও, বৈরুতসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক দমনপীড়ন ও ধরপাকড় সত্ত্বেও সেই বিক্ষোভ এখনও অব্যাহত রয়েছে।

 

এরই ধারাবাহিকতায় এমআইটির স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানের আগে গত বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে ইসরাইলের গণহত্যার সমালোচনা ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় শিক্ষার্থী মেঘা ভেমুরি। এদিন ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থনের প্রতীক লাল কেফিয়াহও পরেন তিনি।

 

জ্বালাময়ী বক্তব্যে মেঘা গাজায় চলমান ইসরাইলের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের কঠোর সমালোচনা করেন। সেই সঙ্গে ইসরাইলের সঙ্গে এমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্কেরও নিন্দা জানান তিনি। পাশাপাশি সহপাঠীদের ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান।

 

আরও পড়ুন: বিরল সফরে পশ্চিম তীর যাচ্ছেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী, কী বলছে ইসরাইল?

 

মেঘা বলেন, ‘এমআইটি একটি বিদেশি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে গবেষণায় অংশ নিচ্ছে, সেটা হলো ইসরাইলি বাহিনী। এর অর্থ হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের আক্রমণে শুধু আমাদের দেশ নয়, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও জড়িত।’

 

মেঘা আরও বলেন, ‘আমরা দেখছি, ইসরাইল কীভাবে ফিলিস্তিনকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে ফেলতে চাইছে। এটা লজ্জার যে এমআইটি এতে জড়িত।’

 

শিক্ষার্থী আন্দোলনের উল্লেখ করে এমআইটির এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘গত বসন্তে এমআইটির আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও গ্র্যাজুয়েট ছাত্র ইউনিয়ন ভোট দিয়ে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক ছিন্ন করার পক্ষে রায় দেয়েছিল। আপনারা গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ডাক দিয়েছিলেন এবং ক্যাম্পাসে যারা ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।’

 

পরদিন শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার কথা ছিল মেঘার। কিন্তু তার আগেই তাকে ইমেইল পাঠিয়ে সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে নিষেধ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মেলিসা নোবেলস। ইমেইলে চ্যান্সেলর লেখেন, ‘আপনি পরিকল্পিতভাবে ও বারবার স্নাতক অনুষ্ঠান আয়োজকদের বিভ্রান্ত করছেন।’

 

আরও পড়ুন: গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি ‘খুব কাছাকাছি’, যেকোনো সময় ঘোষণা দিতে পারেন ট্রাম্প

 

উপাচার্য মেলিসা আরও লেখেন, ‘আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিই। কিন্তু আপনি মঞ্চে প্রতিবাদ জানিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছেন, যাতে আমাদের নির্ধারিত নিয়ম, সময়, স্থান ও পদ্ধতি লঙ্ঘিত হয়েছে।’ মেঘা ইমেইলের জবাবে বলেন, তার বক্তৃতাটি আসলে একটি প্রতিবাদ ছিল। এ নিয়ে এমআইটির প্রতিক্রিয়াকে ‘অতিরিক্ত প্রচার’ বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।

 

ভারতীয় বংশোদ্ভূত মেঘা ভেমুরির জন্ম ও বেড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আলফারেটা শহরে। তিনি আলফারেটা হাইস্কুল থেকে ২০২১ সালে স্নাতক হন এবং এরপর একই বছর এমআইটিতে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি কম্পিউটার সায়েন্স, নিউরোসায়েন্স ও ভাষাতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেছেন।

 

তিনি স্নাতক ক্লাসের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মেঘা এমআইটির ছাত্রসংগঠন রিটেন রেভল্যুশনের সদস্য, যা বিপ্লবী চিন্তাধারা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত। এর আগে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ইউসিটি নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটে গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন।
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন