ইউএনআরডব্লিউ যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাজুড়ে সংস্থার ক্লিনিক এবং মেডিকেল পয়েন্টগুলোতে ২ লাখ ৪২ হাজারেরও বেশি শিশুর স্ক্রিনিং করেছে, যার মধ্যে গাজার পাঁচ বছরের কম বয়সি অর্ধেকেরও বেশি শিশু রয়েছে।
ইউএনআরডব্লিউএর যোগাযোগ পরিচালক জুলিয়েট তুমা বলেছেন,
আমাদের স্বাস্থ্য দল নিশ্চিত করছে যে, গাজায় অপুষ্টির হার বাড়ছে, বিশেষ করে চার মাসেরও বেশি সময় আগে মার্চে দ্বিতীয়বার অবরোধ কঠোর করার পর থেকে।
ত্রাণ সহায়তা সংস্থাগুলো বারবার সতর্ক করছে, গাজার কিছু অংশে, বিশেষ করে উত্তরে, যেখানে প্রবেশাধিকার সীমিত, সেখানে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ আর অবরোধের কারণে প্রতিদিনই শিশুমৃত্যু ঘটছে।
ইসরাইল মানবিক সহায়তা আটকে দেয়ায় ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছে গাজার হাজার হাজার শিশু। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, গাজায় জুন মাসেই পাঁচ হাজার আটশ’র বেশি শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে। যার মধ্যে হাজারেরও বেশি শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আরও পড়ুন: নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে জারি করা পরোয়ানা বাতিলের আবেদন খারিজ আইসিসির
গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে মানবেতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। শিশুর কান্না আর মায়েদের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠছে পুরো হাসপাতাল। অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের রোজই ভর্তি করতে হচ্ছে হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ইউনিটে। ইউনিটটি যেন মৃত্যুপথযাত্রী শিশুদের শেষ ঠিকানা। চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে প্রতিনিয়ত বাড়ছে অপুষ্টি আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা।
প্রতিদিন জরুরি বিভাগে অন্তত ৬ থেকে ১০টি অপুষ্টি রোগী ভর্তি করতে হয়। শুধু গত দুই মাসেই ৩০টি শিশুর অপুষ্টির কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। পাঁচ মাস বয়সী জয়নাবও এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কেনা দুধের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় বেশিরভাগ সময় খাবারই জুটছে না এই নবজাতকের কপালে। এ অবস্থায় অসহায় হয়ে পড়েছেন শিশুর মা।
সেই অসহায়ত্ব ফুটে উঠছে তার কণ্ঠে। আদ্র কণ্ঠে তিনি বলছিলেন,
বাচ্চার জন্য কোনো দুধই ঠিকঠাক কাজ করছে না। এক ব্র্যান্ডের দুধ শেষ হলে, পরেরটা পাই কোথায়? সীমান্ত বন্ধ, গোটা পৃথিবী যেন আমাদের মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: গাজার ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে আরও ২১ জনের মৃত্যু
প্রতিকূল পরিবেশ আর খাদ্যাভাব, সব মিলিয়ে মানবিক বিপর্যয় তীব্র হচ্ছে অঞ্চলটিতে। জাতিসংঘ, ইউএনআরডব্লিউএ আর ইউনিসেফ এক বাক্যে বলছে, গাজার এই পরিস্থিতি শুধু মানবিক বিপর্যয় নয়, বরং এক অস্তিত্ব সংকট।
জয়নাবের মায়ের হাহাকার, ‘ এই যুদ্ধ এই দুর্ভোগ, আর কতদিন? তাঁবু নেই, স্যানিটেশন নেই, নেই পানযোগ্য পানি। শিশুদের আমরা চুলায় ফুটানো ধুলোমাখা পানিতে দুধ মিশিয়ে খাওয়াই। এমন পরিস্থিতি কেউ কতদিন সহ্য করতে পারে?