গাজায় গত প্রায় দুই বছর ধরে ইসরাইলি আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে। এতে গাজা উপত্যকা কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কয়েক লাখ মানুষ হতাহত হয়েছেন। উদ্বাস্তু হয়েছে ২০ লাখ। অবরোধের কারণে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যেই গাজা দখলে অভিযান জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে গাজা যুদ্ধ বন্ধে বিক্ষোভ করছে ইসরাইলিরা। এবার গাজা যুদ্ধের অবসান চাইছে ইসরাইলি সেনারাও। ইসরাইলের আগাম ইনস্টিটিউটের চালানো জরিপের বরাতে দেশটির হিব্রু ভাষার সংবাদমাধ্যম ওয়াল্লা নিউজ জানিয়েছে, ৭৩ শতাংশ ইসরাইলি সেনা যুদ্ধ শেষ করার পাশাপাশি বন্দি বিনিময় নিশ্চিত করে হামাসের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে।
জরিপে আরও দেখা গেছে, ৪০ শতাংশ ইসরাইলি সেনার মধ্যে গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রেরণা হ্রাস পেয়েছে। অধিকন্তু ৬৪ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, যুদ্ধটি রাজনৈতিক কারণে পরিচালিত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: গাজা যুদ্ধ ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে ‘চূড়ান্ত সমাপ্তি’তে পৌঁছাবে, দাবি ট্রাম্পের
সাধারণ ইসরাইলি জনগণের মধ্যেও এই অনুভূতি প্রতিধ্বনিত হয়েছে। জরিপ মতে, দুই-তৃতীয়াংশ ইসরাইলি নাগরিক এই যুদ্ধকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করেন। প্রায় ৭৩.৭৯ শতাংশ উত্তরদাতা সংঘাতের অবসান এবং বন্দি বিনিময়ের আলোচনার পক্ষে।
জরিপের সবচেয়ে মজার দিকটি হলো, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দল লিকুদ পার্টির বেশিরভাগ ভোটারই গাজা যুদ্ধ অবসানের পক্ষে মত দিয়েছেন। জরিপের ফল বলছে, ৫৪ শতাংশ উত্তরদাতা একটি বৃহত্তর বন্দি বিনিময় চুক্তির অংশ হিসেবে যুদ্ধ শেষ করার পক্ষে।
গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে ইসরায়েলে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরাইলের চলমান গণহত্যার যুদ্ধের কারণে গাজা উপত্যকার মানবিক পরিস্থিতি এই মুহূর্তে সবচেয়ে সংকটময় পর্যায়ে পৌঁছেছে। যা ক্রমেই খারাপ থেকে খারাপের দিকে যাচ্ছে।
২০২৫ সালের মার্চ থেকে গাজার সীমান্তগুলোতে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের আরোপিত সর্বাত্মক অবরোধের ফলে উপত্যকায় খাদ্য ও ওষুধের প্রবেশ কার্যত বন্ধ রয়েছে। যার ফলে সেখানে চলতি সপ্তাহে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ। অনাহারে এরই মধ্যে কয়েকশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে গাজায় চলমান সামরিক অভিযান অবিলম্বে বন্ধ ও হামাসের হাতে আটক থাকা বাকি জিম্মিদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার দাবিতে ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন বিক্ষোভকারীরা। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সকাল থেকে এই বিক্ষোভ শুরু হয় বলে জানা গেছে।
দেশজুড়ে এই বিক্ষোভের আয়োজন করেছে ‘হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরাম' নামক একটি গ্রুপ, যারা অনেকদিন ধরেই জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টিতে সরকারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলে আসছে। তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যাতে তিনি যুদ্ধবিরতি চুক্তি চূড়ান্ত করতে সহায়তা করেন এবং হামাসের হাতে আটক থাকা জিম্মিদেরকে মুক্ত করতে ভূমিকা রাখেন।
আরও পড়ুন: গাজার হাসপাতালে ইসরাইলের হামলা, রয়টার্সের সাংবাদিকসহ নিহত ১৫
এদিকে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে বলা হয়েছে, ইসরাইলের প্রধান প্রধান সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চলায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। দেশজুড়ে মহাসড়কগুলোতে এখন গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে।
বিক্ষোভের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। রাজধানী তেল আবিবের উত্তরে ইয়াকুম জংশনের কাছে কোস্টাল হাইওয়ে বা রুট টু-তে বিক্ষোভকারীরা সড়কের মাঝখানে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন। ফলেওই মহাসড়ক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
হামাসের হাতে জিম্মি মাতান জাঙ্গাউকারের মা আইনাভ জাঙ্গাউকার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, ‘৬৯০ দিন ধরে সরকার কোনো সুস্পষ্ট লক্ষ্য ছাড়াই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।’
তার কথায়, ‘আজ এটা পরিষ্কার যে নেতানিয়াহু একটি জিনিসকেই ভয় পান। আর তা হলে জনগণের চাপ। আমরা এই যুদ্ধ আরও এক বছর আগেই শেষ করতে পারতাম এবং সব জিম্মি ও সেনাদেরকে ফিরিতে আনতে পারতাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে বারবার বেসামরিক মানুষদের বলি দেয়ার পথ বেছে নিয়েছেন।’
]]>