গাজা জুড়ে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত

২ দিন আগে
ফিলিস্তিনি চিকিৎসা কর্মকর্তারা বলছেন, গাজা ভুখন্ড জুড়ে রাত থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় রবিবার পর্যন্ত পাঁচ শিশুসহ অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ পবিত্র ভূমিতে ক্যাথলিক চার্চের প্রধান কার্ডিনাল পিয়েরবাতিস্তা পিতসাবাল্লাকে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। তিনি গাজায় প্রবেশ করেন এবং সেখানে গাজার ক্ষুদ্র খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সাথে ক্রিসমাসের আগে প্রার্থনা সভা করেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন গাজা শহরের এমন একটি স্কুলে হামলায় তিনজন শিশুসহ অন্তত আটজন নিহত হয়েছে। হামাস পরিচালিত সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানকারী সিভিল ডিফেন্স এর আগে বলেছিল নিহতদের মধ্যে চারজন শিশু রয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, তারা সেখানে আশ্রয় নেওয়া হামাস জঙ্গীদের উপর সুনির্দিষ্ট হামলা চালিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে। আল-আকসা মার্টারস হাসপাতাল জানায়, শনিবার রাতে কেন্দ্রীয় শহর দেইর আল-বালাহর একটি বাড়িতে হামলায় তিনজন নারী ও দুইজন শিশু সহ কমপক্ষে আটজন নিহত হয়েছে। হাসপাতালটিতে নিহতদের মরদেহ আনা হয়। নিকটবর্তী নাসের হাসপাতালের মতে, খান ইউনিসের দক্ষিণাঞ্চলের একটি শহরে ঠিক মধ্যরাতের পর একটি হামলায় একজন ব্যক্তি ও তার স্ত্রী নিহত হয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, গাজা শহরের একটি গাড়িতে হামলায় দুইজন নিহত হয়েছে। এই হামলার বিষয়ে সামরিক বাহিনী থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ১৪ মাসেরও আগে শুরু হওয়া হামাসের সাথে যুদ্ধে ইসরায়েল গাজায় প্রতিদিন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা দাবি করে আসছে তারা শুধুমাত্র জঙ্গিদের লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালাচ্ছে এবং হামাস বেসামরিক মানুষের মধ্যে লুকিয়ে আছে। কিন্তু, বোমা হামলায় প্রায়ই নারী ও শিশুরা নিহত হয়। ইসরায়েল এবং হামাস সম্প্রতি একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। এতে ইসরায়েলি জিম্মি এবং ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কিন্তু, এখনও বেশ কয়েকটি বাধা রয়ে গিয়েছে, এবং দীর্ঘদিন ধরে চলা পরোক্ষ আলোচনা বারবার স্থবির হয়ে পড়েছে। ভ্যাটিকান দূত গাজার খ্রিস্টানদের সাথে প্রার্থনা করলেন গাজা শহরের হলি ফ্যামিলি চার্চে পিতসাবাল্লা এবং অন্যান্য ধর্মীয় নেতার প্রার্থনার সময় কয়েক ডজন উপাসক জড়ো হল। একটি ক্রিসমাস ট্রি সোনালী অলংকার এবং ঝলমলে সাদা বাতি দিয়ে সাজানো ছিল, এবং লাল ও সাদা পোশাক পরিহিত আল্টার বয়দের হাতে ছিল মোমবাতি। পবিত্র উপাসনা চলার পুরো সময় ধরে ইসরায়েলি ড্রোনের চক্কর দেওয়ার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। যুদ্ধের এই সময়ে গাজার আকাশে এই শব্দ এখন প্রায় সর্বত্র শোনা যায়। সম্প্রতি পোপ গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড গণহত্যা কিনা তা নির্ধারণের জন্য তদন্তের আহ্বান জানান। পরে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একটি উপসংহারে পৌঁছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত দক্ষিণ আফ্রিকা কর্তৃক ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আনা গণহত্যার অভিযোগ তদন্ত করছে। ইসরাইল দৃঢ়ভাবে এই ধরনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে। নাৎসি হলোকাস্টের পর ইসরায়েল ইহুদিদের জন্য একটি আশ্রয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। তারা বলে, তারা বেসামরিক মানুষদের রক্ষা করার জন্য চেষ্টা এবং শুধুমাত্র হামাসের সাথে যুদ্ধ করছে। ইসরায়েল হামাসকে যুদ্ধের সূচনা করা হামলাটিতে জাতিগত সহিংসতার জন্য অভিযুক্ত করে। শীতের মধ্যেও যুদ্ধ অব্যাহত হামাসের নেতৃত্বাধীন জঙ্গিরা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশ করে আকস্মিকভাবে হামলা করে ১২০০ জনকে হত্যা করে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে। প্রায় ১০০জন জিম্মি এখনও গাজায় রয়েছে, যাদের অন্তত এক তৃতীয়াংশ মারা গিয়েছে বলে ধারণা করা হয়। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলের পরবর্তী বোমাবর্ষণ এবং স্থল আক্রমণে গাজায় ৪৫,০০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু। মন্ত্রণালয়টি তাদের পরিসংখ্যানে যোদ্ধা এবং বেসামরিক নাগরিকের মধ্যে পার্থক্য করে না। এই আক্রমণ ব্যাপক ধ্বংস সাধন করেছে এবং গাজার ২৩ লক্ষ জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে, অনেক সময় একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ এই শীতের শুরুতে ভেজা আবহাওয়ায় উপকূলের ধারে জীর্ণ তাঁবুতে আশ্রয় নিয়ে আছে। ইসরায়েল অক্টোবরের শুরু থেকে গাজার উত্তরাঞ্চলে একটি বড় সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। গাজার সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন এবং ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এই অংশে তারা হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। সামরিক বাহিনী জায়গাটি সম্পূর্ণ খালি করে দেয়ার নির্দেশ দেওয়ায় এবং প্রায় কোনও মানবিক সাহায্য প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ায় কয়েক হাজার মানুষ পালিয়ে গিয়েছে।
সম্পূর্ণ পড়ুন