গাজার হাসপাতাল ত্যাগ করলো ইসরায়েলি সেনাবাহিনী, আটক করলো স্বাস্থ্যকর্মীদের

৩ সপ্তাহ আগে
শনিবার গাজার উত্তরাঞ্চলে একটি হাসপাতাল এলাকা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এর একদিন আগেই তারা সেখানে অভিযান চালায়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে যে সৈন্যরা কয়েক ডজন পুরুষ চিকিত্সা কর্মীকে এবং কিছু রোগিকেও আটক করেছে। শনিবার দিনে আরও পরের দিকে ফিলিস্তিনি সরকারি বার্তা সংস্থা ডব্লিউএএফএ বলে যে গাজার উত্তরাঞ্চলের বেঈত লাহিয়াতে বহু বাড়ির উপর ইসরায়েলি আক্রমণে অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। তাত্ক্ষণিক ভাবে ইসরায়েলের কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি এবং মৃতের সংখ্যা সম্পর্কে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোন সরকারি সমর্থন পাওয়া যায়নি। শুক্রবার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন যে ইসরায়েলি বাহিনী ওই অঞ্চলে চালু তিনটি হাসপাতালের অন্যতম কামাল আদওয়ান হাসপাতালে হামলা চালায়। স্বাস্থ্য কর্মীরা বলেন যে সেনাবাহিনী ওই হাসপাতালের ৭০ জনের মধ্যে কমপক্ষে ৪৪ জনকে আটক করে। পরে তারা জানায় যে সেনাবাহিনী আটকদের মধ্যে হাসপাতালের পরিচালকসহ ১৪ জনকে মুক্ত করে দেয়। হাসপাতালের এই প্রতিবেদন সম্পর্কে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। শুক্রবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলে “সেখানে সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসী অবকাঠামোর উপস্থিতি” সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতিতে তারা ওই হাসপাতাল এলাকায় অভিযান চালায়। চিকিত্সাকর্মীরা বলছেন যে ইসরায়েলি গুলি ওই স্থাপনা্র জেনারেটার ও অক্সিজেন স্টেশনে আঘাত হানলে নিবীড় সেবা ইউনিটের ভেতরে অন্তত দু জন শিশু মারা যায়। হাসপাতাল খালি করার কিংবা রোগীদের ফেলে চলে যাবার জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আদেশ অমান্য করেন হাসপাতাল কর্মীরা। স্বাস্থ্যকর্মীরা বলেন যে সেনাবাহিনীর অভিযানের আগে রোগী এবং তাদের সঙ্গের লোকসহ অন্তত ৬০০ জন হাসপাতালের ভেতরে ছিলেন। গাজার মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে যে গত তিন সপ্তাহের ইসরায়েলি আক্রমণে গাজার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া, বেঈত হানুন ও বেঈত লাহিয়া শহরগুলিতে অন্তত ৮০০ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল বলছে গাজার উত্তরাঞ্চলে নতুন করে সংগঠিত হামাস যোদ্ধাদের উত্খাত করতে তাদের সৈন্যরা সেখানে ফিরে যায়। শুক্রবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলে যে গাজা ভূখন্ডের উত্তরে লড়াইয়ে তাদের তিনজন সৈন্য নিহত হয়। অত্যন্ত মারাত্মক পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি (আইসিআরসি) গাজার উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতিকে “ অত্যন্ত মারাত্মক” বলে বর্ণনা করে এবং বলে যারা ওই এলাকা ত্যাগ করতে চায় তাদেরকে নিরাপদ পথের নিশ্চয়তা দিতে হবে। শনিবার এক বিবৃতিতে আইসিআরসি বলে, “স্থান ত্যাগ করার চলমান নির্দেশনা এবং জরুরি সরবরাহ চালু করার উপর অব্যাহত বিধিনিষেধ গাজার উত্তরের অবশিষ্ট জনগণকে এক মারাত্মক পরিস্থিতির সম্মুখীন করেছে”। এতে বলা হয় “ হাসপাতালগুলিকে খালি করতে বলা হচ্ছে, যার ফলে যে সব অসামরিক লোকজন রয়ে গেছেন তাদের জন্য চিকিত্সা পরিষেবার সম্ভাব্য শূণ্যতা দেখা দিয়েছে”। হামাসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাসেম নাঈম বলেন গাজার উত্তরাঞ্চলে এবং ইসরায়েলের আক্রমণ ও কামাল আদওয়ান হাসপাতালে অভিযান আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের পরিপন্থি এবং “ পশ্চিমি দেশগুলির সুরক্ষা ছাড়া” এটা করা সম্ভব হতো না। ইসরায়েল নিয়মিত ভাবেই হামাসকে অসামরিক লোক ও হাসপাতাল ও মসজিদের মতো স্থানগুলিকে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার জন্য অভিযুক্ত করে। হামাস এই অভিযোগ অস্বীকার করে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী শনিবার জানায় যে তারা গাজা ভূখন্ডের দক্ষিণাঞ্চলে আল মাসাওয়ী মানবিক অঞ্চলটিকে আরও সম্প্রসারিত করেছে। অন্য এক ঘটনায় এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী বলেছে যে শনিবার ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের তুলকার্ম শহরে ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান চালিয়ে একজন হামাস সদস্যকে হত্যা করেছে। তারা বলছে যে ওই লোকটি শিগগিরই আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করছিল। হামাস বলেছে যে ইসলাম জামিল আওদা নামে সনাক্ত এই ব্যক্তিটি “ তুলকার্ম শিবিরের একটি বাড়িতে দখলদার বাহিনী তাকে আটকে রাখলে” সংঘাতের সময়ে তিনি মারা যান”। গাজায় হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় থেকেই গোটা পশ্চিম তীরে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সশস্ত্র যোদ্ধা,ইটপাটকেল নিক্ষেপকারী তরুণ ও অসামরিক লোকজন সহ শত শত ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে নিহত হয়েছে। গত এক বছরে ফিলিস্তিনের পথের আক্রমণে কয়েক ডজন ইসরায়েলিও নিহত হয়েছে। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের সন্ত্রাসী আক্রমণে জঙ্গিরা প্রায় ১২০০ লোককে হত্যা করে এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। হামাস এখনও প্রায় ১০০ জনকে জিম্মি করে রেখেছে , মনে করা হচ্ছে এদের এক-তৃতয়াংশই মারা গেছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে গাজায় ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণে ৪২,৮৪৭ ‘এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন তবে ইসরায়েল বলছে যে নিহতদের এই সংখ্যার মধ্যে কয়েক হাজার হামাস জঙ্গিও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্যরা হেজবুল্লাহ এবং হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করেছে।  
সম্পূর্ণ পড়ুন